ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গী দমনে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল

ফিরোজ মান্না ॥ জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সরকার ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল’ গঠন করবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় নতুন আইন উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ও সাইবার ইনসিডেন্ট এক্সপার্ট টিম গঠন করা হবে। সব কিছু মিলে সাইবার সিকিউরিটি তৈরি করা হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে ভাঙ্গা হবে জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক। ইতোমধ্যে অনেক নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। কেউ যাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গীবাদে উস্কানি বা জড়াতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিলের বিষয়টি এ সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। মন্ত্রিসভার অনুমতি পাওয়ার পরই ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠনের কাজ শুরু হবে। সূত্র জানিয়েছে, সাইবার অপরাধ দমন ও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে বিটিআরসি, আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও নিবিড় যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার সার্বিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাইবার অপরাধের ওপর নজরদারি জোরদার, সংঘটিত ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করে বিটিআরসি। ওই প্রস্তাবে অপরাধ দমন সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও দফতরের সমন্বয়ে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন দফতর এবং নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিজস্ব অধিক্ষেত্র অনুসারে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করে আসছে। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দেশের পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে বিটিআরসি’র কর্মকর্তাদের সম্প্রতি একাধিক বৈঠক হয়েছে। সাইবার অপরাধ দমনে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধ দমনে আরও উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাক, চিন্তা ও যোগাযোগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সুস্থ ও সাবলীল সামাজিক মাধ্যম গঠনে বিটিআরসি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য সোশ্যাল মিডিয়াসহ সাইবার অপরাধ দমনে বিদ্যমান জনবল ও কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে বিটিআরসি সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গীরা বিদেশী জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে ‘সাইবার ক্রাইম‘ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ এই ক্রাইমের শিকার হয়ে নিজেদের মান সম্মান ধরে রাখতে পারছেন না। এমন কি নিজ ঘরের ছেলেমেয়েদেরও এখান থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট জগতে হাজার হাজার ‘সাইট’ রয়েছে এই সাইটগুলো আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে বা সুন্দর প্রচ্ছদের মাধমে নীরবে, নিভৃতে সাইবার জগতে টেনে নিচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে। শুধু তরুণ প্রজন্ম এই সাইটগুলো ব্যবহার করছে-তাই নয়। এর মূল ব্যবহারকারীরা হচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। একবার যারা ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে শুরু করে তাদের নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে অশ্লীল সাইটের সদস্য করে ফেলে। তখন অনেকেই নিজের ‘এ্যাড্রেস’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ লিখে পর্নো ব্লগের সদস্য হচ্ছে। ‘সাইবার ক্রিমিনালদের’ হাতে বহু তরুণী শিকার হয়ে সমাজে নানাভাবে হেয় হয়েছে। অনেকে আবার আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছে। এ সবের বাইরে এখন নতুন জঙ্গী গোষ্ঠী তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ তরুণীদের জঙ্গী কর্মকা-ের দিকে টানছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা এখন মহামারী আকারে ছড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গীরা। এখান থেকে রক্ষা পেতে হলে সাইবার নিরাপত্তা জরুরী হয়ে পড়েছে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ সম্পর্কে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, আইটি ইউ এর নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কোন ওয়েব পোর্টাল অপব্যবহার হচ্ছে কিনা এমন তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া বিটিআরসির একটি টিম এ ধরনের সাইট বা ব্লগ খুঁজে বের করার জন্য ওয়েব পোর্টালগুলো ‘সার্চ’ করে যাচ্ছে। সন্দেহজনক সাইটগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে জঙ্গীবাদ ব্যাপক হারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠায় সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে জঙ্গীরা এই মাধ্যম ব্যবহার করে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাবে। এতে তরুণ প্রজন্ম আরও বেশি করে বিপথগামী হবে। এখান থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে।
×