ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

মেহেরার মির্জা

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৩ জুন ২০১৬

মেহেরার মির্জা

২৬ জানুয়ারি ২০০৬ ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে মুক্তি পায় ‘রাং দে বাসান্তি’ নামে একটি স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র। মুক্তির পরপরই খুব আলোচিত হয় এই চলচ্চিত্র। অতিক্রম করে অতীতের সব বাণিজ্যিক সাফল্য। সমৃদ্ধ গল্প ইতিবাচক পরিমিতিবোধ ও জাতীয়তাবোধ এ চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে সিনেমাপ্রেমীরা উপলব্ধি করেন। দেশ বা জাতি হিসেবে ভারতীয়দের রাজনৈতিক ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। কেউ কেউ আবার এই রাজনৈতিক আখ্যানকে সমৃদ্ধ বলতে চান না। প্রতিবাদ করে বলতে চেষ্টা করেন অযোগ্য রাজনীতিবিদের দুর্বলতা। আর এ প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন কায়দায়। এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র ছিল বিভিন্ন সময়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। রাং দে বাসান্তি ছিল তেমনি এক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পদক্ষেপ। বলিউডে রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক চলচ্চিত্রে নির্মাণ হলেও সেগুলো ছিল এক একটা নির্দিষ্ট সময়ের চালচ্চিত্র। এক্ষেত্রে রাজনীতির অতীত এবং বর্তমানকে এক করে দেখিয়েছেন এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা। নির্মাতা হিসেবে এর আগে এত বিচক্ষণ তাকে দেখা যায়নি। এক কথায় প্রমাণ করে ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণে তার সামর্থ। পরিচিতির শীর্ষে নিয়ে যায় তাকে দেশী ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে। এ চলচ্চিত্রে তিনি, ভারতে ব্রিটিশ শাসন এবং শাসনকালে ভারতীয় জনসাধারণের মনস্তাত্ত্বিক বিবেচনা ও চরিত্র তুলে ধরেছেন, সেই সময় ভারতে নিযুক্ত এক ব্রিটিশ কারা কর্মকর্তার দিনলিপির মধ্য দিয়ে। অনেক বছর পর ওই দিনলিপি সঙ্গে নিয়ে ভারতে আসেন সুই ম্যাককিনলে নামে ব্রিটেনের এক শর্ট ফিল্ম নির্মাতা। ওই ব্রিটিশ কারা কর্মকর্তার নাতনি হলেন সুই। পিতামহের লেখা দিনলিপি পরে সুই ভারতে ব্রিটিশ শসন ও শোষণের বর্ণনায় অনুপ্তত হন। নিজের ভেতর অনুশূচনা জন্মায়, সেই অনুশূচনা ও আগ্রহ তাকে ভারত পর্যন্ত নিয়ে আসে। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু করেন তাঁর পিতামহের লেখা দিনলিপির বাস্তব চিত্রনাট্য। এক সময় জড়িয়ে পরেন আধুনিক ভারতের অপরাজনীতির ঘোলাজলে। ফলাফল অতীতে যা ঘটেছিল বর্তমানেও ঠিক তাই। অতীত ও বর্তমানের অপরাজনীতির প্রহসন, সাধারণ মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং জাতীয়তাবাদের অনুপ্রেণায় প্রতিবাদী পদক্ষেপ এসব ছিল ‘রাং দে বাসান্তি’ পর্দাজুড়ে। অনেকে মনে করেন মেহেরা এ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে নিজেকে যথাযথ প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। এরপর ২০০৯ সালে মুক্তি পায় ‘দিল্লী-৬’ নামে মেহেরার আর একটি চলচ্চিত্র। মেহেরার ব্যক্তিগত জীবনের শৈশব-কৈশর কাটে পুরাতন দিল্লীর চাঁদনিচক এলাকায়। পুরাতন দিল্লীর, দিল্লী-৬ পোস্টাল কোড এলাকায় নিজের ব্যক্তিগত স্মৃতি, পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন এই চলচ্চিত্র। জুলাই ২০১২ দ্য রেস অফ মাই লাইফ অলিম্পিকজয়ী ভারতীয় এ্যাথলেট মিলকা সিংয়ের জীবনী নিয়ে নির্মাণ করেন বায়োগ্রাফিক্যাল স্পর্টস ড্রামা ‘ভাগ মিলকা ভাগ’। এ চলচ্চিত্র দিয়ে মেহেরা আবারও প্রমাণ করেন চলচ্চিত্র নির্মাণে জীবন বাস্তবতা কতখানি প্রাসঙ্গিক। মেহেরার মতো চলচ্চিত্র নির্মাতারা মাঝে মাঝে প্রমাণ করেন খুব ভাল মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা বলিউডের জন্য খুবই স্বাভাবিক। হাতেগোনা কয়েকটা চলচ্চিত্র দিয়ে প্রমাণ করেছেন, রসালো বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণ না করেও সব শ্রেণীর দর্শকদের কাছে যাওয়া যায়। পৌঁছানো যায় তাদের অনেক গভীরে। দীর্ঘ চার বছরেরও অধিক সময় পর এ বছর ৭ অক্টোরব মুক্তি পেতে যাচ্ছে মেহেবার পঞ্চম চলচ্চিত্র ‘মির্জা’। রাজস্থানের কিংবদন্তি মির্জা-শাহিবানের প্রেমের লৌকিক কাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত এ চলচ্চিত্র। কাব্যিক দ্বন্দ্বময় প্রেম ও যুদ্ধ এ ছবির মূল পটভূমি। অনিল কাপুর পুত্র হর্ষবর্ধন কাপুর এবং সায়ামি খের এ ছবিতে প্রধান চবিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রথাগত চিন্তা কিংবা চিরাচরিত ধ্যানধারণা কখনও সমাজ ও রাষ্ট্্েরর জন্য ইতিবাচক নয় এ বিশ্বাস মেহেরা সব সময় ধারণ করেন। প্রচলিত শ্রেণীনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা কখনও সৃজনশীল মানুষ তৈরিতে সহায়ক নয় তাই তো তিনি এ অসম শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা করে আসছেন। এসব কথার অর্থ হলো চিন্তা-চেতনায় মেহেরা যতখানি সৃজনশীল বাস্তবিক কাজেও ততখানি সৃজনশীল।
×