ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পন্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৯ জুলাই ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পন্ন গলি

মনোয়ার হোসেন ॥ আরেকটি বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল প্রাণের শহর ঢাকা। ঘটতে পারত গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁর জঙ্গী হামলার চেয়েও ভয়াবহ কোন কোনকিছু। ধর্মের অপব্যাখ্যা দেয়া মানবতার শত্রু জঙ্গীদের হাতে আবারও প্রাণ হারাতে পারত অসংখ্য নিরীহ মানুষ। পরিকল্পনাও ছিল তেমনটাই। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা। পুনরায় জয়ী হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। চলমান জঙ্গীবিরোধী অভিযানের ভেতরেই সোমবার মধ্যরাতে যৌথবাহিনী অভিযান চালায় কল্যাণপুরের জাহাজবাড়ি নামের ভবনে। আগে থেকেই খবর ছিল, ওই বাড়ির পাঁচতলায় ঘাঁটি গেড়েছে জঙ্গীরা। রাত বারোটার পর প্রথমে অভিযানে নামে পুলিশ বাহিনী। জঙ্গীদের শক্তিশালী অবস্থানের ভিত্তিতে পরবর্তীতে অভিযানে যোগ দেয় র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াত। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয় বাড়িটি। চলতে থাকে জঙ্গীদের ছোড়া গ্রেনেড ও গুলির পাল্টা জবাব। এরপর রাত শেষে মঙ্গলবার ভোরের আলোয় চালানো হয় অল আউট এ্যাটাক। যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে ঘটনাস্থলে নিহত হয় দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার পরিকল্পনাকারী ৯ জঙ্গী। ঘটনাস্থল থেকে জীবিত আটক করা হয় এক জঙ্গীকে এবং পালিয়ে যায় এক জঙ্গী। সপ্তাহ শেষে বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহরে টক অব দ্য টাউন হয়ে ওঠে কল্যাণপুরের জঙ্গী দমনের ঘটনা। জঙ্গীবাদের উত্থানে আতঙ্কিত হওয়া মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির সংবাদ ছিল এই অভিযান। অন্যদিকে জঙ্গীবাদ দমনে ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাসা-বাড়িতে থাকা মেস মেম্বার কিংবা কিংবা ভাড়াটিয়ার বিস্তারিত তথ্য নিকটবর্তী থানায় জমা দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে আবারও। জঙ্গী উত্থান রোধে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। উগ্রপন্থার মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সংস্কৃতির শাণিত শক্তি দিয়েও প্রতিরোধের কথা বলা হচ্ছে। সেই সুবাদে গত শনিবারও ভাষাশহীদদের স্মৃতির মিনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তেজগাঁও-গুলশানের সংযোগস্থল পুলিশ কনভেনশন সেন্টার পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। হাজারও সংস্কৃতিকর্মীর অংশগ্রহণে পদযাত্রায় গান, কবিতা ও বক্তৃতায় উচ্চারিত হয় মানবতার বাণী। প্রতিবাদী উচ্চারণে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ঠাঁই হবে না জঙ্গীবাদের। সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের প্রতিবাদী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই থেকে জঙ্গীবাদবিরোধী সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী পালন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর। জঙ্গীবাদের উত্থানের আশঙ্কা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্তের প্রতিবাদী এ কর্মসূচীর শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে সমাপনী দিনের বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ছাত্র-যুব-পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সমাবশের শুরুতেই গুলশান ও শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলার বিষয় নিয়ে লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন ঝর্ণা সরকার। এরপর উদীচীর নৃত্যশিল্পীরা জাগরণমূলক গান ‘এসো ঘুম ভাঙাই এ পৃথিবীর হয়নি দেরি আজও’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে। আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, জঙ্গীবাদের এ সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অসঙ্গতি, অবহেলা এবং নৈরাজ্যের ফল হচ্ছে আজকের জঙ্গীবাদের উত্থান। তাই একে নির্মূল করতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আর এ কাজে সংস্কৃতি কর্মীদেরই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়াও সমাবেশে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজাবী গণসংগঠনকে সমন্বিত করে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিরোধ গড়ারও আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা আরও বলেন, দেশের বর্তমান এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। লাখো শহীদের রক্ত ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ধর্মের নামে কোন অপশক্তিকে সাম্প্রদায়িক দেশে রূপান্তরিত করতে দেয়া হবে না। জঙ্গীবাদ ছেড়ে এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। জনজটের শহর ঢাকায় বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষদিনেও ছিল যানজট। বিকেলের পর অফিস ফেরত মানুষ পড়ে যানজটের ভোগান্তিতে। এ তো গেল জানযটের বিড়ম্বনার কথা। তবে এ সপ্তাহে শহরের মানুষকে ভোগায়নি তীব্র তাপদাহ। বর্ষাকালের রীতিমাফিক সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টি হয়েছে। তাই পথচলতি নগরবাসীকে সহ্য করতে হয়নি গরমের যন্ত্রণা। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মিরপুর রোডের টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে দিয়ে আসার সময় হঠাৎ যেন চোখ আটকে যায়। নজর পড়ে জীর্ণ দশা ট্রাফিক আইল্যান্ডটির ওপর। সেখানে যেন ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সড়ক ব্যবস্থার শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত তিনজন ট্রাফিক। আইল্যান্ডটির ছাদের অবস্থা একেবারেই বেহাল। চারপাশ থেকে খসে গেছে আস্তার। বেঁকে গেছে আইল্যান্ডটির পিলার হিসেবে কাজ করা রডগুলো। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে কাঠামোটি। তাই আইল্যান্ডটির সুরক্ষায় যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেয়া উচিত যথাযথ সরকারী কর্তৃপক্ষের।
×