ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মাঠে নামছে তিন বড় দল এবং রহমতগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ আগস্ট ২০১৬

আজ মাঠে নামছে তিন বড় দল এবং রহমতগঞ্জ

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ‘সব দলই আমার কাছে সমান। ঢাকা আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ... এই তিন বড় দলকেই হারানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে। দরকার হলে আবারও হারাব।’ টগবগে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠ রহমতগেেঞ্জর কোচ কামাল বাবুর। চলমান ‘জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে পুরনো ঢাকার ক্লাবটি এখন বাকি দলগুলোর কাছে মূর্তিমান বিভীষিকার মতো। প্রথম ম্যাচে ড্র করেছে মোহামেডানের সঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচে তো হারিয়েই দেয় শেখ রাসেলকে। আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় চলমান ‘জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে তাদের তৃতীয় প্রতিপক্ষ শেখ জামাল ধানম-ি। গত লীগের চ্যাম্পিয়ন দল তারা। সেবার প্রথম সাক্ষাতে শেখ জামাল জেতে ২-১ গোলে। পরের খেলায় অবশ্য ১-১ গোলে ড্র করে রহমতগঞ্জ রুখে দেয় তাদের। এবারের লীগের শুরু থেকেই নিজেদের আর আন্ডারডগ বা জায়ান্ট কিলার হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে আসছেন কামাল বাবু। সেই বিশ্বাসে এখনও অটল তিনি। জামালের বিপক্ষে কি ফর্মেশনে খেলাবেন দলকে? কামাল বাবুর উত্তর, ‘খেলার গতিপ্রকৃতি বুঝে দলকে তিনটি ফর্মেশনে খেলাব। ৪-৩-৩, ৪-২-৪ এবং ৩-৫-২-২। আমরা শেখ জামালকে মোটেও ভয় পাচ্ছি না। দলকে খেলাব সম্পূর্ণ এ্যাটকিং মুডেই।’ কামাল আরও যোগ করেন, ‘শুনেছি ওদের ওয়েডসন আসছে। এমেকা খেলবে। এতে আমার কোন সমস্যা নেই। কারণ আমরা খেলি দলীয়ভাবে, কোন একক খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করি না। আমরা ওদের মার্কিং করে খেলব না, বরং ওরাই আমাদের মার্কিং করে খেলবে! আমাদের দলের শক্তিমত্তা হচ্ছে তারুণ্য এবং মধ্যপর্যায়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফুটবলার।’ দলের দুই বিদেশী জাত্তা মুস্তাফা এবং দাউদার গত শুক্রবার আসার কথা থাকলেও এখনও আসেনি। দলের নিয়মিত অধিনায়ক জাহাঙ্গীর কক্সবাজারের একটি সরকারী কলেজের লেকচারার। খেলার জন্য তিনি কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে এখানে আসতে পারেনি। ‘মনে হচ্ছে তার সার্ভিস আমরা আর পাব না। চোট আক্রান্ত নুরুল আবসার, সুমন ও শিমুল চট্টগ্রাম পর্বে খেলতে পারবেন না। তবে আমার দলে যা আছে, তাই নিয়ে আমি লীগের একেবারে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত।’ কামালের ভাষ্য। আজকের ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলেদের বলেছি, শেখ জামালের সঙ্গে ম্যাচটা যেন তারা ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে নেয়। কোন দলকেই আমরা ছাড় দেব না। প্রয়োজনে বিদেশী ছাড়াই খেলব!’ নানা সমস্যায় আছে শেখ জামাল। প্রথম ম্যাচে আরমবাগের সঙ্গে ড্র করলেও পরের ম্যাচে বারিধারাকে হারিয়ে ছন্দে ফেরে। দলের ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলাল বলেন, ‘ওয়েডসন ঢাকায় আসছে সোমবার সকালে। সেখানে থেকে বিমানে আসবে চট্টগ্রামে। কোচ আফুসির আসার কথা ৩ আগস্ট। ওয়েডসন এসেই খেলতে পারবে কিনা, সেটা নির্ভর করছে ওর ট্রেনিং, ফিটনেস ও ইচ্ছার ওপর। যদি খেলে তাহলে ওকে হয় তো যেকোন একটি অর্ধে খেলানো হবে। আরও ও মাঠে থাকলেও সেটা আমাদের জন্য অনেক কিছু।’ অন্য দলগুলিতে যেখানে ৩০-এর মতো খেলোয়াড় আছে, সেখানে জামালে আছে ১৯-২০ খেলোয়াড়। আইনী জটিলতায় তারা হারিয়েছে আট খেলোয়াড়কে। দল চলছে হেড কোচ ছাড়াই। প্রথম ম্যাচে এমেকা এবং দ্বিতীয় ম্যাচে মিডফিল্ডার এনামুল হক শরীফ লাল কার্ড পান। ‘এতগুলো ধাক্কার পরও আমরা চেষ্টা করছি ভাল খেলতে।’ হেলালের ভাষ্য। তিনি আরও আভাস দেন, ‘ওয়েডসন না খেললে এই ম্যাচে এনামুল ও এমেকা ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলবে। ওয়েডসন খেললে এনামুল নেমে যাবে মিডফিল্ডে। ল্যান্ডিং খেলবে এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। সেক্ষেত্রে আজকের ম্যাচে ড্রপ করা হতে পারে শিহাবকে।’ জামালের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান বলেন, ‘রহমতগঞ্জ খুবই ভাল দল। তারা ডমিনেট করে খেলে। কার্ড পাওয়াতে শরীফ আজ না খেলাতে সেটা দলের জন্য মাইনাস পয়েন্ট। ওয়েডসনকে দলে পেলে ভাল হয়। না পেলে ভরসা করতে হবে এনামুলের ওপর। দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা বাকিদের উজ্জীবিত করে দলের মনোবল ঠিক রাখছে। আজকের ম্যাচে জেতার জন্যই খেলব।’ একই ভেন্যুতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুখোমুখি হবে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র বনাম চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। ‘গত দুই ম্যাচে হেরেছি। তবে সেটা এখন অতীত। ওই দুই ম্যাচের কথা ভুলে গেছি আমরা। এই দুই হারেই আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। এখনও অনেক ম্যাচ খেলা বাকি আছে। আজকের ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। তারা স্বাগতিকও বটে। কিন্তু আমরা ওসব না ভেবে শুধু নিজেদের খেলা নিয়েই ভাবছি। আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে। ভাল সময় অবশ্যই আসবে।’ কথাগুলো শেখ রাসেলের কোচ মারুফুল হক। প্রথম দুই ম্যাচে উত্তর বারিধারা ও রহমতগঞ্জের কাছে হেরে নিজেদের হারানো ছন্দ খুঁজছে ২০১২ লীগের শিরোপাধারীরা। মারুফুল ইঙ্গিত দেন আজকের ম্যাচে ইথিওপিয়ান ফরেয়ার্ড ফিকরু তেফেরা এবং আরেক ফরোয়ার্ড সাখাওয়াত হোসেন রনিকে খেলানোর সম্ভাবনা আছে। রাসেলের অধিনায়ক-লেফটব্যাক আতিকুর রহমান মিশু বলেন, ‘গত দুই ম্যাচ ভাল খেলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরেছি। ওই দুই ম্যাচ থেকে আমরা ৬ পয়েন্ট পেতেও পারতাম। রাসেল সবসময়ই জেতার জন্যই খেলে। চট্টগ্রাম আবাহনী নিঃসন্দেহে ভাল দল। তাদের সঙ্গে আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামব। আমরা উইনিং ট্র্যাকে ফিরে আসতে চাই। আমাদের মনোবল প্রথমদিকে খারাপ থাকলেও এখন অনেক ভাল।’ ফিকরু ও রনি যদি খেলে, তাহলে আমাদের স্কোয়াড আরও শক্তিশালী হবে। যদিও এটা কোচের বিষয়। দলের গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমরা চ্যাম্পিয়নও হয়ে যেতে পারি। একটা জয়ই পারে আমাদের সবকিছু বদলে দিতে।’ জানা গেছে, ইতোমধ্যেই দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুই ফরোয়ার্ড মিঠুন চৌধুরী ও জাহিদ হাসান এমিলি। মিঠুন অনুশীলন শুরু করলেও এমিলি করেননি। তিনি এখনও পুরোপুরি ফিট নন। এবারের ফেডারেশন কাপে গ্রুপ পর্বে শেখ রাসেল ১-১ গোলে ড্র করেছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে। স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনালে আবাহনী টাইব্রেকারে জেতে ৪-২ (১-১) গোলে। এছাড়া গত লীগে রাসেল প্রথম মোকাবেলায় ২-০ গোলে জিতলেও ফিরতি ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে তাদের রুখে দেয় চট্টলার দলটি। চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত উন্নতি করছি। শেখ রাসেল প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশ্যই শক্তিশালী। যেকোন সময় তারা ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। গত ম্যাচে দর্শকদের সমাগম বেশ ভাল ছিল। আশা করি এই ম্যাচেও তাই হবে। দর্শক আসলে আমরা ভাল খেলতে উজ্জীবিত হই। আশা করি আমরা তাদের হতাশ করব না।’
×