ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কল্যাণপুরের আস্তানার আরও ৯ জঙ্গীর খোঁজ মিলেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৯ জুলাই ২০১৬

কল্যাণপুরের আস্তানার আরও ৯ জঙ্গীর খোঁজ মিলেছে

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল এমন ছদ্মনামের নয় জঙ্গীর নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা। এরা হলো- ইকবাল, রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল, আজাদুল ওরফে কবিরাজ ও তামিম চৌধুরী। এরা ধর্মীয় ও জিহাদী বয়ানে উন্মাদনায় উদ্বুদ্ধ করত, প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা দিত, জঙ্গী সংগঠন ও সমর্থনপুষ্ট নেতাকর্মী, সমর্থকদের অর্থ, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরকদ্রব্য, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিত। বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিয়ে গুলশানের মতোই আইএসের কালো পোশাক পরিহিত ছবি তুলে রেখেছে, যা উদ্ধারকৃত পেনড্রাইবে পাওয়া গেছে। কল্যাণপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আহতাবস্থায় আটক চিকিৎসাধীন রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে আটক রিগ্যান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রাজধানীর কল্যাণপুর, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গী সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গীরা সুইসাইড স্কোয়াডের ও সিøপার সেল পদ্বতিতে কার্যক্রম চালায়। শোলাকিয়ায় আটক জঙ্গী শাফিউল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা। দুই জঙ্গীই আহতাবস্থায় ধরা পড়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দু’জনকে টিএফআই সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র বলেছে, আটক হওয়া চিকিৎসাধীন দু’জন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের জঙ্গীরা একই সূত্রে গাঁথা। কমান্ড সেন্টার থেকে তাদের প্রত্যেককে ছদ্মনাম দিয়ে এ্যাকশনে নামায় (হত্যাকা- ও নাশকতায়) মাস্টারমাইন্ড, যা তারা চেহারা দেখলে চিনবে কিন্তু সঠিক নাম-পরিচয় অজানা। পলাতক এসব শীর্ষস্থানীয় এসব জঙ্গীরা যাতে বড় ধরনের নাশকতা বা হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য তাদের গ্রেফতারের জন্য মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। মিরপুর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কল্যাণপুরের ঘটনায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী প্রায় দুই বছর আগে দেশে ফিরে আত্মগোপন করে জঙ্গী কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আহত রাকিবুল হাসান রিগ্যানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীর নাম ইকবালসহ (ছদ্মনাম) নয়জন সুইসাইড স্কোয়াড সদস্য জঙ্গীর নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা। র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকার একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী প্রায় দুই বছর আগে দেশে ফিরে আত্মগোপন করে জঙ্গী কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। মিরপুর থানায় দায়ের করা এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এ আত্মগোপনকারী শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গী নেতার সঙ্গে আরও কয়েকজন জঙ্গী নেতা যাতায়াত করত কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায়। আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ করে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তামিম চৌধুরী। কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তামিম চৌধুরী ছাড়াও জঙ্গী আস্তানা ও পলাতক জঙ্গীদের সম্পর্কে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে আটক হওয়া জঙ্গী রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, মাস্টারমাইন্ডরা প্রশিক্ষণের সময় তাদের শেখায় যে, পুলিশের হাতে ধরা পড়লে নিজেকে ‘মৃত বা শহীদ’ মনে করতে হবে। মৃত মানুষ যেমন কোন তথ্য দিতে পারে না, তেমনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও কোন তথ্য দেয়া যাবে না। এজন্য একই মেসে একই সঙ্গে থাকা-খাওয়া করলেও ছদ্মনাম ছাড়া তাদের কারও নাম কাউকেই জানতে দেয়া হয় না। শহীদী মরণের জন্য তারা সকল সময় প্রস্তুতি নিয়ে থাকার জন্য নিয়মিত বয়ান করা হয়। বয়ানের সময় বলা হয়, সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিরোধ প্রত্যেক মুসলমানের ইমানী দায়িত্ব। অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন যাওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুত হতে বলা হয়। সে অনুযায়ী অস্ত্রের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। হাসান ওরফে রিগ্যান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া ইকবাল (ছদ্মনাম) মাসখানেক আগে বলেছে, আপাতত বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই। দেশেই যুদ্ধ করে ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠা’ করা এখন তাদের দায়িত্ব। হাসান বেশ কয়েকজন বড় ভাইয়ের নাম জানিয়েছে। কোথায়, কাদের মাধ্যমে সে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে, সে বিষয়েও কিছু তথ্য দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, একবার শপথ, প্রশিক্ষণ নেয়া হলে আর পালিয়ে আসার কোন উপায় নেই। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, সিøপার সেলের জঙ্গীদের এমনভাবে কাটআউট পদ্ধতিতে মোটিভেশন করা হয় যে, সিøপার সেলের সদস্যরা কখনও গ্রেফতার হলে শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে না পারে। তারপরও শারীরিক বর্ণনা শুনে ও আগে থাকা গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়। জঙ্গীদের উদ্বুদ্ধ ও অর্থদাতাদের মধ্যে কিছু লোককে শনাক্ত করা গেছে, যা আটক হাসানের দেয়া তথ্যের সঙ্গে আগের গোয়েন্দা তথ্যের কিছু মিল পাওয়া গেছে। রাকিবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া নামগুলোর মধ্যে তামিম চৌধুরী ও জোনায়েদ খান ছাড়া অন্য নামগুলো জঙ্গী নেতাদের ছদ্মনাম বলে মনে হয়েছে। কারণ জঙ্গীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম-পরিচয়ে তাদের কার্যক্রম চালায় এবং ঠিকানা বদলায়। হাসান এখনও অসুস্থ। তার কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সে সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী নেটওয়ার্কের আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
×