ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর থেকে নিখোঁজদের ৫ জন জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ জুলাই ২০১৬

যশোর থেকে নিখোঁজদের ৫ জন জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের বিভিন্ন স্থান থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছে যশোরের পুলিশ। এ পাঁচজনের মধ্যে এমএম কলেজের শিক্ষক নাইমা আক্তারের নাম নেই। পুলিশের বিশেষ শাখা নিখোঁজ ব্যক্তি ছাড়াও সন্দেহভাজনদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার রাতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসে। সম্প্রতি র‌্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিখোঁজদের তালিকায় যশোরের মনিরামপুরের ১৪ জনের নাম রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে, এরা জঙ্গী নন, কাজের সন্ধানে সমুদ্রপথে বিদেশ গেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে যশোরের ৯টি থানায় মোট ১১৪টি সাধারণ ডায়েরি হয় সন্তান বা স্বজনদের নিখোঁজের বিষয়ে। দেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে পুলিশ এ সাধারণ ডায়েরিগুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে। পুলিশী তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এদের অনেকে পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়েছেন। আবার অনেকে গোপনে বিয়ে করে পরিবার ত্যাগ করেছেন। কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন কাজের আশায়। যশোরে নিখোঁজের ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এরা হলেনÑ যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার সোবহানের ছেলে কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না (২৪), শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে ফজলে রাব্বি (২১) এবং শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের আওরঙ্গজেবের ছেলে মেহেদি হাসান জিম (১৯)। এদের মধ্যে ফজলে রাব্বি মাগুরা সদর উপজেলার বাসিন্দা হলেও বর্তমান ঠিকানা যশোরের কিসমত নওয়াপাড়া। অন্য দুই ‘জঙ্গী’ হলেনÑ শহরের ধর্মতলা মোড় এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে রায়হান (২১) ও মনিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত হাসান আলী গাজীর ছেলে জিএম নাজিমউদ্দিন ওরফে নকশা নাজিম (৪২)। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, ধর্মতলা এলাকার রায়হান হিযবুত তাহরীরের কেন্দ্রীয় নেতা। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। আর মনিরামপুরের নাজিমউদ্দিন নিখোঁজের ব্যাপারে রাজধানীর ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। এদিকে, সম্প্রতি র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) তাদের ওয়েবসাইটে যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করে তার মধ্যে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ১৪ জনের নাম রয়েছে। এরা হলেনÑ মশ্মিমনগর ইউনিয়নের আমানুল্লাহ, কামরুজ্জামান, কামাল হোসেন, সারাত আলী, চাকলা গ্রামের হাসানুর রহমান, মল্লিকপুরের ইকবাল হোসেন, কিসমত চাকলা গ্রামের হাসান আলী, ফারুক হোসেন, সুমন হোসেন এবং ঝাঁপা ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম, পীর বক্স, তপন ও শাহ আলম এবং শৈলগ্রামের মাসুুদুর রহমান। র‌্যাবের এ নিখোঁজ তালিকার ব্যাপারে একমত নয় যশোর পুলিশের বিশেষ শাখা। পুলিশ কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, মশ্মিমনগর এবং ঝাঁপা ইউনিয়নের এসব ব্যক্তি কাজের আশায় সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া বা অন্য কোন দেশে পাড়ি দেন। এদের অনেকে ফিরেও এসেছেন। আবার অনেকের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ হয়েছে। জানতে চাইলে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, “পাঁচ ‘জঙ্গীর’ পরিবারের সঙ্গে ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা ভুল পথ থেকে ফিরে এলে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আইনগত সহায়তা দেয়া হবে। প্রয়োজনে সুপথে ফেরার জন্য তাদের কাউন্সেলিং করা হবে।” ‘এখন পর্যন্ত কামরুজ্জামান এবং ফজলে রাব্বির পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ওই দুই তরুণের বাবা-মা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা সন্তানদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। অন্য তিনজনের পরিবারকে মেসেজ দেয়া হলেও কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি।’ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের নিখোঁজ তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে এসপি আনিসুর রহমান বলেন, ‘র‌্যাবের তথ্যসূত্র কী তা আমাদের জানা নেই। পুলিশের কাছে মশ্মিমনগর ও ঝাঁপা এলাকার অনেক ব্যক্তি নিখোঁজের তথ্য ছিল। আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি তারা সমুদ্রপথে বিদেশযাত্রা করেছে। জঙ্গীদের সঙ্গে এদের কোন যোগসূত্র নেই।’ উল্লেখ্য, যশোর এমএম কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নাইমা আক্তার সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন। তারা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা।
×