ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জরুরী প্রসূতি সেবা নিশ্চিত হয়নি উপজেলা পর্যায়ে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ আগস্ট ২০১৬

জরুরী প্রসূতি সেবা নিশ্চিত হয়নি উপজেলা পর্যায়ে

নিখিল মানখিন ॥ উপজেলা পর্যায়ে জরুরী প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঘোষণা দেয়ার এক বছর অতিবাহিত হলেও দেশের সকল উপজেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় আট ধরনের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি। গত বছর স্বাস্থ্য অধিদফতরে উপ-পরিচালক প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা (পিএইচসি) ডা. পবিত্র কুমার শিকদার এক চিঠিতে দেশের সকল উপজেলা হাসপাতালে জরুরী প্রসূতি সেবার যন্ত্রপাতির চাহিদা রয়েছে কি-না তা জানতে চেয়ে চিঠি দেন। কিন্তু তালিকা হাতে পাওয়ার পরও তা সরবরাহ করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাত মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বেশিরভাগ সরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক জরুরী প্রসূতি সেবা প্রদানের সুযোগ সুবিধা নেই। গর্ভকালীন অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। ফলে গর্ভবতী মায়েরা সরকারী হাসপাতালে যেতে আগ্রহী হন না। আর জরুরী সেবা না পেয়ে অনেক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। জানা গেছে, জরুরী প্রসূতি সেবার জন্য ডায়াথারমি মেশিন, ডেলিভারি টেবিল, ওটি টেবিল, পোর্টেবল ওটি লাইট উইথ চার্জার/সেন্টার স্পট লাইট, লেরিংগোস্কোপ, অটোক্লেব (ইলেকট্রিক) টেবিল টপ স্টিম স্টেবিলাইজার, প্রেসার স্টিম স্টেরিলাইজার (ইলেকট্রিক) ইত্যাদি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। উপজেলা থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক কর্মকর্তা জানান, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জরুরী প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করতে হলে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ও একজন এ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকা আবশ্যক। দেশের প্রায় ৫শ’ উপজেলা হাসপাতালের অধিকাংশের মধ্যে ভাল যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোথাও গাইনি ডান্সার থাকলেও এ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকে না। আবার কোথাও এ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকে না। ফলে অত্যাবশ্যক যন্ত্রপাতি থাকলেও তা ব্যবহৃত হয় না। এদিকে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। ১৯৯০ সালে প্রতি ১ লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৫৭৪ জন মা মারা যেত। সর্বশেষ জাতিসংঘের জরিপে তা বর্তমানে ১৭০ জনে নেমে এসেছে। একই সময়ে ৫ বছরের কম বয়সী প্রতি ১ হাজার জীবিত শিশু মৃত্যুর হার ১৪৪ থেকে হ্রাস পেয়ে ৪১-এ নেমে এসেছে। বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতিহাজার জীবিত শিশুতে মাত্র ২৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, নবজাতকের মৃত্যুহার রোধে নিরাপদ প্রসূতি সেবা অপরিহার্য। তাই উপজেলা হাসপাতালগুলোকে অধিকতর উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে প্রতি ৫ লাখ গর্ভবতী মহিলার প্রাথমিক জরুরী প্রসূতি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সরকারিভাবে মাত্র ১ থেকে ২টি সরকারী হাসপাতাল রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী এই সংখ্যক গর্ভবতী মহিলার জন্য কমপক্ষে ৫টি সরকারী হাসপাতাল প্রয়োজন। এছাড়া দেশের অধিকাংশ সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে গর্ভকালীন ও গর্ভোত্তর জরুরী প্রসূতি সেবা এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ খুবই সীমিত। কিন্তু সরকারী-বেসরকারী অংশদারিত্ব (পিপিপি) ও প্রণোদনা প্রকল্প কর্মসূচীর মাধ্যমে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের গর্ভবতী মায়ের জরুরী প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও অকাল মাতৃমৃত্যুরোধ করা সম্ভব। আইসিডিডিআরবি’র দেশী ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী পরিচালিত জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতি শীর্ষক এক জরিপ ফলাফলে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থায়ন করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনি এ্যান্ড অবস্ট্রেটিকস গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা ফলাফল অনুসারে- দেশের মোট জেলার মাত্র এক- পঞ্চমাংশ জেলায় প্রসূতি সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তবে বেসরকারী পর্যায়ে সমসংখ্যক জনসংখ্যার জন্য ৬টি হাসপাতালে জরুরীসহ প্রসূতি সেবার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। গবেষণাকালে দেখা যায়, দেশে সরকারীভাবে ৫৭৭টি, বেসরকারী ১৬৯৬টি ও ১১৪টি অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। দেশের মোট জনসংখ্যার হিসেবে প্রতি ৫ লাখ গর্ভবতী মহিলার মধ্যে ৯ জনেরও কম সংখ্যকের জন্য মাত্র দুটি সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে ও ছাড়কৃত মূল্য পরিশোধ করে প্রসূতি সেবা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। মাত্র ১টি সরকারী হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারসহ আধুনিক জরুরী প্রসূতি সেবার সুব্যবস্থা রয়েছে।
×