ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপী ঋণ কমলেও বাড়ছে মন্দমানের ঋণ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২ আগস্ট ২০১৬

খেলাপী ঋণ কমলেও বাড়ছে মন্দমানের ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের ৪৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ঋণই রয়েছে ৫ ব্যাংকে। ৬৪ শতাংশ রয়েছে ১০টি ব্যাংকে। এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংক, বেসরকারী ৩ ব্যাংক, বিশেষায়িত ১ ব্যাংক ও বিদেশী ১ ব্যাংক। এতে দেখা যায়, সার্বিক ব্যাংকিং খাতে সম্পদের ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংসহ ৫টি ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। আর ১০টি ব্যাংকের অনুকূলে এই সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার পরিমাণ ৪৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও ৬টি বেসরকারী ব্যাংক রয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল স্টাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৫ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে। সোববার এর মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। এ সময় ডেপুটি গবর্নর, চেঞ্জ ম্যানেজম্যান্ট উপদেষ্টা, সিনিয়র উপদেষ্টা, নির্বাহী পরিচালক, সংশ্লিষ্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ সামান্য কমেছে। ২০১৪ সালে ব্যাংকিং খাতে যেখানে খেলাপী ঋণ ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০১৫ সালে তা সামান্য কমে হয় ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। মোট খেলাপী ঋণ কমার পেছনে নিম্নমান ও সন্দেহজনক খেলাপী ঋণ ভূমিকা রেখেছে। তবে মোট খেলাপী ঋণ কমলেও মন্দমানের খেলাপী ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে মন্দমানের খেলাপী ঋণ ছিল ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। যা ২০১৫ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। এছাড়া ২০১৪ সালে খেলাপী ঋণের মধ্যে নিম্নমানের ঋণ ছিল ১১ শতাংশ ও সন্দেহজনক ঋণ ছিল ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০১৫ সালে নিম্নমান ও সন্দেহজনক খেলাপী ঋণ কমে হয় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল হয়েছে ঝুঁকিভিত্তিক ঋণগুলো। এই হার ২৮ শতাংশ। তবে এ সময়ে মোট ঋণ বিতরণ হওয়া ঋণের সাড়ে ৪ শতাংশ এবং অশ্রেণীকৃত ঋণের ৫ শতাংশ পুনঃতফসিল হয়েছে। ২০১৪ সালে বিতরণকৃত ঋণের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, অশ্রেণীকৃত ঋণের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও ঝুঁকিভিত্তিক ঋণের ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ পুনঃতফসিল সুবিধায় নিয়মিত করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে প্রথমবার বিশেষ সুবিধায় বড় ঋণগ্রহীতাদের (৫০০ কোটি টাকার বেশি) খেলাপী ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা দেয়া হয়। ওই সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে নিয়মিত করা হয়েছে। এর মধ্যেও ঝুঁকিভিত্তিক ঋণের অংশ বেশি ছিল। যার হার ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৮ শতাংশ ও অশ্রেণীকৃত ঋণের ৩ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৫৬টি ব্যাংকের ২৩টি ব্যাংক শীর্ষ ঋণ গ্রহীতাদের পুনর্গঠন সুবিধা দেয়। এর মধ্যে ১৭টি বেসরকারী, রাষ্ট্রায়ত্ত ৫টি ও ১টি বিদেশী ব্যাংক। তবে বেসরকারী ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ পুনর্গঠন সুবিধা দিয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দিয়েছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের ৪৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ঋণই রয়েছে ৫ ব্যাংকে। ৬৪ শতাংশ রয়েছে ১০টি ব্যাংকে। এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংক, বেসরকারী ৩ ব্যাংক, বিশেষায়িত ১ ব্যাংক ও বিদেশী ১ ব্যাংক। অনুষ্ঠানে গবর্নর বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে খেলাপী ঋণ কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে উন্নত সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় অঙ্কের (বৃহদাঙ্ক) ঋণগুলোর নজরদারীকে অধিকতর জোরালো ও কাঠামোবদ্ধ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৃহদাঙ্ক ঋণ মনিটরিং সফটওয়্যার (সিডিএলসি) স্থাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে চেঞ্জ ম্যানেজম্যান্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমি বলেন, বড় ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে বেশি ঋণ কেন্দ্রীভূত এ খাতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই এ ধরনের ঋণ মনিটরিংয়ে সফটওয়্যার (সিডিএলসি) চালু করেছে।
×