ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পুত্র তাজের সন্ধানে মায়ের থানায় ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ জুলাই ২০১৬

নিখোঁজ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পুত্র তাজের সন্ধানে মায়ের থানায় ডায়েরি

সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ১১ জুলাই ॥ গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা প্রকাশ করে তাদের অন্যতম লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন কাউসার। গুলশানে হামলাকারী যুবকদের কয়েকজন বেশ আগে থেকে নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর আরও ১০ যুবকের নিখোঁজ থাকার খবর দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাতে লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিনের (পাসপোর্ট নম্বর-এফ ০৫৮৫৫৬৮) নাম ছিল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিখোঁজ ১০ তরুণের মধ্যে তাজের ছবি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তার মা। শনিবার রাতে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। এটিএম তাজউদ্দিন (কাউসার) অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন। সে পরিবার নিয়ে ওই দেশে থাকত। তাজ ২০১৩ সালে অসুস্থ বাবাকে দেখতে দেশে আসে। এর পর মাঝেমধ্যে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে মায়ের খবর নিত। তাজের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার জন্ম ১৯৮১ সালের ১ মার্চ সদর উপজেলার আটিয়াতলী গ্রামে। পড়তেন বাড়ির পাশে আটিয়াতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে ২০০৬ সালে কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ থেকে (বিএসসি) স্কলারশিপ নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যান। ওই দেশের দ্য নিউ সাউথওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করে ২০০৮ সালে তিনি দেশেরই একটি কোম্পানিতে সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে চাকরি নেন। ওই সময়ে তিনি নোভা হাসান নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। জানা গেছে, ২০১০ সালে সাদ ইবনে তাজউদ্দিন নামে তাদের এক ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। এর দুই বছর পর মেয়ে মারিয়াম বিনতে তাজউদ্দিনের জন্ম হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে তাজ অসুস্থ বাবাকে দেখতে বাড়িতে আসেন এবং এক সপ্তাহ পর ফের অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বাবা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া মারা যান। তবে প্রায় এক বছর পর তাজ অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করলে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি তাকে জানানো হয়। তাজের মা তাহেরা বেগম বলেন, ২০১৩ সালে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খুব কমই যোগাযোগ করতে থাকে। এমনকি দেশে টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দেয় সে। গত রমজান মাসের কয়েক দিন আগে তাজ শেষবারের মতো বাড়িতে ফোন দিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার শারীরিক খোঁজখবর নেন। তাজের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ শাহজাহান খোকন জানান, প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় তাজ খুব লাজুক ছিল। তার মধ্যে কোন অহঙ্কার কিংবা প্রতিহিংসা ছিল না। কী কারণে তাকে নিয়ে কথা উঠছে তা ভেবে পাচ্ছি না। তার মধ্যে কখনও কোন উগ্রবাদী চিন্তা আমি দেখিনি। হঠাৎ সংবাদ মাধ্যমে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিতে আমি হতাশ। প্রতিবেশী মোঃ কবির আহম্মেদ জানান, ছোট থেকেই তাজ নিয়মিত নামাজ পড়ত। কখনও কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। মুরব্বিদের খুবই সম্মান করত সে। এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাজের মা হতাশ হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি জিডি করেন। আমরা এটিএম তাজউদ্দিনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তিনি ২০০৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। সেখান থেকেই নিখোঁজ হন তিনি। তাজ বর্তমানে কোথায় আছেন তা আমাদের জানা নেই। আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি। উল্লেখ্য, রাজধানীর গুলশান এলাকায় হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ১ জুলাই জঙ্গী হামলার পর নিখোঁজ ১০ তরুণের পাসপোর্ট নম্বরসহ ছবি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার। নিখোঁজ ১০ তরুণের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিনও (পাসপোর্ট নম্বর ০৫৮৫৫৬৮) একজন।
×