ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মসমর্পণ করে দশ মামলায় জামিন পেলেন খালেদা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১১ আগস্ট ২০১৬

আত্মসমর্পণ করে দশ মামলায় জামিন পেলেন খালেদা

কোর্ট রিপোর্টার ॥ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঢাকার নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে দশ মামলায় জামিন পেয়েছেন। এছাড়া অন্য দুই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার পৃথক ৪টি আদালতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে এসব বিচারিক আদেশ দেয়া হয়। জামিন পাওয়া ১০টি মামলার মধ্যে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের, নয়টি নাশকতার। সময় মঞ্জুর হওয়া মামলা দুটি হচ্ছে নাইকো দুর্নীতি এবং বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতির মামলা। খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার কারণে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরান ঢাকার জনসন রোড, ভিক্টোরিয়া পার্কসহ জজ আদালত এলাকায় ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গতকাল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হন। ওই আদালতে এদিন নয়টি মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় খালেদা জিয়া বর্তমানে জামিনে থাকায় আইনজীবীরা পূর্বশর্তে জামিনের আবেদন করেন। গত ৫ এপ্রিল মামলাটিতে তিনি ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন। জামিনে থেকে কোন শর্ত ভঙ্গ না করায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর নাশকতার ৮টি মামলায় খালেদা জিয়া জামিন আবেদন এবং চার্জশীট আমলে গ্রহণ না করার জন্য আবেদন করা হয়। আদালত সময় বৃদ্ধির আবেদন নামঞ্জুর করে দিলে আমল গ্রহণের ওপরও শুনানি করেন খালেদার আইনজীবীরা। তারা বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় কাউকে অভিযুক্ত করতে হলে ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতি প্রয়োজন। এছাড়া সরকারী কোন স্থাপনা ও যানমালের ক্ষতি হতে হবে। সবাই জানে বেগম জিয়া মামলার ঘটনাকালীন সময়ে তার গুলশান কার্যালয়ে গৃহবন্দী ছিলেন। তাই তার উপস্থিতি তো ছিলই না। এছাড়া মামলাগুলোয় সরকারী কোন স্থাপনা এবং যানমালের ক্ষতি হয়নি। তাই চার্জশীট আমলে গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। শুনানি শেষে একই বিচারক ৮ মামলায় খালেদা জিয়া ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উল্লেখ করে ২০ হাজার টাকা করে মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন এবং একই সঙ্গে মামলাগুলো আমলে গ্রহণ করেন। মামলাগুলোর মধ্যে ৫টি নাশকতার মামলায় আগামী ১০ অক্টোবর চার্জ শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। এছাড়া নাশকতার অপর মামলায় পূর্ব নির্ধারিত ৭ সেপ্টেম্বরই দিন ঠিক রাখেন। নাশকতা এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় শুনানির পর খালেদা জিয়া একই ভবনের ৬ তলায় ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছান। সেখানে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলার শুনানি হয়। ওই মামলায় উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার আবেদন বিচারাধীন থাকায় সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন আইনজীবীরা। এরপর এ মামলায় খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন। বিচারক হোসনে আরা বেগম ওই আবেদনও মঞ্জুর করে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরার অনুমতি প্রদান করেন। একই সঙ্গে চার্জ শুনানির জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন। এরপর খালেদা জিয়া রেবতী ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ৯ নম্বর বিশেষ জজ আমিনুল ইসলামের আদালতে পৌঁছান। সেখানে নাইকো দুর্নীতির মামলায় চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। শুনানিকালে খালেদা জিয়ার পক্ষে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়। আবেদনে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। দুদকের পক্ষে সময় বৃদ্ধির আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। প্রথমে আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করলেও পরে মঞ্জুর করে আগামী ১৬ আগস্ট শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এরপর খালেদা জিয়া ঢাকা সিএমএম আদালতের দ্বিতীয় তলায় পৌঁছান। সেখানে নাশকতার একটি মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াছমিন জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর এ মামলায় খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট এমদাদুল হক ওই আবেদনও মঞ্জুর করে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরার অনুমতি প্রদান করেন। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন সালমা হাই টুনি ও তাছলিমা ইয়াসমিন দিপা। দায়রা জজ আদালত এবং ২ নম্বর ও ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এর মধ্যে ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আইনজীবী ফাতেমা খানম নীলাও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন। বেলা ৩টা ৫ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালত অঙ্গন ত্যাগ করেন।
×