ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কালো গ্লাস ব্যবহৃত যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি

চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৪ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী তৎপরতা, ঢাকার গুলশান ও শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানের পাশে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে বন্দরে প্রবেশকারী ব্যক্তি ও যানবাহনের পরিচয় নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে দেয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক বন্দরের অভ্যন্তরে কালো গ্লাস ব্যবহৃত যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। বন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে হলে নিজের পরিচয়পত্র বহন করতে হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যদের কাছে পরিচয় প্রকাশ ও প্রয়োজনে বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। সব ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বৈধ পরিচয়পত্র যুক্তিসঙ্গত কারণে দেখাতে না পারলে বন্দরের অস্থায়ী একদিনের পাস ব্যবহার করা যাবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকতে হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যরা যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে সেজন্য ধৈয্যসহকারে, ইতিবাচক এবং সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের লোকজন জড়িত থাকলেও সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই বন্দর জেটিতে সবচেয়ে বেশি যাওয়া-আসা করতে হয়। বন্দরে এবং জেটিতে প্রবেশের জন্য তাদেরও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্দরের উপ-পরিচালক (নিরাপত্তা) মেজর রেজাউল হক এ নির্দেশনা জারি করেন। এতে নিরাপত্তার স্বার্থে জারি করা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। বন্দর সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ১২৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা, ১৬৪টি ফায়ার এ্যালার্ম এবং ৫০টি পাবলিক এ্যাড্রেস যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৫৩টি ক্যামেরা এবং ৩০টি পাবলিক এ্যাড্রেস যন্ত্র এখন বিকল। অন্যদিকে ফায়ার এ্যালার্ম ব্যবস্থা পুরোপুরি অচল। নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে ২০১৩ সাল থেকে বন্দরে বেশকিছু কেবল কাটা পড়ে, যা মেরামত না হওয়ায় ওই ক্যামেরা, এ্যাড্রেস যন্ত্র এবং এ্যালার্ম ব্যবস্থা অচল হয়ে আছে। এতে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এদিকে বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দরের নিরাপত্তা দুর্বলতার অন্যতম কারণ মোবাইল ভেহিক্যাল স্ক্যানার অকার্যকর এবং অব্যবহৃত। বন্দরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান একটি মোবাইল ভেহিক্যাল স্ক্যানার প্রায়ই নষ্ট থাকে। দীর্ঘদিন নষ্ট থাকার পর সম্প্রতি এটি চালু হলেও তেল সরবরাহ অপর্যাপ্ত হওয়ায় এর ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে সন্দেহজনক কন্টেনারগুলো দ্রুত তল্লাশি করা যাচ্ছে না। এতে বন্দর এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এতে আরও বলা হয়েছিল, বর্তমানে বন্দরের ৩০ শতাংশ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। বন্দরে স্থাপিত ১২৮টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে অনেকগুলোই বর্তমানে অকার্যকর। প্রায় ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট অথবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বন্দরের ফায়ার এ্যালার্মটিও ঠিকভাবে কাজ করছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল জানান, বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার প্রধান দায়িত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া জঙ্গী হামলাকে কেন্দ্র করে বন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানো জরুরী। বন্দরে মাত্র ১২৮টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। তবে সবগুলো চালু নেই। সব ক্যামেরা সংস্কার করা হবে। নতুন করে ৮০০’র বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ বন্দর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (এ্যাডমিন এ্যান্ড প্ল্যানিং) জাফর আলম বলেন, বন্দরের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আগামীতে যারা বন্দর জেটিতে প্রবেশ করবেন, তাদের ফিঙ্গার প্রিন্টও নেয়া হবে। প্রত্যেকের তথ্যই সংগ্রহ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরিচয়পত্র রাখার বিষয়ে সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অনুষ্ঠিত সভায় নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে পরিচয়পত্রের জন্য ফি জমা দিয়েছি। কেউ কেউ কার্ড পেলেও অধিকাংশই পায়নি। আশা করছি শীঘ্রই সবাই কার্ড পাবেন। বন্দরে নিরাপত্তা জোরদারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি আমরা। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের একটি অন্যতম কেপিআই ও অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্রস্থল। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন বন্দরের কোস্টাল শিপিং চুক্তি হওয়ায় এ বন্দরের ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। অন্যদিকে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। এ অবস্থায় বন্দর নিরাপত্তায় ১৯৪৮ সালে প্রণীত পরিকল্পনা পরিবর্তন এবং যুগোপযোগী করা দরকার বলে মনে করছেন বন্দর ও কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।
×