ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এলিজাবেথ ডাওস্কিন (ওয়াশিংটন পোস্ট)

সিলিকন ভ্যালিতে চীনা বিনিয়োগের নেপথ্যে কারা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৭ আগস্ট ২০১৬

সিলিকন ভ্যালিতে চীনা বিনিয়োগের নেপথ্যে কারা

গত দুই বছরে চীন থেকে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে পুঁজি বা মূলধনের নজিরবিহীন প্রবাহ ঘটেছে। এ প্রবাহের পেছনে কাজ করেছে ব্রোকারদের একটা এলিট নেটওয়ার্ক। এদের মধ্যে একজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। তিনি সিলিকন ভ্যালির দীর্ঘদিনের আইনজীবী ও বিনিয়োগকারী কারমেন চ্যাং। উবার কোম্পানি চীনে তাদের ব্যবসাটা সম্প্রতি ডিডি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়ার সময় চ্যাংয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। উবারের ক্ষুদ্রতর প্রতিদ্বন্দ্বী লিফট চীনের বাজারে প্রবেশ করার সময় চ্যাংয়ের মতো সিলিকন ভ্যালির আরেক ব্রোকার কনি চান দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ ঘটানোর ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছিলেন। ভেনচার ক্যাপিটেল ফার্ম এন্ড্রিসেন হোরোভিজের অংশীদার কনি চানের পরিচিতির সূত্র ধরে চীনের বৃহত্তম রাইড-হেইলিং পরিবহন কোম্পানি ওই কাজে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল। এই যে ব্রোকারদের এলিট নেটওয়ার্কের কথা বলা হলো, সেই ব্রোকাররা দুই পক্ষের মধ্যে শুধু যে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয় তাই নয়, আরও অনেক কিছুও করে। তারা নৃতাত্ত্বিকের কাজ করে। কালচারাল ট্রানসেøটারের কাজ করে। চীনের সম্মেলন কক্ষের টেবিলে বসে যারা ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে, তাদের ব্যবসা পেতে বসার মতো সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে উপযুক্ত স্থান কোনটি হবেÑ সেটা যেমন শেখায়, তেমনি শেখায় চীনের এ্যাপগুলোতে ইমোজিস কিভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পোদ্যোক্তারা বলেন যে, এদের সংস্পর্শ লাভের ফলে ব্যবসার ব্যাপারে তাদের বিচক্ষণতা বাড়ছে। চীনের ওয়েব সিকিউরিটি স্টার্টআপ ‘ক্লাউডফ্লেয়ারের প্রধান নির্বাহী ম্যাথু প্রিন্স কারমেন চ্যাং সম্পর্কে বলেন, তিনিই হলেন চীন ও সিলিকন ভ্যালির মধ্যে সেতুবন্ধ। এ কোম্পানি ২০১১ সালে চীনে ব্যবসার ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। গত বছর চ্যাং চীনের সার্চ জায়েন্ট বাইদুর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রিন্সকে সাহায্য করেছিলেন। দুই পক্ষের মধ্যে ব্যবসায়িক বন্ধন গড়ে তুলতে এ ধরনের মানুষের বড়ই প্রয়োজন। অথচ দুই পক্ষকে প্রকৃতই জানে ও বুঝে এমন মানুষের সংখ্যা অতি সামান্য। কারমেন চ্যাংয়ের জন্ম চীনের নানজিংয়ে। আধুনিক চীনা ইতিহাসের ওপর ডক্টরেট করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি সেখানে আইনে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে টেক শিল্পে ঢুক পড়েন। তার প্রথমদিকের ক্লায়েন্টদের মধ্যে ছিল জাপানী বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী মাসায়সি সন, যিনি বৃহৎ জাপানী টেলিযোগাযোগ কোম্পানি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে চ্যাং বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক চুক্তির সঙ্গে যুক্ত হন যার কয়েকটি সিলিকন ভ্যালিতে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণীয়। তিনি গোল্ডম্যান ফ্যাসের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী হ্যাঙ্ক পলসনকে চীনে ব্যবসায় জগতে ঢুকতে সাহায্য করেছিলেন। ২০০৪ সালে গুগল বাইদুর অংশীদারিত্ব লাভ করার সময় তিনি গুগলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো কোম্পানি থ্রি-কম এবং চীনের হুয়াওয়েই ঠেকনোলজিসের মধ্যে যৌথ উদ্যোগের ব্যবস্থা করে দেন। চ্যাং বলেন, চীন ও সিলিকন ভ্যালির মধ্যেকার সম্পর্ক আজ এক ঐতিহাসিক ক্ষোভ পরিবর্তনের অবস্থায় পৌঁছেছে। গত দুই বছরে আলিবাবা, বাইদু ও টেনসেন্ট (কখনও কখনও এদেরকে চীনের গুগল, এ্যামাজন ও ফেসবুক বলে উল্লেখ করা হয়) এবং কয়েক ডজন বেসরকারী বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালিতে নগদ অর্থে সয়লাব করে ফেলেছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি করায়ত্ত করার প্রতিযোগিতায় এরা শত শত কোটি ডলার ব্যয় করছে। এদের উপস্থিতি নবীন কোম্পানিগুলোকে প্রলুব্ধ করে তুলছে। তারা এসব বিশাল বিশাল বিনিয়োগকারীদের মূলধনের শক্তিশালী নতুন উৎসব হিসেবে দেখছে, যা তাদের টিকিয়ে রাখতে এবং চীনে ব্যবসায় করার পথে রাখতে পারে। চীনের টেক সেক্টর ক্রমাগত বিকশিত হয়ে ওঠার ফলে এর প্রধান প্রধান নগরী বাইড শেয়ারিং, মেসেজিং এবং এ্যাপস সার্ভিসে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। আর ততই মার্কিন কোম্পানিগুলোর পক্ষে সেখানে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তার ফলে ব্রোকার ও ইনভেস্টরদের নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। বাইরে থেকে আসা নগদ অর্থে প্রবাহে সাড়া দিয়ে ভেনচার ক্যাপিটেল ফার্মগুলো চীনা ও অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগকারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে এবং এ প্রক্রিয়ায় তাদের তহবিল বাড়িয়ে তুলছে। প্রক্রিয়াটি আগামীতে আরও জোরদার হয়ে উঠবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×