ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্পের সঙ্কট উত্তরণ নিয়ে সেমিনার

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৩ আগস্ট ২০১৬

ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্পের সঙ্কট উত্তরণ নিয়ে সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলার আদি লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম শিল্পমাধ্যম যাত্রাপালা। তবে যথার্থ পৃষ্ঠপোষক এবং অবহেলা-অনাদরে ও কিছু স্বার্থান্ধ মানুষের অপতৎপরতায় ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমটি এখন যেন শুধুই অতীত গৌরব। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যে যাত্রা শক্তি যুগিয়েছিল, সে যাত্রা আজ ধাবিত হয়েছে ক্ষয়িষ্ণুতার পথে। যাত্রাশিল্পের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার এবং করণীয় বিষয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্য সেমিনারকক্ষে বাংলাদেশ যাত্রা ফেডারেশনের উদ্যোগে ‘ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প, বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে যাত্রাশিল্পের উন্নয়নের জন্য বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। সেমিনার উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি প্রফেসর নিরঞ্জন অধিকারী, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, যাত্রাব্যক্তিত্ব জোৎস্না বিশ্বাস, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান ও গোলাম সারোয়ার। সভাপতিত্ব করেন যাত্রা ফেডারেশনের সাম্মানিক সভাপতি তাপস সরকার। ‘ঐহিত্যবাহী যাত্রাপালা, বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে যাত্রা গবেষক ড. তপন বাগচী বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছেÑ আধুনিক ও সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যাত্রা রচনা করতে হবে পালাকারদের, মাসে অন্তত একবার মহিলা সমিতি, গাইড হাউস কিংবা জাতীয় যাত্রানুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, টেলিভিশন ও বেতারে নিয়মিত যাত্রানুষ্ঠান সম্প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে, শিল্পকলা একাডেমির প্রতিটি জেলা শাখায় নিয়মিত যাত্রা মঞ্চায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতার অবসান ঘটাতে হবে, খোলা মাঠে ঝুঁকি থাকলে মিলনায়তনে যাত্রা পরিবেশনের অনুমতি দেয়া, যাত্রার নামে অশ্লীল নাচ এবং হাউজি আয়োজকদের শাস্তি প্রদানে আইন করতে হবে, প্রয়োজনে সারারাতের পরিবর্তে সান্ধ্যকালীন যাত্রা চালু করতে হবে, নতুন পালাকার সৃষ্টি করতে হবে, জেলা পর্যায়ে যাত্রাভিনয় কর্মশালা করতে হবে, সংস্কৃতিসেবীদের ভাতায় সক্রিয় যাত্রাশিল্পীদের অন্তর্ভুক্ত এদেশের মানুষ সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। সোমবার গণভবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্ব^ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার সবার রয়েছে। আপনারা আপনাদের অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সব ধর্মের মানুষের রক্ত এক হয়ে গেছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র থাকবে। নানা কিছু থাকবে। তা ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবেলা করা সম্ভব। শেখ হাসিনা বলেন, সব ধর্মের মধ্যই সহনশীলতা ও শান্তির কথা বলা রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষই ধর্মের নামে অশান্তি সৃষ্টি করছে। অথচ কোন ধর্মেই অশান্তির কথা বলা নেই। ঈদ, পূজা, বড়দিনসহ সব ধর্মের উৎসবেই বাঙালী জাতি অংশ নেয়। কারণ ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীরা কখনও সফল হবে না। এই দেশে সব ধর্মের মানুষই সমান অধিকার নিয়ে থাকবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বব্যাপীই এসব ঘটছে। সারাবিশ্বে এসব অশান্তি চলে আসছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ইমাম ও অপর এক মুসল্লিকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের অনেক বাঙালী হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। দেশের মানুষ এ ব্যাপারে এখন অনেক সজাগ ও সচেতন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহাদেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু, সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিত, সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমেশ ঘোষ, মহানগর সার্বজনিন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার বসবাস করার অধিকার আছে। সবাই অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। এটাই আমরা চাই। সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উন্নয়নের ছোঁয়া তো সব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পাচ্ছে। কেউ তো আর ভাগ করে নিচ্ছে না। তাহলে এ নিয়ে ভেদাভেদ থাকবে কেন? আগামী বৃহস্পতিবার শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনের উৎসব শান্তিপূর্ণ হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান মিলেমিলে বসবাসের ঐতিহ্য আছে এখানে। এটাই বাংলাদেশের শক্তি। এখানে সব ধর্মের মানুষ সব সময় সবার উৎসবে শামিল হয়েছে। এখানে দুর্গাপূজা, ঈদ, মহররম সবাই একসঙ্গে মিলে উৎযাপন করে। ধর্ম যার যার উৎসব সবারÑ এটাই বাংলাদেশের চেতনা। ধর্মের নামে জঙ্গী তৎপরতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসব ঘটনা ঘটায় তাদের কোন মানবতাবোধ নেই। তারা আসলে কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না। তাদের ধর্ম নেই, রাষ্ট্র নেই। জঙ্গীবাদই তাদের কাজ। সব ধর্মে সহনশীলতা, ভাতৃত্ববোধ, শান্তির কথা বলা আছে। কিছুদিন আগে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমরা সবাইকে আহ্বান জানালাম, সবাই এক হলেন। ঐক্য গড়ে উঠলো। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, আপনারা কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। আপনাদের দাবি দাওয়া করতে হবে না। আমরা এমনিতেই সবার কল্যাণে কাজ করি। যখন ইমামদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করেছি, তখন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টানদের জন্যও করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দুদের সম্পত্তি উত্তরাধিকারকে দিয়ে যেতে অনেক কর দিতে হতো। আমরা সেটা থেকে রেহাই দিয়েছি। এখন যে কেউ চাইলে সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন না থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী মারা গেলে স্ত্রী করুণ অবস্থায় পড়ে যায়। সন্তানরাও দুর্দশায় পড়ে। এটা তো হতে পারে না। এর কারণ উত্তরাধিকার আইন নেই। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে বাধা এসেছিল আর আমরা থেমে গিয়েছিলাম। এখন আপনারা যদি চান এই আইন হবে, তবে এই আইনের খসড়া আপনারাই তৈরি করে দেন। আমরা পাস করে দেব। আপনারা নিজেরা তৈরি করলে সেটা সবচেয়ে ভাল হবে।
×