ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সঙ্গীত দিবসে আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে সঙ্গীতানুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২২ জুন ২০১৬

সঙ্গীত দিবসে আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে সঙ্গীতানুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুরের সঙ্গে বাণীর সংযোগ মানব চিত্তকে বিকশিত করে সঙ্গীত। কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটায়। সূক্ষ্মতর অনুভূতিকে জাগ্রত করে মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। সেই শক্তির জোরেই সঙ্গীত সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলে। তাই সঙ্গীত ছাড়া সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। সভ্যতা বিকাশের স্রোতধারার এগিয়ে নেয়ার সাক্ষ্যবহ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস ছিল মঙ্গলবার। সারা পৃথিবীর মতোই বাংলাদেশেও উদ্্যাপিত হয়েছে দিনটি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে কপিরাইট ও শিল্পীর অধিকার শীর্ষক সেমিনার। ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে গানে গানে আবাহন করা হয় এই বিশেষ দিবসকে। সঙ্গীত দিবসের বিকেলে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘কপিরাইট ও শিল্পীর অধিকার’ শীর্ষক সেমিনার। এতে কণ্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, গীতিকবিসহ শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমের সৃষ্টিশীলতার অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে আলোচনা হয়। সংগঠনের সভাপতি তপন মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মনজুরুর রহমান। আলোচক হিসেবে সেমিনারে অংশ নেন সুরকার শেখ সাদী খান, শিল্পী রফিকুল আলম, নাসির আহমেদ, ফেরদৌস হোসেন ভূঁঞা প্রমুখ। কপিরাইট সম্পর্কিত আইনগত ব্যাখ্যা হাজির করেন ব্যারিস্টার হামিদুজ্জামান। সেমিনারে আলোচকরা বলেন, ১৯৬২ সালে কপিরাইট আইন প্রণীত হলেও দেশের অনেক শিল্পী জানেই না এ ব্যাপারে। এ অজ্ঞতার কারণে মুনাফালোভী দুষ্কৃতকারীরা শিল্পীদের ঠকাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তারা। মূল প্রবন্ধে মোঃ মনজুরুর রহমান বলেন, কপিরাইট আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া আমরা এখনও আমাদের শিল্পীদের অধিকার আদায়ের জন্য কার্যকর কোন ভূমিকাই নিতে পারেনি। প্রতিনিয়ত শিল্পীরা ঠকছেন ও নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারলে শিল্পীদের আজ পথে বসতে হতো না, সাহায্যের জন্য কারও দ্বারস্থ হতে হতো না। বিভিন্ন মুঠোফোন কোম্পানির বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে শিল্পীর অনুমতি ছাড়া ওয়েলকাম টিউন ও রিংটোন টিউন হিসেবে গান ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এটা রীতিমতো বেআইনী কাজ। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায়ই মূল গানের বিকৃতি করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন রেফারেন্স বই কপিরাইট আইন না মেনে হরদম ফটোকপি করা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন । ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শাখার শিল্পীদের অধিকার আদায়ে কালেক্টিভ ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন (সিএমও) গঠিত হলেও সংগঠনটি এখনও পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করতে পারেনি বলেও জানান এই কপিরাইট আইন বিশেষজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে বলেন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিএমও গঠিত হলেও এখনও এটি পুরোদমে সচল করা যায়নি। তবে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও সিএমওকে কার্যকর করার ব্যাপারে সবাই মিলে কাজ করছি। এটি প্রতিষ্ঠা হলে শিল্পীদের মেধাস্বত্ব¡ নিয়ে আরও বেশি কাজ করা যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের শিল্পীরাও কপিরাইট আইন বিষয়ে সচেতন নয়। অনেক শিল্পী আছেন যারা কখনই কপিরাইট আইন পড়েননি। তাই আমরা জানি না, মেধাস্বত্ব¡ ইস্যুতে আমরা কিভাবে মামলা করতে পারি। প্রায়ই শুনি, শিল্পীরা ঠকছেন। কিন্তু একটিও মামলা হওয়ার ঘটনাও এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম অভিযোগ করে বলেন, সিডি প্রকাশনা সংস্থাগুলো কপিরাইট আইনের ফাঁকফোকর গলে শিল্পীদের নানা কৌশলে ঠকাচ্ছে। শিল্পীদের মধ্যে একটি দল ‘টাকার বিনিময়ে’ সিডি প্রকাশ ও প্রচারণা করায় দুষ্কৃতিকারীরা ফায়দা লুটছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সুরকার শেখ সাদী খান বলেন, মেধাস্বত্ব ও সম্মানী ইস্যুতে অনেক কথা হয়েছে। এবার সবাইকে একাট্টা হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। শক্ত প্রতিরোধেই দাবি আদায় করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে তপন মাহমুদ বলেন, সঙ্গীতশিল্পীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। নিজেকে তৈরি না করে টাকার বিনিময়ে কতিপয় শিল্পী সিডি বের করছেন। বিনিময়ে তারা কোন পারিশ্রমিকও চান না। এভাবে তারা অন্য শিল্পীদের ক্ষতি করছে। অনুষ্ঠানে আলোচনায় আরও অংশ নেন সঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, মাহমুদ সেলিম, বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ। আলিয়ঁসে সঙ্গীত উৎসব : বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী বিশেষ সঙ্গীত উৎসব। মঙ্গলবার বেলা ১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার ফরাসী ভাষার ছাত্রছাত্রী এবং ইকোল-দো- মিউজিকের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে একক ও দ্বৈত সঙ্গীত এবং যন্ত্রসঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা, ইংরেজী এবং ফরাসী ভাষায় পরিবেশিত একক ও দলীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি পিয়ানো, গিটার আর ভায়োলিনের মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনায় অনুষ্ঠানটি সবার কাছে দারুণ উপভোগ্য এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে। আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিন বুধবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানে একাধিক তরুণ ব্যান্ডদল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠানের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে থাকছে মনসরণী ব্যান্ডের সঙ্গীত পরিবেশনা।
×