ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পহেলা জিলহজ। জিলহজ মাসের চাঁদ, আরবি সমাপনী মাসের চাঁদ। এ মাসের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য ও তাৎপর্য। প্রতিটি নয়া চাঁদই ইসলামের ইতিহাস- ঐতিহ্যকে বারেবারে সামনে এনে দেয়, স্মরণ করিয়ে দেয় বীরত্ব, সাহসিকতা আর মর্যাদার কথা। আগেরকার যুগে প্রায় ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানমালা সম্পন্ন হতো চাঁদের তারিখের ওপর নির্ভর করে, ইতিহাস রচনা হতো চাঁদের তারিখ নিয়ে। মহাগ্রন্থ কোরানুল কারীমে এসেছে: ইয়াস আলু নাকা আনিল আহিল্লাহ- অর্থাৎ ওহে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ! তারা আপনাকে নয়া চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে (জানতে চাইছে এর দর্শন ও প্রয়োজনীয়তা)। আপনি বলুন, (কুল) হিয়া মাওয়াকীতুল লিন্না- সি ওয়াল হাজ: এ (নয়া চাঁদ) মানুষের জন্য সময় নির্ধারণী (ক্যালেন্ডার), বিশেষ করে হজের।’ এ আয়াতে বিশেষভাবে হজের কথা উল্লেখ রয়েছে। জিলহজ মাসের চাঁদ নিয়ে এসেছে হজের পয়গাম। দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্ত থেকে আল্লাহ পাকের দিদারে মজনু তাওহীদবাদী মুসলমানরা এখন ছুটে চলছে কা’বা পানে পবিত্র হজ ও ওমরা পালনের মানসে ‘লাব্বাইক’ (হাজির হে প্রভু) ধ্বনি দিয়ে। আল কোরানে কয়েকটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত মাস বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মাসগুলোতে সে যুগে হজের আয়োজন ও অনুষ্ঠান সম্পন্ন হতো। মাসগুলো হলো জিলক্বদ, জিলহজ , মোহররম ও রজব। আমাদের উচিত হবে হজ ও কোরবানিসহ নানা আমলে সালিহ- এর মাধ্যমে যথা সম্ভব এ মাসের মর্যাদা রক্ষা করা এবং এর ফজিলত অর্জনের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করা। আমলে সালেহ বা সৎকর্ম বলতে এখানে আমরা নফল নামাজ আদায়, নফল রোজা রাখা, জিকির আসকার, তিলাওয়াত তাসবিহ ও দান সদ্্কাকে বোঝাচ্ছি। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরান মাজিদের ৩০তম পারায় সূরা আল ফজরের প্রারম্ভে শপথ করে বলেছেন: শপথ ফজর বেলার, শপথ দশটি রাতের, শপথ জোড় (দিন-রাত) এর...। ’ বিশ্ববিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ জালালাইন শরীফে (উপরোক্ত) দশটি রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতকেই উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ পাকের গুরুত্বপূর্ণ শপথ বাক্য থেকে জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের মহাফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। হুজুরে আকরাম (স.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে মহান সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন: জিলহজের এই দশদিনের তুলনায় আর কোন দিনের নেক আমালই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম তখন জানতে চাইলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ (স.) এমনকি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি এই দশদিনের সমান নয়? হুজুর (স.) বললেন: ‘না’। (এমনকি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়)। তবে একমাত্র ওই ব্যক্তি যে নিজের প্রাণ ও সমূদয় সম্পদ নিয়ে জিহাদে বের হলো অতপর সে আর কিছু নিয়েই ফিরে আসতে পারেনি। (বুখারী, মিশকাত)। উল্লেখ্য, ইসলামে জিহাদ বলতে স্বদেশী নিরীহ সাধারণ মানুষকে ইসলামের নামে হত্যা করা নয়। জিহাদ একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিভাষা। এটি কোন যুগে সর্বোচ্চ ধর্মীয় আলিমদের সম্মিলিত ঘোষণার মাধ্যমে একতাবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে এবং পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে। জিহাদ হয়ে থাকে দেশকে বাঁচানোর জন্য, জাতিকে বাঁচানোর জন্য সাধারণ মানুষের পক্ষে ও স্বার্থে। আজকের সমাজে জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ কেন জানি একাকার হয়ে গেছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা ইবনে আবু রাবাহ বলেন, আমি হযরত আয়েশার (রা.) নিকট শুনেছি, হুজুরে পাক (স.)-এর যামানায় এক ব্যক্তি গান-বাজনার প্রতি খুবই আসক্ত ছিল। কিন্তু সে জিলহজ মাসের প্রত্যেক দিন রোজা রাখত। এই কথা কোন এক ব্যক্তি হুজুরে পাক (স.)-এর কর্ণগোচর করলে তিনি সেই ব্যক্তিকে ডেকে আনলেন। সে ব্যক্তি হাজির হলে রাসূলে কারীম (স.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জন্য রোজা রাখ? লোকটি জবাব দিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (স.)! এটা হজের মাস। হজকারীদের দোয়া ও পুণ্যে আমিও যেন অংশীদার হই Ñএ আশায়ই আমি রোজা রাখি। রাসূল (স.) বললেন, প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ওই দিনের সংখ্যা (আবজাদ) অনুযায়ী সওয়াব হাসিল করবে। তাছাড়া জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর জন্য এক শত ঘোড়া প্রস্তুত করার পুণ্যও অর্জিত হবে। তালবিয়াহর দিন রোযা রাখলে দুই গোলাম আজাদ, দুই হাজার উট কোরবানি এবং জিহাদের জন্য এক হাজার ঘোড়া প্রস্তুত করার পুণ্য লাভ হয়। এছাড়া এক বছর পূর্বের এবং এক বছর পরের রোজা রাখার নেকিও হাসিল হয়ে থাকে।’ আল্লাহ আমাদের পবিত্র জিলহজ মাসের আমলসমূহ যথাযথভাবে আঞ্জাম দেয়ার তাওফিক দান করুন।
×