ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাসনুভা তাবাসসুম

সন্তান গড়ে ওঠে পারিবারিক শুদ্ধতা আর মমতায়

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১২ আগস্ট ২০১৬

সন্তান গড়ে ওঠে পারিবারিক শুদ্ধতা আর মমতায়

বর্তমানে দেশের নতুন প্রজন্মের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের আশঙ্কায় অভিভাকদের দুশ্চিন্তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অনুমান করাই যায়। এসব সামাজিক অপতৎপরতার নেতিবাচক প্রভাব প্রথমেই এসে পড়ে ছোট্ট পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটির ওপর। বাবা-মা বিশেষভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সন্তানের আগামী দিনের কথা ভেবে। তার ওপর নতুন প্রজন্মের কিছু অংশ এসব অসামাজিক জঙ্গী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ায় শঙ্কট আরও অনেকাংশে বেড়ে যায়। তরুণ প্রজন্মের শুধুমাত্র ছেলেরাই নয় মেয়েরাও এই আত্মঘাতী, ভয়ঙ্কর অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ধর্মের নামে, বেহেশত প্রাপ্তির প্রত্যাশায়, জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে এসব উদীয়মান তরুণকে নানাভাবে মোহগ্রস্ত করে রাখা হয়। আর বিভিন্ন কারণে কিছুসংখ্যক তরুণ-তরুণী এসব মোহের জালে জড়িয়েও পড়ছে। এখানে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন প্রত্যেকটি বাবা-মার এবং পারিবারিক শুদ্ধ আবহের। বাবা-মার স্নেহ-ভালবাসা আর মায়া-মমতায় ঘেরা ছোট্ট পরিবারটি পারে সন্তানদের সঠিক পথে বেড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে। ধর্মীয় শিক্ষাটাও প্রথমে পরিবার থেকেই দেয়া উচিত। বাবা-মার আত্মিক ও শুদ্ধ মানসিকতায় সন্তানদের যথার্থ পথ চেনাতে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক থাকে অত্যন্ত নিবিড় এবং মায়ের সর্বক্ষণিক পরিচর্যায় সন্তান বড় হতে থাকে। বাবাকেও তার আদর্শনিষ্ঠতা, সততা এবং পরম ধৈর্যের সঙ্গে সন্তানকে তার ভাবী পথ চেনাতে হবে। বিপথগামিতা কোনভাবেই উন্নতির সূচক হতে পারে না। সেটা ইহলৌকিক আর পারলৌকিক যাই হোক না কেন। সন্তানকে প্রথমেই যোগ্য নাগরিক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে হবে। আর সেই কারণেই শৈশব থেকে তাকে সুস্থ এবং সুষ্ঠুভাবে জীবনের তাগিদ অনুভব করতে হবে এবং সমাজের বিকাশমান ধারায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জাতি হিসেবে আমাদের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এ দেশের মাটি আর মানুষকে নানাভাবে উদ্বুদ্ধও করেছে। নিজ দেশের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের বেড়াজাল যে কোন মানুষকে সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে শেখায়। অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের চিরকালের সম্পদ যা বর্তমান প্রজন্মকে ধারণ করে সত্যিকার পথে নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা এবং মননকে পরিচালিত করা প্রত্যেকেরই নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সমাজের সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করে শুভ এবং শুদ্ধ শক্তির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। আর এই মাঙ্গলিক চর্চা শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। বাবা-মার স্নেহে, মমতার সন্তানের জীবনের প্রতিটি ক্ষণ উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবে, তাদের যথার্থ শিক্ষায় সন্তান নিজের পথের ঠিকানা খুঁজে পাবে সেটাই এখন সব থেকে বেশি জরুরী। ধর্ম শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে সব ধরনের শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেখা যায় পারিবারিক সুস্থ আবহাওয়ার মধ্যে। বাবা-মা উভয়কেই এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ও পারিবারিক আবহাওয়ার মধ্যেই দেয়া বাঞ্ছনীয়। একজন বাবা-মাই সবচেয়ে ভাল বোঝেন তার সন্তানের আশা-আকাক্সক্ষা এবং এগিয়ে চলার সম্ভাবনা। আর সেভাবেই সন্তানকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাবা-মাকেই সঠিক সময়ে যথার্থ কাজটা করে দিতে হবে। জন্ম সূত্রেই সন্তানেরা কোন না কোন ধর্মের বাঁধনে বাধা থাকে। সেখানেও বাবা-মাকে যথার্থ ভূমিকা পালন করে পারিবারিকভাবে সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় বড় করে তুলতে হবে। কোনভাবেই বিপথগামিতা হওয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না। উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের নানা ধরনের চাহিদা থাকে। সেটাকে আমলে নিয়ে বাবা-মাকেই সন্তানের চলার পথকে নির্বিঘœ এবং নিষ্কণ্টক করে দিতে হবে। রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সন্তানকে অনেক বেশি সতর্ক করে দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তাকে গড়ে তুলতে হবে।
×