ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ একদিন শিক্ষিত মানুষের দেশ হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৯ আগস্ট ২০১৬

বাংলাদেশ একদিন শিক্ষিত মানুষের দেশ হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ একদিন শিক্ষিত মানুষের দেশ হবে। দেশের কোন ছেলেমেয়েই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে না। প্রত্যেক ছেলেমেয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মাদকমুক্ত রাখবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যত। আগামীতে দেশকে তারাই নেতৃত্ব দেবে। এজন্য এখন থেকেই তাদের যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তাই জঙ্গীবাদ নয়, সুস্থ মস্তিষ্কেই বেড়ে উঠবে আগামীর প্রজন্ম। বৃহস্পতিবার গণভবনে চলতি ২০১৬ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সকল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২৩ এপ্রিল শুরু হয়ে ২২ জুন শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫৭ দিনে এ ফল প্রকাশ করল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ফল তুলনামূলক ভাল। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে, ছেলেদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আজকাল মেয়েরা মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে, ছেলেদেরও পড়ালেখায় মনোযোগী হতে হবে। আগামীতে ছেলেমেয়েরা সমানভাবে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে এজন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের আরেকটু যতœবান হওয়ার তাগিদ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর এজন্য সকলের আগে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার। বঙ্গবন্ধু সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর সে উদ্যোগ সফল হতে দেয়নি। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবই তুলব ইনশা আল্লাহ। আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এ বছর ১২ লাখ তিন হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী ৮ হাজার ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রকাশিত ফলে গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ বছর সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী। কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবারের থেকে ১০টি কমে এবার ২৫টি হয়েছে। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ছেলেমেয়েদের থেকে অনেক মেধাবী। বিশ্বের অনেক দেশ ঘোরার ফলে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে নিজস্ব এ অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শুধু তাদের শিক্ষার সুযোগটা করে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশিত ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেদের উন্নতির লক্ষ্যেই মন দিয়ে লেখাপড়া করেছে বলেই তাদের ফল দিন দিন ভাল হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর স্বাধীনতাবিরোধীরা শিক্ষা খাত ও দেশের উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে সম্পদ গড়ার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিল। সে অবস্থার পরিবর্তন করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ড. কুদরাত-ই-খুদাকে প্রধান করে জাতির পিতা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি আন্তর্জাতিক মানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ওই অল্প সময়ের মধ্যে একটি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা তিনি তৈরি করেন। তিনি শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির উন্নতি হতে পারে না, জাতির পিতা সেটা বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে দেখি শিক্ষার অবস্থা খারাপ। তখন আমরা শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ শুরু করি, বাজেট বৃদ্ধি করি। ফলে শিক্ষার মান বাড়ে, সাক্ষরতার হারও বাড়ে। আমরা সাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছিলাম বলে ইউনেস্কো আমাদের পুরস্কার দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে দেশে সাক্ষরতার হার যা আওয়ামী লীগ সরকার রেখে গিয়েছিল সেখান থেকে না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে দেয়। ২০১০ সালে তাঁর সরকার দেশে প্রথম শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষানীতিতে কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা যেন স্কুলে শিক্ষালাভের সুযোগ পায় তার পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে। তিনি এ সময় হাওড় ও পাহাড়ী এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য আবাসিক স্কুল গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ এবং কক্সবাজার জেলার ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক এবং শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় বিভিন্ন দেশের স্কুল পরিদর্শনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাওয়ার। যখন যেখানে গিয়েছি অনেক স্কুল আমি পরিদর্শন করেছি, অনেক স্কুলের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা সব থেকে মেধাবী। প্রয়োজন শুধু সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া। যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের মন খারাপ না করে ভালভাবে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় আবাসিক স্কুল গড়ে তোলা হবে। নৌকায় করে হাওড়ের বড় বড় ঢেউ পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাতায়াত করে। তাদের নিরাপত্তার জন্যই এ ব্যবস্থা হবে। সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকা সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি হাওড় এলাকায় ঘুরেছি। একই ভাবে পাহাড়েও গিয়েছি। আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্গম হাওড় ও পাহাড়ী এলাকার কিছু নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করতে হবে। সেখানে আবাসিক স্কুল গড়ে তোলা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমবে।’ শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকতাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপুর একটায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। দুপুর ২টা থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (. মড়া.নফ), নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও যে কোন মোবাইল থেকে এসএমএস করে ফল জানতে পারে।
×