ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদমদীঘিতে তিন ক্রসড্যাম

কৃষকের মরণ ফাঁদ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১ আগস্ট ২০১৬

কৃষকের মরণ ফাঁদ

নিজস্ব সংবাদদাতা, সান্তাহার, ৩১ জুলাই ॥ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কৃষকের সুবিধা লাভের আশায় অপরিকল্পিতভাবে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ইরামতি ও তিয়রপাড়া খালে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য সাত ফুট উঁচু ক্রসড্যাম নির্মাণ করায় লাভের বদলে হয়েছে কৃষকের সর্বনাশ। ভারি বৃষ্টি হলেই পানি নিষ্কাশনের খালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে প্রতি বছর। কৃষক বাধ্য হয়ে সম্প্রতি ইরামতি খালের এই ড্যামের ওপড়ের প্রায় দুই ফুট ভেঙ্গে ফেলেছে। কিন্তু তারপরও কোন লাভ হচ্ছে না। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পানি গড়িয়ে এই খালে নেমে এসে জমা হয়ে উপচে পড়ছে। পানি গড়িয়ে ভাটার দিকে যেতে না পারার জন্য পানি একাধিক এলাকার ফসলের মাঠে ঢুকে পড়ে বিশাল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। এতে করে এই খালের দুই পাশের কয়েক হাজার বিঘা জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ না হবার কোন সম্ভাবনা দেখছে না এলাকার কৃষকরা। বিক্ষুদ্ধ কৃষকেরা গত বছর ইরামতি খালের দুটি ড্যামের ওপরের দুই ফুট অংশ ভেঙ্গে দেয়। এতে সামান্য পানি নিষ্কাশন হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। ওই দুই ড্যামে অচিরেই স্ল্যুইস গেটের ব্যবস্থা করা না হলে প্রতিবছর এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদী অথবা ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বগুড়া জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন জানিয়েও কোন লাভ পায়নি। ইরামতি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। বগুড়ার আদমদীঘি, নওগাঁর রাণীনগর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল উপজেলার মাঠের পানি গড়িয়ে বর্ষাকালে এই খাল দিয়ে রক্তদহ বিলে পড়ে। এরপর বিশাল রক্তদহ বিল থেকে এই পানি বিভিন্ন খাল পথে প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে যায়। এটা হলো এই ইরামতি খালের স্বাভাবিক গতিধারা। একদা নদীর মতো স্রোতধারার এ খাল এক সময় ভরাট হয়ে যায়। একপর্যায়ে বরেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়। এ প্রকল্পের অধীনে ২০১৩ সালে দায়সারাভাবে এই খালের খনন কাজ শেষ করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, যেখানে যতটুকু চওড়া ও গভীর করে খনন করার কথা তা করা হয়নি। এজন্য খালে যে পরিমাণ পানি আটকে থাকার কথা ছিল তার অর্ধেক পানিও থাকছে না। বরেন্দ্র প্রকল্প এই খালে পানি আটকানোর জন্য খালের তলা থেকে সাত ফুট উঁচু কংক্রিটের চওড়া দেয়াল তুলেছে, যা খালের স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আদমদীঘি উপজেলার ধনতলা ও রাণীনগর উপজেলার পারইল ব্রিজের নিচে এবং সান্তাহারের দমদমা গ্রামের পাশে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ড্যাম নামের ওই তিন মরণ ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এলাকার কৃষক জানিয়েছেন শুধু ইরি-বোরো ফসলের আশায় খালে ড্যাম দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল আটকে দেয়ার পাশাপাশি আমন চাষ প্রায় বন্ধ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে খরা মৌসুমে এই খালের পানি দিয়ে বোরো ফসল করা সম্ভব হয় না। তাদের গভীর এবং অগভীর নলকূপ থেকে পানি কিনতেই হয়। লাভের আশায় বাঁধ নির্মাণ করা হলেও হয়েছে তার উল্টো। কৃষকদের অভিযোগে আরও জানা যায়, এ তিনটি ড্যাম নির্মাণ করার আগে বরেন্দ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কৃষক বা এলাকাবাসীর সঙ্গে কোন মতবিনিময় করেনি। এদিকে উপজেলার রক্তদহ বিলের আদমদীঘির শাখা খালেও আরও ক্রসড্যাম নির্মাণের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
×