ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ডিজিটাল আবদার

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২১ জুন ২০১৬

ঈদে ডিজিটাল আবদার

চলছে ধর্মীয় সাধনার মাহে রমজান। এ মাস শেষ হলেই অর্থাৎ সাওয়াল মাসের প্রথম চাঁদ দেখা গেলেই উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। বছরের অন্য ইংরেজী, বাংলা কিংবা আরবী মাসে- ধর্মপালনের এত স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায় না। এ মাসকে ঘিরে রয়েছে অন্যন্য মহিমা। নাতিদীর্ঘ এই সাধনার পর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সামনে অপেক্ষা করে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদ। ঈদকে কেন্দ্র করে যে অপেক্ষা ও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় তা তরুণ-তরুণীদের মধ্যেই বেশি । ঈদ যেন তাদের ভুবন সাত রঙে রাঙাতে আসছে। তাই তো রোজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পছন্দের রংও বদলাতে থাকে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও কম-বেশি নিজেদের রঙিন করতে পছন্দ করেন। চেষ্টা করেন পরিবারের আদরের সদস্যদের পছন্দানুযায়ী উপহার দিতে। তরুণ-তরুণীরাও জানেন নিজেদের চাওয়া পাওয়া পূরণের জন্য এই উৎসবই সুবর্ণ সুযোগ। বছরের অন্য সময় বা মাসে বলতে না পারা নিজেদের প্রয়োজনীয় শখটাও পূরণ হয় এই ঈদ উৎসবের মধ্য দিয়ে। আজকাল তরুণ-তরুণীদের শখগুলো নির্ভর করছে তাদের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। পরিবারও চেষ্টা করে সন্তানদের পছন্দের উপহার দিতে। এক্ষেত্রে পরিবারের আর্থিক সঙ্গতিরও সমন্বয় থাকে। ঈদে সব পেশার সব শ্রেণীর মানুষের কাছে অর্থের সমাগমও থাকে বেশ। তাই তো নিজের বা নিজেদের পছন্দের শখ পূরণের এটাই হয়ত মোক্ষম সময়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি, সমাজ, মানুষ এবং মানুষের চরিত্র সবই বদলায়। এ বদলটা অবশ্য সময়ই নির্ধারণ করে দেয়। মানুষ চাইলেও অতীতকে বর্তমানের সঙ্গে মেলাতে পারে না। সময়ের প্রয়োজনে সময় বদলায়। তেমনি সময়ের সঙ্গে চলতে গিয়ে বদলায় মানুষের প্রয়োজন ও রুচি। আর এই বদলটা বেশি পরিলক্ষিত হয় খুব দ্রুত যাদের প্রয়োজন বদলায়। অর্থাৎ এই সময়ের আধুনিক তরুণ-তরুণীদের। কয়েক বছর আগের কথা। তখন কিন্তু আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের ঈদের আবদারগুলো ছিল পোশাক আশাকের গ-ির মধ্যে। সময়ের অল্প ব্যবধানে প্রযুক্তির সাফল্য ও বিশ্বায়নের চেতনায় তাদের জীবনযাপন এবং প্রয়োজনের আবদারগুলো হয়েছে সময়োপযোগী। তাই তো আজকাল রাজধানী এবং মফস্বল সব জনপদেই মুখ্য এখন জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক বস্তুর। এখনকার তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন উৎসব পালনে পোশাক-আশাকের থেকে বেশি আগ্রহী প্রযুক্তিনির্ভর শখের ইলেকট্রিক ডিভাইস পেতে। কেননা সময়ের প্রয়োজনে প্রযুক্তি, ও এর তরুণ-তরুণীদের কাছে মৌলিক চাহিদার সমতুল্যে পরিণত হয়েছে। তাই তো ধর্মীয় বা পারিবারিক উৎসবে তাদের আবদার থাকে প্রযুক্তিনির্ভর ইলেকট্রিক ডিভাইসগুলোর প্রতি। ঈদের কেনাকাটায় পোশাকের দোকানগুলোতে যেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়, তেমনি ইলেকট্রিক ডিভাইস বিক্রির দোকানগুলোতেও তেমন ভিড় দেখা যায়। হয়ত সময় এবং প্রযুক্তি তাদের আজ বাধ্য করছে তা করতে। তাই তো নতুন সুতি পাঞ্জাবি-পায়জামার পরিবর্তে তারা এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ্লিকেশনের আপটু ডেট ভার্সন, কিংবা উইনডোজ এ্যাপ্লিকেশনের লেস্টেট ভার্সনে বেশি আগ্রহী। অনেকে সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকে নতুন ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ কম্পিউটার কেনার জন্য। সঙ্গে শখের ফটোগ্রাফির ডিজিটাল ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি। ফ্যাশন হাউসগুলোতে বাহারি পোশাকের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ বা অফারযুক্ত ইলেকট্রিক পণ্যের বিজ্ঞাপনও লক্ষণীয়। এ প্রসঙ্গে কথা হয় এ সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আধুনিক তরুণী অনিমা আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আসছে ঈদে নতুন কোন পোশাক নয়, তার ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি বদলাবেন। কিনবেন এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ্লিকেশনের সবশেষ ভার্সন। তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজনে ডিজিটাল চিন্তাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়Ñ না হলে সময় থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আর নতুন পোশাক এ আর এমন কি ব্যাপার, সারা বছরই এর সুযোগ থাকে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে পরিবারের কাছে আবদার থাকে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয়ের। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও বিশ্বায়ন জীবনযাপনের অন্যান্য পরিবর্তনের সঙ্গে ঘটিয়েছে রুচির পরিবর্তনÑ আর এটাই হয়ত বর্তমানের দাবি।
×