ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতবিনিময়

মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার আগেই ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ জুন ২০১৬

মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার আগেই ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার অনেক আগেই ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, স্বাচিপ ও বিএমএ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা ডাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সভায় দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতির উন্নয়ন নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা। গত বছর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তীতে তা গুজব বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু সাময়িক সময়ের জন্য বিভ্রান্তিতে পড়েন মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এবং তাদের অভিভাবকরা। এমন অপ্রত্যাশিত অবস্থা মুক্ত থাকতেই এবার বাড়তি নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, আমাদের সময়.কম এর প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ঢাকা বাংলা চ্যানেলের হেড অব নিউজ প্রণব সাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজি) সভাপতি শাবান মাহমুদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ সহিদুল্লা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ প্রমুখ। মেডিক্যাল শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি আরও মজবুত করার ক্ষেত্রে সকলের পরামর্শ কামনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কাজ করলে বিভিন্ন সমস্যা আসবেই। তবে যে কোন কাজের জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করি। সামনে রয়েছে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা। সাধারণত সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেধাবীরাই প্রাপ্ত মেধাক্রম অনুযায়ী মেডিক্যাল শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়ে থাকে। গত বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করেছে একটি চক্র। পরবর্তীতে তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই এবার ভর্তি পরীক্ষার অনেক আগেই এ ধরনের গুজব প্রতিরোধসহ মেডিক্যাল শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ভর্তি পরীক্ষা আরও যথাযথভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আপনাদের পরামর্শ কামনা করছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষায় সীমিত আসন সংখ্যার বিপরীত অনেকগুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর প্রাপ্তদের সংখ্যাও কলেজগুলোর আসনের তুলনায় অনেকগুণ বেশি হয়ে থাকে। পরীক্ষার পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র তৈরি এবং সেগুলো পরীক্ষা সেন্টারে পাঠানোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন সুযোগ নেই। প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে পরীক্ষা সেন্টারসমূহে পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে শক্তিশালী নিরাপত্তাবয় থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ছাড়াও বিভিন্ন স্তরে বেশ কয়েকটি কমিটির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। প্রশ্নপত্র তৈরির কাজে পাঁচজন প্রখ্যাত শিক্ষক থাকেন, যাদের পরিচয় বাইরের কেউ জানতে পারেন না। তারা পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। আর সেখানে কর্মরত ৪ থেকে ৫ জন কর্মচারীকেও একই পরিবেশে থাকতে হয়। তারা যেখানে থাকেন, কাজ করেন, সেই কক্ষটি সিসিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এমন পরিবেশ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা ভাবাই যায় না। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের দেয়া উদ্যোগের প্রশংসা করে দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, প্রশ্নপত্র তৈরি করতে যে নিরাপত্তা ও নিখুঁত উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য ও খুবই কার্যকর। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটতে পারে না। এত কিছু উদ্যোগ নেয়ার পরও যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে নতুন কোন পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, উন্নতির দিকে যাচ্ছে দেশ। উন্নয়ন চাইলে একটু ত্যাগ স্বীকার ও সমালোচনা সইতেই হয়। তবে মৌলিক জায়গায় সকলের জবাবদিহিতা থাকতে হবে। প্রশ্নপত্র তৈরির উদ্যোগটি আজ তারই একটি ইতিবাচক দিক। প্রশ্নফাঁস বা প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব এড়াতে প্রতি বছর পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তবে এসব কাজে সংশ্লিষ্টদের সততা না থাকলে অনেক সময় শক্তিশালী উদ্যোগও সফলতার মুখ দেখে না। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষা ও পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রকারীদের দুর্বল ভাবলে হবে না। যে কৌশল ও পদ্ধতিতে যারা প্রশ্নপত্র তৈরি করছেন, তাদের চেয়েও বেশি মেধাবী হলেন ষড়যন্ত্রকারীরা। তাই আমাদেরও নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষা ও মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার মধ্যকার সময় কমিয়ে আনা হলে কুচক্রী মহলের সদস্যরা ষড়যন্ত্র করতে বেশি সময় পাবে না। মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার উঠিয়ে দেয়ার দাবি জানান তৌফিক মারুফ।
×