ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক মেয়রের এক বছর

মেগাসিটির আশায় নগরবাসী

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৮ জুলাই ২০১৬

মেগাসিটির আশায় নগরবাসী

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রথম বছরে শতভাগ সাফল্য বিলবোর্ড উচ্ছেদ। জলাবদ্ধতা নিরসনের কার্যক্রম এখনও উদ্যোগ ও পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে তিন বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে চসিক- এমনই জানালেন মেয়র। তবে প্রথমবর্ষেই জনচলাচলের জন্য ফুটপাথ দখলমুক্ত না করতে পারাকে এক ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সচেতন নাগরিকরা। কারণ এ কাজটির জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই। হকার উচ্ছেদে এর আগের মেয়ররাও সফল হননি। ফলে বর্তমান মেয়রের জন্যও এ কাজটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করছেন নগরবাসী। চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বললেন, মূল্যায়নের জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট নয়। অনেকেই মানছেন মেয়রের এ কথা। তবে কিছু কিছু কাজ অল্প সময়ের মধ্যেও করা সম্ভব বলে মনে করেন নগরবাসী। যেমন নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি অল্প সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ করেছেন নগরীর যত্রতত্র স্থাপিত চার সহস্রাধিক ছোট-বড় বিলবোর্ড। একই ভাবে ফুটপাথ থেকে ভ্রাম্যমাণ হকারদের উচ্ছেদ করে জনচলাচলের পথ সুগম করা যেত। আগের মেয়রদের মতো তারও সফলতা নেই এক্ষেত্রে। হকারদের জন্য ভ্রাম্যমাণ ট্রলি তৈরি করে দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে বসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন মেয়র। তবে এ উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। ফুটপাথ অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় সাধারণকে চলাচল করতে হয় অনেক ঝক্কি-ঝামেলা সহ্য করে। চট্টগ্রাম সিটির প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারেই প্রধান ইস্যু থাকে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতার জোর প্রচার ছিল আগের দুই মেয়র এম মনজুুর আলম ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের নির্বাচনেও সকল প্রার্থীরই অঙ্গীকার ছিল জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেয়ার। কিন্তু এক্ষেত্রে বর্ষার আগে নালা-নর্দমা থেকে পলি উত্তোলন ছাড়া স্থায়ী কোন ব্যবস্থা এখনও দৃশ্যমান হয়নি। তবে এবার তুলনামূলক ভোগান্তি কম হয়েছে। এর জন্য অবশ্য বৃষ্টি কম হওয়াও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন নাগরিকরা। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বর্ষপূর্তির মতবিনিময়কালে এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম অনেক পুরনো একটি নগরী। এখানে অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে। নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, খাতুনগঞ্জসহ বেশকিছু নিচু এলাকা রয়েছে, যেখানে বৃষ্টি ছাড়া জোয়ারের পানিতেই সড়কগুলো তলিয়ে যায়। বৃষ্টির সময় যদি জোয়ার থাকে তাহলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। সুতরাং জলাবদ্ধতা দূরীকরণে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। নগরীর ২৬টি ছোট-বড় খাল খনন করে মুখগুলোতে সøুুইসগেট স্থাপন করতে হবে। এছাড়া বেড়িবাঁধেরও প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কাজটি করা গেলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান সম্ভব বলে তিনি অভিমত রাখেন। একজন সিটি মেয়র বা সিটি কর্পোরেশনের কাছে নগরবাসীর চাওয়া-পাওয়ার খুব বেশিকিছু থাকে না। কর্পোরেশনের নাগরিকদের প্রধান চাওয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চলাচল উপযোগী সড়ক ব্যবস্থা ও আলোকায়ন। এ তিনটি ক্ষেত্রের কার্যক্রম দিয়েই মেয়রের সফলতা-ব্যর্থতা বিচার করা হয়। বিগত নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দিনও এ প্রতিশ্রুতিগুলোই ব্যক্ত করেছিলেন। এর পাশাপাশি তার সেøাগান ছিল ‘ক্লিন এ্যান্ড গ্রীন সিটি’। তিনি চট্টগ্রামকে একটি মেগাসিটি করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছিলেন। সেই মেগাসিটি গড়তে নগর সম্প্রসারণের কোন উদ্যোগ এখনও নেই। তবে গ্রীন সিটির পথে বড় ধরনের একটি অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে বিলবোর্ড উচ্ছেদের সফলতাকে। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরে নিজের কোন ব্যর্থতা দেখছেন না চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, এক বছরে কোন মূল্যায়ন করা যায় না। আমি শিখেছি, জেনেছি এবং নগরবাসীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। সে অনুযায়ী তিন বছরের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে অগ্রসর হচ্ছি। তিন বছর পর আপনাদের মুখোমুখি হব। তখন বলবেন, কোন কোন কাজ হয়নি। সে কাজ বাকি এক বছরের মধ্যে শেষ করব।
×