ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ মিনারে জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার শপথ হাজারো মানুষের

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৪ জুলাই ২০১৬

শহীদ মিনারে জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার শপথ হাজারো মানুষের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজধানীতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামিয়ে বড় ধরনের শোডাউন করল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শপথ নিলেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত বিশাল এ যুব সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দেশের যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবই। তিনি বলেন, জঙ্গীরা মানুষ না, মুসলমানও না। এরা মানুষরূপী শয়তান। এই শয়তানদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতেই হবে। তিনি বলেন, গুলশানের জঙ্গী হামলার পর বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) বলেছেন রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয়েছে। আবার তিনি সুর বদলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চান। এর মানে কী? এসব ঘটনার সঙ্গে তার হাত আছে। আমি বলব, আইনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার শেষ পরিণতি হবে। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ কামাল, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু, যুবলীগের ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরণ, আবদুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমান আতা, এ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন, নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক নিজাম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা আবু কাওছার, যুব মহিলা লীগের নাজমা আক্তার, অধ্যাপিকা অপু উকিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ। দুপুরের পর থেকেই শহীদ মিনার অভিমুখে মিছিলের ঢল নামে। বিকেল তিনটার আগেই শহীদ মিনার এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশ শুরুর পর গোটা শহীদ মিনার চত্বর বিশাল যুব সমাবেশে পরিণত হয়। ‘সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-উগ্র ধর্মান্ধতা ও জঙ্গীবাদ : রুখে দাঁড়াও যুব সমাজ’ সেøাগানে এ সমাবেশের আয়োজন করে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। সমাবেশে শপথবাক্য পাঠ করান যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, এ দেশে সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আইনের মাধ্যমেই একদিন তাদের শেষ পরিণতির দিকে যেতে হবে। শেখ হাসিনার পদভারে জঙ্গীবাদ নিশ্চিহ্ন হবে, নিষ্পেষিত হবে। শেখ হাসিনার মাত্র দুটি পা নয়, ১৬ কোটি শান্তিকামী মানুষের পায়ের শক্তি এখন শেখ হাসিনার পায়ে- এটা তাদের বুঝতে হবে। তিনি বলেন, আজকে জঙ্গী-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একই আহ্বান ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’। আমি অন্তরের অন্তঃস্থল, হৃদয়ের গভীর থেকে বিশ্বাস করি যে, শেখ হাসিনার এ আহ্বান বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরের আহ্বান। যদি তাই না হতো তাহলে দেখেন না যারা (জঙ্গীরা) গুলশানে ও শোলাকিয়ায় মারা গেছে, তাদের নিকটজন তাদের লাশ আনতে যায়নি। মর্গে পড়ে থাকে ওই লাশ। লজ্জা, ঘৃণা এবং ধিক্কার জানাই ওসব সন্তানকে। তাদের মায়েরা মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারছেন না। এর চাইতে জঘন্য জীবন আর কী হতে পারে? যখন ছেলের জন্য মা চোখের পানি ফেলতে পারেন না, লোকলজ্জার ভয়ে, ঘৃণার ভয়ে জনরোষের ভয়ে, ধিক! সেই সন্তানকে ধিক! ধিক সেই জঙ্গীকে। যার মা একটু কাঁদতেও পারে না। মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, কারা এই জঙ্গীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে, লালন করছে। এই জঙ্গীবাদের বিষদাঁত বাংলার সুজলা-সুফলা বাংলাকে আচ্ছন্ন করছে, রক্তাক্ত করছে। আমি বলি অভ্যুত্থান দেখা খালেদা জিয়ার স্বপ্নবিলাস। সিঙ্গাপুরের আদালতে চার বাংলাদেশীকে জঙ্গী অর্থায়নের দায়ে শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জে একটা কথা আছে- এক হাঁসে নষ্ট করে সাত পুকুরের পানি। কয়েকজন দুষ্কর্ম করে আর বিদেশে বাঙালীদের চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর আমাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়। তিনি পাড়ামহল্লায় সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা- যারা করে তাদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া একদিকে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন, অন্যদিকে ঐক্যের ডাক দেন। তিনি কোন দিকে যাবেন নিজেই ঠিক পান না। তিনি আসলে নিজেকে বাঁচাতেই ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে কোন ঐক্য নয়, বরং যুবলীগ তাকে প্রতিরোধ করবে। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ফেনীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বলেন, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিহার না করলে খালেদা জিয়াকে আর কখনও ফেনীতে ঢুকতে দেয়া হবে না। আপনি (খালেদা) ফেনীর মেয়ে হিসেবে নিজ জেলার একটুও উন্নয়ন করেননি। অথচ আপনি দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনি জঙ্গীদের নেত্রী। যতদিন আপনি জঙ্গীবাদ না ছাড়বেন, ততদিন আপনাকে ফেনীতে ঢুকতে দেয়া হবে না।
×