ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি ব্যবস্থার পুরো প্রক্রিয়াই আসবে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায়

কৃষকদের ডাটাবেজ হবে, কৃষি কর্মকর্তারা পাবেন ট্যাব

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কৃষকদের ডাটাবেজ হবে, কৃষি কর্মকর্তারা পাবেন ট্যাব

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ‘ঘরে বসেই কৃষি সংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্য বা সেবা পাবেন কৃষকÑ যেতে হবে না কৃষি অফিস বা অন্য কোথাও।’ এমন ভাবনাকে সামনে রেখে কৃষকরা যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের ট্যাব সরবরাহ করবে সরকার। কর্মকর্তারা ওই ট্যাব ব্যবহার করে নানা ধরনের সেবা প্রদান করবেন কৃষকদের। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে তৈরি করা হবে কৃষকদের তথ্যসংবলিত পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ। প্রথম ধাপে এক কোটি ৪৪ লাখ কৃষকের ডাটাবেজ তৈরির লক্ষ্য নির্ধারিত হলেও সরকারের লক্ষ্য আড়াই কোটি কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা। এজন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, যা পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই শেষে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। ‘ই-কৃষির মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ সেবা জোরদারকরণ ও ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের ট্যাব সরবরাহ করা হবে। কৃষি ব্যবস্থাপনাকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনতে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি শীঘ্রই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান। এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান মোঃ মনজুরুল আনোয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, কৃষি ব্যবস্থাপনাকে প্রযুক্তির আওতায় আনতে বর্তমানে প্রকল্পটির যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে শীঘ্রই তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। প্রকল্পের আওতায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (এসএএও) ট্যাব দেয়া হবে। ওই ট্যাব ব্যবহার করে কর্মকর্তারা কৃষকদের নানা ধরনের সেবা প্রদান করবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এর সুফল পাবেন কৃষক। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৪৪ লাখ কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। তবে সরকারের লক্ষ্য আড়াই কোটি কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা। এক প্রশ্নের জবাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান জনকণ্ঠকে বলেন, কৃষকদের সেবা দেয়ার জন্য প্রথম ধাপে এসএএও কর্মকর্তারা ট্যাব পাবেন। তারা কৃষকদের প্রযুক্তিবান্ধব বিভিন্ন সেবা প্রদান করবেন। কৃষকদের বিভিন্ন গ্রুপে এ সেবা দেয়া হবে। ভবিষ্যতে কৃষকদেরও ট্যাব দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় যেসব কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি হবে তাদের প্রত্যেককে একটি কার্ড দেয়া হবে। এ কার্ডে কৃষকদের সব তথ্য থাকবে। ফলে তা ব্যাংকঋণ প্রাপ্তিতেও কৃষককে সহায়তা করবে, দরকার হবে না আলাদা ভেরিফিকেশন। এছাড়া উন্নয়ন সহযোগীরা জানতে পারবেন কৃষকের কী অবস্থা, কোন্ কৃষকের কী উন্নয়ন দরকার। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের যে ট্যাব দেয়া হবে ওই ট্যাবের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি সংক্রান্ত নানা ধরনের সেবা পাবেন ঘরে বসেই। কোন্ ফসল উৎপাদন করতে হবে, উৎপাদন সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত তথ্যও পাওয়া যাবে ট্যাবের মাধ্যমে। ফসলের রোগবালাই ও এর প্রতিকারের বিষয়ে তথ্য ছাড়াও আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যও জেনে যাবেন কৃষক। জানা গেছে, ট্যাবে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো ইনস্টল করা থাকবে। এছাড়া এ বিষয়ে নতুন এ্যাপসও তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ উপকৃত হবেন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পটি প্রণয়ন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ইতোমধ্যে ভারতে ই-কৃষি সম্প্রসারণ সেবা চালু রয়েছে। বাংলাদেশেও সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ই-কৃষি নিয়ে কাজ চলছে পুরোদমে। তবে কাজগুলো আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ই-কৃষি নিয়ে সবগুলো কাজের সমন্বয় চায় সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষকদের এ সেবা দিতে পারবে কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে (এসও) আড়াই হাজার কৃষি পরিবারকে সহায়তা দিতে হয়। এটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়া কৃষি সংশ্লিষ্ট আপডেটেড ইনফর্মেশনগুলো সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য কৃষকের কাছে যাচ্ছে না। এখন কৃষক শুধু খাওয়ার জন্যই পণ্য উৎপাদন করে না, তার অনেক বাজার সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যাগুলো থাকবে না। তিনি আরও জানান, যে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন তাদের ট্র্যাকিং করা দরকার। একজন কৃষক কোথা থেকে কথা বলছেন সে তথ্যও দরকার। তবে সঠিকভাবে তথ্য দেয়া যাবে।
×