ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে গোটা বিশ্বই আমাদের পাশে আছে ॥ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৪ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী দমনে গোটা বিশ্বই আমাদের পাশে আছে ॥  শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, শুধু দেশের জনগণই নয়, পুরো বিশ্বই সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের পাশে আছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসী ছাড়াও তাদের মদদদাতা, অর্থ ও অস্ত্রদাতা, উস্কানিদাতাসহ সবার শিকড় সন্ধানে নেমেছি। সবাইকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। জনগণের শক্তি দিয়েই আমরা দেশ থেকে জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করব। দেশে কোন অন্ধকার থাকবে না, আমাদের আলোর পথে যাত্রা অব্যাহত থাকবে। কোন শক্তিই তা রুখতে পারবে না। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দেশের জনগণই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জনগণের শক্তিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধেও ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে হবে, সর্বত্র সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সব বাহিনীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের মূল শিকড় কোথায়, কারা অর্থ, অস্ত্র ও উস্কানি দিচ্ছে, নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী কারা, কারা এভাবে ঠা-ামাথায় মানুষকে খুন করার জন্য তরুণদের বিপথে চালিত করছে তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। সবাইকে খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করবই। কেউ-ই রেহাই পাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বৈঠকে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর শোকাবহ আগস্ট পালনে বিভিন্ন কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলা দিবস, ২৯ আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিন যথাযোগ্যভাবে পালনে দলীয় কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া দলটির আসন্ন জাতীয় ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল সফল করার বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। সূচনা বক্তব্যে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অনেকেই ভেবেছিল গুলশানের হামলার পর সারাবিশ্বে বাংলাদেশ হেয়প্রতিপন্ন হবে, ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। কিন্তু হামলার পর বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান আমাকে মেসেজ দিয়ে বা চিঠি দিয়ে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আমাদের জঙ্গী-সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, এখন শুধু দেশের জনগণই নয়, সারাবিশ্বের নেতারা বাংলাদেশের জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে পাশে আছেন, তাঁরা যে কোন সহযোগিতা দিতেও প্রস্তুত। দ্রুততার সঙ্গে জঙ্গীদের দমনের জন্য সামরিক বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বের নেতারা চিঠি দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এত দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন চালিয়ে হামলাকারীদের দমন করে ১৩ জিম্মিকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, নিহত হামলাকারীদের মৃতদেহ পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেসব দেশে সম্ভব নয়, পরীক্ষার জন্য সেগুলো বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। যত বাধাই আসুক যথাসময়েই আওয়ামী লীগের সম্মেলন ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন নির্ধারিত সময়েই দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য গঠনতন্ত্র ঘোষণাপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সকল দায়িত্বপ্রাপ্তদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধে সারাদেশের তৃণমূলে দ্রুত কমিটি সম্পন্ন করা এবং এসব কমিটি সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের তিনি বলেন, এই কমিটি হবে সব শ্রেণী পেশার মানুষদের নিয়ে। সেখানে যেন আওয়ামী লীগকে প্রাধান্য দেয়া না হয়। সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে সভাপতি বা আহ্বায়ক করতে হবে। সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খেয়াল রাখতে হবে যেন জামায়াত-শিবিরের লোকজন এখানে ঢুকে না পড়ে। একই সঙ্গে তিনি যেসব জেলায় দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেখানে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার উদ্যোগ নিতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতি নির্দেশ দেন। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন দলীয় গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত যেসব দিবস পালন করা হয় এর বাইরেও জাতীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিবস রয়েছে। সেগুলো আমরা দলীয়ভাবে পালন করতে পারি। এ সময় দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গঠনতন্ত্রের বাইরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্মদিন ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন করি, সেগুলোর কি হবে? শেখ হাসিনা বলেন, গঠনতন্ত্রে যা রয়েছে তা সেভাবেই পালন করা হবে। এর বাইরে যেসব দিবস রয়েছে তা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পালন করা হবে। এ সময় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন নিয়ে আলোচনা হলে তিনি বলেন, আমি ঘটা করে জন্মদিন পালন করি না। এ সময় আমি তো দেশেই থাকি না। যদি দেশে থাকি তাহলে ফুল দিয়েন। বৈঠকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার প্রশংসা করেন দলের নেতারা। সভায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন লাভ করে, তিনটি পদ ছাড়া নওগাঁ কমিটিও অনুমোদন পায়। বৈঠকে ময়মনসিংহ জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দলীয় নেতাদের মতামত নেয়া হয়।
×