এ বছরটা নার্গিস ফখরির ক্যারিয়ারে ভিন্ন রকম আমেজ নিয়ে এসেছে। বলিউডে অভিনেত্রী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর পর এর মধ্যে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। সুন্দরী গ্ল্যামারাস আবেদনময় ইমেজের নার্গিস হিন্দী সিনেমার অঙ্গনে খুব বেশি ব্যস্ত করে তুলতে না পারলেও অনেক আলোচনা গুজব গুঞ্জনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন গত পাঁচ বছরে। তার পরিচিতি ছড়িয়েছে একজন সাহসী উদ্ভিন্ন যৌবনা সুন্দরী গ্ল্যামার তারকা হিসেবে। গত পাঁচ-ছয় বছরে তাকে মোট ৫টি সিনেমায় দেখা গেলেও এ বছর ইতোমধ্যেই নার্গিসকে ৩টি সিনেমায় দেখা গেছে বিভিন্ন ভূমিকায়। আগামী সপ্তাহে আসছে এ্যাকশন ছবি ‘ঢিস্যুম’। এ ছবিতেও নার্গিস ফখরি আছেন বিশেষ একটি চরিত্রে। সব মিলিয়ে একই বছরে নিজের চারটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় নার্গিস নিজেও দারুণ উত্তেজিত। এ বছরই তার আরেকটি ছবি ‘বানজো’ মুক্তি পাবে। রোমান্টিক ধাঁচের এ ছবিতে এক খ্রিস্টান তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। এখানে তার বিপরীতে নায়ক হিসেবে রয়েছেন রিতেশ দেশমুখ।
৩৬ বছর বয়সী নার্গিস ফখরি বলিউডে নিজের অবস্থানকে ততটা পাকাপোক্ত করতে না পারলেও আবেদনময় ইমেজের কারণে আইটেম গার্ল হিসেবে তার চাহিদা খুব সহজেই চোখে পড়ে। ২০১১ সালে ইমতিয়াজ আলীর ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা ‘রকস্টার’ এর মাধ্যমে পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত আমেরিকান সুপার মডেল নার্গিস ফখরির বলিউড ক্যারিয়ার শুরু। প্রথম অভিনীত ছবিতে অভিনয়ে ততটা পরিপক্ব মনে হয়নি তাকে, তবে তার গ্ল্যামারাস সৌন্দর্য দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। ফলে তিনি সম্ভাবনাময় সেরা নতুন মুখের অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার এ্যাওয়ার্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। এরপর ২০১৩ সালে পলিটিক্যাল থ্রিলার সিনেমা ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’তে একজন টিভি রিপোর্টারের ভূমিকায় তাকে দেখা যায়। এ ছবিতে নার্গিস ফখরির চমৎকার অভিনয় দর্শক সমালোচকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করে। যদিও পরবর্তী সময়ে তাকে এ ধরনের রোলে আর কোন সিনেমায় দেখা যায়নি। এরপর নার্গিস ‘ম্যায় তেরা হিরো’, ‘কিক’ এবং তামিল সিনেমা ‘সাগাশাম’ এ একজন উদ্ভিন্ন যৌবনা আইটেম গার্লরূপে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন। গত বছর হলিউডে নার্গিসের অভিষেক হয়েছে এ্যাকশন কমেডি মুভি ‘স্পাই’ এর মাধ্যমে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, বলিউডে নার্গিসের আইটেম গার্ল পারফরমেন্সগুলো দারুণ সেনসেশন সৃষ্টি করেছে। তিনি যে আইটেম সঙগুলোর সঙ্গে পর্দায় পারফরমেন্স করেছেন তার প্রতিটিই সুপারহিট হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ‘ফাটা পোস্টার নিকালা হিরো’ ছবির ‘ধাতিং নাচ’, ‘কিক’ ছবির ‘ইয়ার না মিলে’, তামিল ছবি ‘সাগাশাম’ এ ‘দেশি গার্ল’ প্রভৃতির কথা লা যায়। কয়েক মাস আগে মুক্তি পেয়েছে নার্গিস ফখরি অভিনীত বহুল আলোচিত একটি হিন্দী সিনেমা ‘আজহার’। একদার নন্দিত-নিন্দিত ক্রিকেটার মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনের বাস্তব জীবনের নাটকীয় ঘটনাবলী নিয়ে নির্মিত এ ছবিতে নার্গিস ফখরি অভিনয় করেছেন আজহার উদ্দিনের প্রেমিকা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী একদার বলিউড অভিনেত্রী কাম মডেল সঙ্গীতা বিজলানীর চরিত্রে। বহুল আলোচিত তেমনি একটি চরিত্রে রূপদান করাটা নার্গিস ফখরির অভিনয় জীবনে দুর্দান্ত একটি চ্যালেঞ্জ ছিল সন্দেহ নেই। তবে তিনি সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছেন। যারা ‘আজহার’ ছবিটি দেখেছেন এ ছবিতে সঙ্গীতা বিজলানীর চরিত্রে নার্গিসের অনবদ্য অভিনয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। গ্ল্যামারাস এবং আবেদনময় এ চরিত্রটিকে রুপালি পর্দায় জীবন্ত করে তোলার ব্যাপারে তার আন্তরিকতা এবং সিরিয়াসনেসের কমতি ছিল না। এরপর মুক্তি পেয়েছে কমেডি ধাঁচের ছবি ‘হাউসফুল থ্রি’। এ ছবিতে অভিষেক বচ্চনের বিপরীতে তাকে দেখা গেছে তিন নায়িকার একজন হিসেবে। ‘হাউসফুল থ্রি’ ছবিতে নার্গিসের পাশে বলিউডের আরও দুই আবেদনময় গ্ল্যামারাস সেক্স সিম্বল নায়িকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ এবং লিসা হেইডেনও ছিলেন। নার্গিসকে তাদের পাশে তুলনামূলকভাবে বেশি আবেদনময় এবং আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। আগামী সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে এ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা ‘ঢিস্যুম’। যাতে একটি বিশেষ চরিত্রে নার্গিসকে দেখা যাবে। এ বছরেই তার অভিনীত রোমান্টিক মিউজিক্যাল ছবি ‘বানজো’ মুক্তি পাবে। এ ছবিতে নার্গিসকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন এক ইমেজে দেখা যাবে। সব মিলিয়ে ২০১৬ সাল তার জন্য দারুণ একটি অভিজ্ঞতা বয়ে এনেছে। একই বছরে এতগুলো সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ খুব কম সংখ্যক নায়িকার ভাগ্যে জোটে সাধারণত।
নার্গিসের জন্ম আমেরিকার নিউইয়র্কে। তার বাবা পাকিস্তানী আর মা চেকশ্লোভাকিয়ান। যখন নার্গিসের বয়স মাত্র ছয় তখন বাবা মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। খুব কম বয়সেই বাবাকে হারান নার্গিস। আমেরিকায় মডেল হান্ট প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়ের পর তার খ্যাতি পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্রে বলিউডে নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে ভারতে ক্যারিয়ার গড়তে চলে আসেন। গত পাঁচ ছয় বছরে বলিউডে কাজ করার অভিজ্ঞতা নার্গিসকে অনেকটাই ম্যাচিওরড করে তুলেছে।