ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী মুনাফার ২০ শতাংশ টাকা সিএসআর কাজে ব্যয়ে কর রেয়াতের বিধান রয়েছে

সিএসআরের অর্থ ব্যবহারে নীতিমালা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সিএসআরের অর্থ ব্যবহারে নীতিমালা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর অব্যাহতি সুবিধা নিলেও ওই অর্থ সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হচ্ছে না। ওই অর্থ ব্যয় হচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে। ফলে সরকার যে উদ্দেশ্যে সিএসআরের অর্থ কর অব্যাহতি সুযোগ দিচ্ছেন, তা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তাই সিএসআরের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্যই একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজে উদ্যোগী হয়ে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই নীতিমালা প্রণয়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন। শীঘ্রই এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী মুনাফার ২০ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ ১২ কোটি টাকা সিএসআর কাজে ব্যয় করলে কর রেয়াত দেয়ার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠান সিএসআর কাজে মুনাফার ১ কোটি টাকা ব্যয় করলে (কর্পোরেট কর ৪৫ শতাংশ হিসেবে) সাড়ে ৪ লাখ টাকা কর রেয়াত পাবে। বর্তমানে ২৩টি খাতে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করলে এ কর রেয়াত বা অব্যাহতি পাওয়া যায়। অর্থমন্ত্রীর মতে, সিএসআর অর্থ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অর্থে ধুমধামে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ, খাওয়া-দাওয়ায় ব্যয় হচ্ছে। এ কারণে একটি নীতিমালা তৈরিতে সহায়তার জন্য পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (পিআরআই), ইকনোমিক রিসার্স গ্রুপ (ইআরজি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ (বিআইডিএস), এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি), ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংককে (বিএবি) চিঠি দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এখন এসব সুপারিশের আলোকে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। জানা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সিএসআরের সুযোগ নিয়ে কর রেয়াত নিয়ে থাকে। দেখা গেছে যার প্রয়োজন নেই, চিকিৎসার নামে তাকেও সিএসআর থেকে অর্থ দেয়া হয়েছে। অথচ যার প্রয়োজন তাকে দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর সিএসআর কিছু দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিএসআরের একটি নীতিমালা থাকা জরুরী। না হলে এ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। অর্থমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, একটি নীতিমালা হলে সিএসআরের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা সম্ভব হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ বিষয়ে আইন রয়েছে। সেখানে মুনাফার ২ শতাংশ অর্থ সিএসআর খাতে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। সিএসআরের নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বর্তমানে সিএসআরের অর্থ বিক্ষিপ্তভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআরকে জাকাতের মতো দেখছে। নীতিমালা তৈরি করে সিএসআরের উদ্দেশ্য ঠিক করা জরুরী। একইসঙ্গে সামাজিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে নীতিমালা অনুযায়ী কর্পোরেট সংস্থাগুলো সিএসআরের অর্থ সমাজের উন্নয়নে ব্যয় করে। পাশাপাশি কর্পোরেট পলিসিতেও সিএসআরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের অর্থ ব্যয়ের জন্য একটি নির্দেশনামূলক নীতিমালা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তার সিএসআর কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ অর্থের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে এবং ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় করতে হবে। বাকি অর্থ তাৎক্ষণিক দুর্যোগ মোকাবেলা, পরিবেশবান্ধব টেকসই জীবনশৈলী গ্রহণ, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, খেলাধুলা ও সুবিধাবঞ্চিতদের বিনোদন, অগ্নিনির্বাপনী সংস্থার মতো জীবন রক্ষাকারী সংস্থার প্রযুক্তির উন্নয়নসহ নির্দিষ্ট কিছু খাতে ব্যয় করা যাবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত সিএসআর নীতিমালা অনুযায়ী বার্ষিক সিএসআর কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রধান কার্যালয়ে গঠিত আলাদা সিএসআর ইউনিটের মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মসূচী দীর্ঘমেয়াদী হলে প্রয়োজনে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করা যাবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও এ ইউনিট বা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নজরদারি করবে। বার্ষিক সিএসআরের অর্থ বরাদ্দের জন্য সিএসআর ইউনিট বা ফাউন্ডেশন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে প্রস্তাব পাঠানোর বিধান রাখা হয়েছে।
×