ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রেনের টিকেটের জন্য উপচেপড়া ভিড়, হয়নি কালোবাজারি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩১ আগস্ট ২০১৬

ট্রেনের টিকেটের জন্য উপচেপড়া ভিড়, হয়নি কালোবাজারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাতজাগা মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা কমলাপুর রেল স্টেশনজুড়ে। ভোর থেকে বাড়তে থাকে লাইনের সারি। একপর্যায়ে প্লাটফরম ছাড়িয়ে লাইন আসে রাস্তা পর্যন্ত। ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছিল হাজারো মানুষের ভিড়ে সরগরম। বেশিরভাগ মানুষ টিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে অনেকে এসি টিকেট বা কেবিন না পেয়ে চলে গেছেন। এবার টিকেট কালোবাজারির কোন অভিযোগ নেই। সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও সন্তুষ্ট টিকেটপ্রত্যাশীরা। টিকেট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন, কেউ টিকেট না পেয়ে বাড়ি ফিরবে না। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বরের টিকেটের চাহিদা বেশি হবে। অর্থাৎ আজ থেকে কমলাপুর স্টেশনজুড়ে নামবে টিকেটপ্রত্যাশী মানুষের ঢল। ১৯ নম্বর কাউন্টার। যেখান থেকে দেয়া হচ্ছিল নারী ও প্রতিবন্ধীদের টিকেট। সকাল আটটায় একটি মাত্র কাউন্টারে ছিল অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষের সারি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সবাই। তাদের দাবি নারীদের জন্য আরেকটি কাউন্টার বরাদ্দ দিলে দুর্ভোগ কমবে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, অগ্রিম আর চলতি মিলিয়ে ২৩টি কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি চলছে। নারীরা ইচ্ছে করলে অন্য যে কোন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের টিকেট নিতে কেউ কেউ সোমবার সন্ধ্যা থেকেও অপেক্ষায় ছিলেন। কেউ কেউ লাইনে এসে যোগ দেন মধ্যরাতে। সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, কাউন্টারের সামনে থেকে লাইন হল ছাড়িয়ে চলে গেছে সামনের রাস্তায়। দীর্ঘ এই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখে মুখে ছিল উৎকণ্ঠার ছাপ। এবারের ঈদ উপলক্ষে তিন জোড়া বিশেষ ট্রেন চলার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, যশোর, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটসহ বড় স্টেশনগুলো থেকে মঙ্গলবারে একযোগে আট সেপ্টেম্বরের টিকেট বিক্রি শুরু হয়। কমলাপুর রেল স্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৬৯টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। দিনে বিক্রি হবে প্রায় ৪৫ হাজার টিকেট। এর মধ্যে অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে ২২ হাজার ৬৭৬টি। প্রতিবারের মতো এবারও ৬৫ ভাগ টিকেট থাকছে সাধারণ যাত্রীদের জন্য। অগ্রিম টিকেট বিক্রি উপলক্ষে কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকাজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো স্টেশন এলাকা আনা হয়েছে সিসি টিভির আওতায়। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, রেল ও আর্মড পুলিশ থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করতে দেখা গেছে। কমলাপুর রেলওয়ে থানার পক্ষ থেকে প্লাটফরমে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ তথ্য কেন্দ্র। এছাড়াও রেলওয়ে নিরাত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে আরেকটি গ্রাহক সহায়তা কেন্দ্রের বুথ। আছে র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে আরও দুটি পৃথক বুথ। টিকেট কাউন্টারের দু’পাশেসহ প্লাটফরমে টানিয়ে দেয়া হয়েছে অগ্রিম ও চলতি ট্রেনের নাম, সময়সূচী ও ভাড়ার তালিকা। নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি পৃথক বুথ খোলা হয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১২ বা ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদ-উল-আজহা হবে। সে অনুযায়ী টিকেট বিক্রির সময়সূচী ঠিক করা হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ৩০ আগস্ট বিক্রি হয়েছে আট সেপ্টেম্বর যাত্রার টিকেট। একইভাবে আজ ৩১ আগস্ট ৯ সেপ্টেম্বরের, ১ সেপ্টেম্বর ১০ সেপ্টেম্বরের ও ২ সেপ্টেম্বর ১১ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। এবার ঈদে ঢাকা থেকে সারাদেশে ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রীর যাতায়াতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগের বার ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী টেনেছিল রেলওয়ে। এছাড়াও ৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্রি হবে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট। ৫ তারিখ দেয়া হবে ১৪ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকেট। ৬ সেপ্টেম্বর দেয়া হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের, ৭ সেপ্টেম্বর দেয়া হবে ১৬ সেপ্টেম্বরের, ৮ সেপ্টেম্বর দেয়া হবে ১৭ সেপ্টেম্বরের ও ৯ তারিখ দেয়া হবে ১৮ সেপ্টেম্বরের ফিরতি অগ্রিম টিকেট। ১৬ নম্বর কাউন্টার থেকে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকেট কেটে শাহীন জানালেন, ১০ মিনিট অপেক্ষা করে টিকেট পেলাম। এই কাউন্টার থেকে ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, একই গন্তব্যেও চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকেট দেয়া হয়। ১৪ নম্বর কাউন্টার থেকে দিনাজপুরের দ্রুতযান এক্সপ্রেসের টিকেট কেটে মহাখুশির কথার জানালেন মায়াকাননের বাসিন্দা আরাফাম রহমান। তিনি বলেন, নিরাপদে বাড়ি যাওয়া নিশ্চিত হলো। এই কাউন্টার থেকে নীলফামারীর নীলসাগর এক্সপ্রেস ও দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসের টিকেট দেয়া হয়। ১৩ নম্বর কাউন্টার থেকে তারাকান্দি পর্যন্ত অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের টিকেট পেয়ে আজিজুর জানালেন, এসি চেয়ার কাটতে চেয়েছিলাম। টিকেট নেই। তাই শোভন নিতে হয়েছে। তিনি জানান, টিকেট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সোমবার সন্ধ্যায়। বেলা ১০টায় কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এ বছর ঈদের সময় সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকেট আছে। আশা করি সবাই টিকেট নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেন। যাত্রীদের এসি ও বার্থ টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। তারপরও এরকম হলে আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রথম ব্যক্তিও টিকেট পাননি সাংবাদিকরা এমন তথ্য জানালে এড়িয়ে যান রেলমন্ত্রী। ঈদের তিনদিন আগ থেকে আগামী ৯, ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরের সাত দিন আগামী ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন জোড়া করে বিশেষ ট্রেন চলবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী। ঈদকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা রেল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রেল ভবনে একটি কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে, সেখান থেকে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
×