ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাজনীন হত্যায় শহীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল, ৪ জন খালাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ আগস্ট ২০১৬

শাজনীন হত্যায় শহীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল, ৪ জন খালাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আঠারো বছর আগে ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমানকে হত্যার দায়ে হাইকোর্টে মৃত্যুদ-ের আদেশ হওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে একজনের সাজা বহাল রেখে চারজনকে খালাস দিয়েছেন আপীল বিভাগ। রাজধানীর মিরপুর ও মহাখালীর স্যুয়ারেজ লাইনে পড়ে দুই শিশু নিহতের ঘটনায় তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কেন ২০ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। অন্যদিকে ‘দৈনিক আমাদের সময়’ পত্রিকার প্রকাশনা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার অনুমতি পেয়েছেন নাঈমুল ইসলাম খান। মঙ্গলবার আপীল ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আদেশগুলো প্রদান করেছে। লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমানকে হত্যার দায়ে একজনের সাজা বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপীল ও জেল আপীলের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপীল বিভাগ মঙ্গলবার এই রায় দেয়। গত ১১ এপ্রিল আপীলের ওপর শুনানি গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল। তিন মাস পর আসামিদের আপীল রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চূড়ান্ত রায়ে আসামিদের মধ্যে কেবল শাজনীনদের বাড়ির পরিচালক শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। আর খালাস পেয়েছেন সেই সময় শাজনীনদের বাড়ির সংস্কার কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদার সৈয়দ সাজ্জাদ মইনুদ্দিন হাসান, হাসানের সহকারী বাদল এবং গৃহপরিচারিকা দুই বোন এস্তেমা খাতুন (মিনু) ও পারভীন। ২০০৩ সালে বিচারিক আদালত এ মামলায় মোট ছয়জনকে মৃত্যুদ- দেয়। তিন বছর পর হাইকোর্ট পাঁচজনের সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রেখে একজনকে খালাস দেয়। আপীল বিভাগ যে পাঁচজনের রায় দিয়েছে তাদের সবাই বর্তমানে কারাগারে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল মোবিন জানিয়েছেন। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কিনা- তা বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’ অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাজাহান বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেয়েছি। ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। আপীল বিভাগ মঙ্গলবার একটি মামলার রায় দিয়েছে। জজ আদালতে থাকা অন্য মামলাটি বাতিল হয়ে গেছে।’ মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে গুলশানে লতিফুর রহমানের বাড়িতে খুন হন তার মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমান। শাজনীন তখন ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ওই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী রহমতউল্লাহ রায় দেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার দায়ে হাসান, শহীদ, বাদল, এস্তেমা খাতুন, পারভীন ও কাঠমিস্ত্রি শনিরাম ম-লকে মৃত্যুদ- দেন বিচারক। আসামিদের মৃত্যুদ- অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) ওই বছরই মামলাটি হাইকোর্টে আসে। দ-াদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপীলও করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপীলের ওপর শুনানি শেষে ২০০৬ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্ট হাসান, শহীদ, বাদল, মিনু ও পারভীনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে। অপর আসামি শনিরাম ম-ল খালাস পান। শিশু নিহতের ঘটনায় রুল ॥ রাজধানীর মিরপুর ও মহাখালীর স্যুয়ারেজ লাইনে পড়ে দুই শিশু নিহতের ঘটনায় তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কেন ২০ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান, ডিসিসি দক্ষিণ ও উত্তরের দুই মেয়র, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সকল ম্যানহোল ও স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনা সঠিকভাবে প্রতিস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আপীলের অনুমতি ॥ ‘দৈনিক আমাদের সময়’ পত্রিকার প্রকাশনা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার অনুমতি পেয়েছেন সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। ফলে দৈনিক আমাদের সময়ের প্রকাশনা নিয়ে নাঈমুল ইসলাম খানের করা আপীল আবেদনের দিন ঠিক করে তার ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে নাঈমুল ইসলাম খানের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টিএইচ খান ও ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। আদালতের শুনানিতে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এসএম বকস কল্লোলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, শরীফ উদ্দিন চাকলাদার ও আহসানুল করিম।
×