ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গার’ উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ আগস্ট ২০১৬

যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গার’ উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যম যাত্রাপালা। কিছু অসাধু মানুষের অপতৎপরতার সঙ্গে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংকটাপন্ন এই প্রাচীন শিল্পমাধ্যমটি। তবে যাত্রাশিল্পে নিবেদিত কিছু মানুষের কল্যাণে এখনও টিকে যাত্রাপালা। তাই প্রবল গতিতে এগিয়ে না গেলেও একেবারে থমকে যায়নি যাত্রাশিল্প। সেই সুবাদে হতাশার উল্টোপিঠে আশার আলো নিয়ে মঞ্চে এলো ঐতিহাসিক যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’। লেখক ও গবেষক আমিনুর রহমান সুলতানের রচনায় পালাটির নির্দেশনা দিয়েছেন যাত্রাশিল্পের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব যাত্রানট মিলন কান্তি দে। যাত্রাদল দেশ অপেরা প্রযোজিত পালাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো মঙ্গলবার। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে পালাটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা যাত্রাপালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সাহিত্যিক হায়দার আকবর খান রনোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল আক্তারুজ্জামান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পালার রচয়িতা আমিনুর রহমান সুলতান ও নির্দেশক মিলন কান্তি দে। যাত্রাপালা প্রসঙ্গে পালাকার আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক বহু ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে আছে বুড়িগঙ্গা। এই নদীর বাঁকে বাঁকে রাজধানী ঢাকার বেড়ে ওঠা এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে অনেকের নদীপথে যাতায়াতে অনেক বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটেছে-এসব নিয়ে তৈরি হয়েছে যাত্রাপালা বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা। ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাসে বুড়িগঙ্গার তরঙ্গ-বিভঙ্গে আবির্তত হয়েছে নানাভাবে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাসনামলের হীন ষড়যন্ত্র, ঘসেটি বেগমের মতিঝিলে যাওয়া-আসা, নৌকাডুবিতে নবাবের স্বজনদের মৃত্যুÑএসব ঘটনার ঐতিহাসিক সাক্ষী বুড়িগঙ্গা। রক্তরাঙা পলাশীর বিয়োগান্তক পরিণতির পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল সন্ন্যাসী, ফকির ও তাঁতি সম্প্রদায়। বিশেষ ক্ষোভ তৈরি মসলিন তৈরির তাঁতিদের মধ্যে। আর তাঁদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-বেদনার বিস্তৃতি ঘটে বিদ্রোহে ও বিক্ষোভে। সেই বিদ্রোহকেই প্রতীকী ব্যঞ্জনায় চম্পা বাঈ, শুভংকর, অঞ্জলি প্রভৃতি চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এই ঐতিহাসিক যাত্রাপালায়। এখানে উপস্থাপিত হয়েছে গবেষণালব্ধ দু’টি বিষয়। যেটি কিনা নবাব সিরাজের ঘটনা সংক্রান্ত কোন নাটক বা যাত্রায় দেখা যায়নি। একটি হচ্ছে গুপ্তচর হিসেবে নতুন চম্পা বাঈকে সৃষ্টি করা এবং অপর বিষয়টি হচ্ছে মসলিন উচ্ছেদের লক্ষ্যে তাঁতিদের ওপর ব্রিটিশ বেনিয়াদের অমানুষিক নির্যাতন। পলাশী যুদ্ধের বিয়োগান্তক পরিণতির পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে সন্নাসী, ফকির ও মসলিন-তাঁত সম্প্রদায়ের বিদ্রোহকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয়েছে এ যাত্রাপালায়। পালাটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এম আলীম, মোঃ রফিক, মঞ্জুরুল আলম লাবলু, এম সিরাজ, শাহ্ মোহাম্মদ আলী, অলিউল্লাহ অলি, সুদর্শন চক্রবর্তী, রফিকুল ইসলাম, আবুুল হাসেম, এম হাসেম, এম আলম, সংকর সরকার, রহিম, মোজাম্মেল হক, ইদ্রিস, আলমাস, লুৎফুন নাহার, রিক্তা সুলতানা, মনিমালা, আরিশা জামান, আলতাফ হোসেন ও মিলন কান্তি দে। শংকর সরকারের সঙ্গীত পরিচালনায় বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গত করেছেন গোকুল ঘোষ, পার্থ ভজন, গুরুদাস ও খালেক। রূপসজ্জায় ছিলেন নয়ন শেখ। প্রসঙ্গত, কয়েকটি যাত্রাপালার সফল মঞ্চায়নের পর এবার ‘মাস্টারদা সূর্য সেন’ নামে নতুন পালা নিয়ে মঞ্চে আসছে দেশ অপেরা। পালাটি লিখেছেন ব্রজেন্দ্র কুমার দে এবং পুনর্বিন্যাস করেছেন মিলন কান্তি দে। দলসূত্রে জানা গেছে, আগামী আগস্ট মাসের শেষ দিকে নতুন পালাটি মঞ্চায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষে নতুন পালাটির পুরোদমে মহড়া চলছে। এশিয়ান সিনেমা রেট্রোস্পেক্টিভের আগস্ট মাসের প্রদর্শনসূচী ॥ ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এশিয়ার ১৯টি দেশের ৫৬ জন চলচ্চিত্রকারের ৬৫টি চলচ্চিত্র নিয়ে জুলাই মাস থেকে চলছে ১৭ সপ্তাহের ‘এশিয়ান সিনেমা রেট্রোস্পেক্টিভ’। বছরব্যাপী বিশ্ব চলচ্চিত্র অনুধাবন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এই রেট্রোস্পেক্টিভের আয়োজন করা হয়েছে। রেট্রোস্পেক্টিভে মূলত এশিয়ান চলচ্চিত্রের ধরন, গতি-প্রকৃতি, এশিয়ার দিকপাল চলচ্চিত্রকারদের সাথে পরিচয়-জানাবোঝার পাঠ চলবে। প্রতিদিন প্রদর্শনী শুরু হকে বেলায় ৩টায়। প্রদর্শনী হবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল কালচারাল আর্কাইভ কক্ষে। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে এবং পরে প্রদর্শিত চলচ্চিত্র বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এশিয়ান সিনেমা রেট্রোস্পেক্টিভে আগস্ট মাসের প্রদর্শনী হিসেবে ৫ আগস্ট প্রদর্শিত হবে ইন্দোনেশিয়ান নির্মাতা কামিলা আনডিসি নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মিরর নেভার লাইস’ এবং তাইওয়ানের চলচ্চিত্রকার হো সিয়াও সিয়েন নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সিটি অব স্যাডনেস’। ৬ আগস্ট প্রদর্শিত হবে আফগানিস্তানের চলচ্চিত্রকার সিদ্দিক বারমাক নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ওসামা’। বাংলাদেশের প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে স্মরণ করে ১২ ও ১৩ আগস্ট তারেক মাসুদ নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হবে। ১২ আগস্ট প্রদর্শিত হবে তারেক মাসুদ নিমিত ‘আদম সুরত’, ‘মুক্তির গান’ এবং ‘মাটির ময়না’। ১৩ আগস্ট প্রদর্শিত হবে তারেক মাসুদ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’। ১৯ আগস্ট প্রদর্শিত হবে চীনের চলচ্চিত্রকার জ্যাঙ ইমু নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রেইস দ্য রেড ল্যান্ঠন’ এবং চীনের চলচ্চিত্রকার ওঙ কার ওয়াই নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’। ২০ আগস্ট প্রদর্শিত হবে চীনের চলচ্চিত্রকার চেন কেইগ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ফেয়ারওয়েল মাই কনকুবাইন’।
×