ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেন এ মায়াকান্না

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ আগস্ট ২০১৬

কেন এ মায়াকান্না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নিহত জঙ্গীদের নিয়েও রাজনীতি! যে জঙ্গীগোষ্ঠী পুরো বিশ্বের সামনে দেশ ও জাতিকে অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিতে উন্মত্ত, শক্তহাতে তাদের দমন নিয়েও একটি মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় হতবাক দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ। কেন জঙ্গীদের হত্যা করা হচ্ছে- সাবেক দু’বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এমন প্রশ্ন নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে রীতিমতো তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- জঙ্গীদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড-বুলেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিহত হলে, আরও মানুষ হত্যা হলে, দেশের ভাবমূর্তি নিশ্চিহ্ন হলেই কী সমালোচকরা তৃপ্ত হতেন? নিহত জঙ্গীদের নিয়ে তাদের এত মায়াকান্না কেন? তাদের সঙ্গে জঙ্গীদের যোগাযোগটা কী? দেশবিনাশী এই অশুভ শক্তি দমন অভিযান নিয়ে এমন ঘৃণ্য রাজনীতি জঙ্গীগোষ্ঠীকেই উস্কানি দেয়ার শামিল বলেই দেশের বিবেকবান মানুষও মনে করছেন। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে ৯ জঙ্গী নিহত হওয়ার পর শনিবার নারায়ণগঞ্জে আরেক জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জঙ্গীগোষ্ঠীর মূল মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গী নিহত হয়েছে। পরপর দুটি বৃহৎ জঙ্গীবিরোধী অভিযানে সফলতায় শুধু দেশের মানুষই নয়, বিশ্ব নেতৃত্ব বর্তমান সরকার ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে সাধুবাদ জানিয়েছে। একের পর এক অভিযানে যখন জঙ্গীরা ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে, ঠিক তখনই এ নিয়ে নতুন করে রাজনীতি শুরু হয়েছে। গুলশানের ১৭ বিদেশীসহ ২২ জনকে হত্যাকারী ৫ জঙ্গী নিহত হওয়ার পর যেমন বিতর্কিত প্রশ্ন তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছিল, ঠিক তেমনি সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের অভিযান নিয়েও ফের প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়া। নারায়ণগঞ্জে সফল অভিযানের পর শনিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে নিহত জঙ্গীদের জীবিত ধরা হলো না কেন? জঙ্গীবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে ও তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য তাদের জীবিত ধরা প্রয়োজন ছিল, কেন তাদের হত্যা করা হলো? আমাদের সময় শায়খ আবদুর রহমানকে ধরতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। এরপরও আমরা তাকে ধরেছিলাম এবং বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু এ সরকার কাউকে ধরছে না, তারা হত্যা করছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ প্রশ্ন করেন। এ বিষয়ে শনিবারই তার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গীদের ব্যাপারে একটি মহলের মায়াকান্না নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গীরা মারা গেলে যারা মায়াকান্না দেখায় তাদের সঙ্গে জঙ্গীদের যোগাযোগটা কী? জঙ্গী খতম হয়েছে, দেশ অভিশাপমুক্ত হচ্ছে, বড় আরেকটি ফাঁড়া থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গীরা মারা গেলে অনেকেই বলে তারা বেঁচে থাকলে অনেক তথ্য দিত। এমন তত্ত্ব যেন আবার কেউ না দেয়। জঙ্গীরা মরে গেলে মায়াকান্না কেন? এতেই তাদের যোগসূত্রতা প্রমাণ হয়। এটাই প্রথম নয়, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পরও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একেক সময় একেক কথা বলেছেন। গুলশানে জঙ্গী হামলার পর খালেদা জিয়া প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানালেন। মাত্র দু’দিন পর আরেক অনুষ্ঠানে গুলশানের হত্যাযজ্ঞকে ‘রক্তাক্ত অভ্যুত্থান’ উল্লেখ করে কমান্ডো অভিযান কেন দেরিতে করা হলো সে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। অভিযোগ করেন, সরকার এসব সামাল দিতে ব্যর্থ, জঙ্গীদের জীবিত ধরা হচ্ছে না। তাই সরকারের উচিত হবে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচন দেয়া। তাহলেই এসব ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে! জঙ্গীদের পক্ষ নিয়ে একের পর এক খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের নানা মন্তব্যে নিয়ে অনেকেই তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভের সঙ্গে তারা বলেছেন, গুলশান হত্যাকা-, শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা, কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জের জঙ্গী আস্তানায় অপারেশন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সময়োপযোগী পদক্ষেপই গ্রহণ করেছে এবং সারাবিশ্ব নেতৃত্ব সরকারের প্রশংসা করেছে। গুলশানের হত্যাকা-ের এমন জঙ্গী ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম তবু সরকার সঠিকভাবেই উদ্ধার কাজ করে জঙ্গীদের পরাস্ত করেছে। কিন্তু এসব বিএনপির ভাল লাগে না। তবে কী তারা আরও মানুষ হত্যা হলে, দেশের ভাবমূর্তি নিশ্চিহ্ন হলে তারা তৃপ্ত হতেন? নারায়ণগঞ্জের অভিযানের সময়ও জঙ্গীরা বৃষ্টির মতো গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর। গুলশানের মতো নারায়ণগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা নিহত হলেই কী তাঁরা তৃপ্ত হতেন? শুধু কেন জঙ্গীরাই নিহত হলো- এটাই কী তাদের দুঃখ। অনেকে এমনও বলাবলি করছেন যে, জঙ্গীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবশ্যই বিএনপি-জামায়াত জোটের যোগাযোগ আছে। কারণ ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জঙ্গীর পরিচয় বের হয়ে এসেছে, যাদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করত নতুবা স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিবারের সদস্য, বাকি দুই-একজনকে বিপথে নেয়া হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের বংশধর ও জামায়াত-শিবিরের অপকর্মকে বৈধতা দেয়ার জন্যই। আর এ কারণেই হয়ত বিপথগামী জঙ্গীদের জন্য বিএনপির এত দরদ। আসলে ঐক্যের কথা বলে জঙ্গীদের সঙ্গে তাদের গোপন ও পরোক্ষ সম্পর্ককে আড়াল করতে চাইছে। খালেদা জিয়ার জঙ্গীদের পক্ষ অবলম্বন করে প্রদত্ত মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ শনিবার বলেন, জঙ্গীরা যখন ধরা পড়ছে, অভিযানের সময় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলা করতে গিয়ে যখন জঙ্গীরা মারা যাচ্ছে, তখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ারা বলছেন, জঙ্গীদের নাম করে নাকি সাধারণ মানুষ মারা হচ্ছে! আবার বিএনপি নেত্রী বলছেন, এভাবে হত্যা না করে গ্রেফতার করলে অনেক তথ্য পাওয়া যেত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নিহত জঙ্গীদের নিয়ে বিএনপি নেত্রীর এত মায়াকান্না কেন? নিহত জঙ্গীদের সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? জঙ্গীদের রক্ষার জন্য তারা (বিএনপি) বারংবার সুর পাল্টাচ্ছেন কেন? এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গীদের জীবিত ধরতে বেগম জিয়ার মায়াকান্না দেখেই বোঝা যায় জঙ্গী হামলার নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতই রয়েছে। তিনি বলেন, যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জঙ্গী নির্মূল করা হয় সেই একই পদ্ধতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ারা যতই মায়াকান্না করুক, জঙ্গীদের কঠোরভাবে নির্মূল করে দেশের মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে।
×