নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ২০ জুন ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামীসহ শশুরবাড়ির লোকজন সুমি আক্তার (২২), রাহিমা বেগম রুমি (২৯) ও শেফালী বেগম (২৬) নামে তিন গৃহবধূর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এ সময় দুইজনকে গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সোমবার দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ হাটাব, ব্রাহ্মণখালী ও পিতলগঞ্জ ভক্তবাড়ি এলাকায় ঘটে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা। নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তার মতলব থানার ফেইল্লাকান্দি এলাকার এরশাদ খানের মেয়ে, রাহিমা বেগম রুমি উপজেলার ব্রাহ্মণখালী এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ও শেফালী বেগম রূপগঞ্জ সদর এলাকার হেলাল মিয়ার মেয়ে। এরশাদ খান জানান, ৪ বছর আগে রূপগঞ্জ থানার হাটাব এলাকার আমির হোসেনের ছেলে জসীমের সাথে তার মেয়ে সুমি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তিনি তার মেয়েকে ঘরের আসবাবপত্র ও ফ্রিজসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল প্রদান করে। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী জসীমসহ আল-আমিন, হাজেরা বেগম, পাখি বেগম ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সুমি আক্তারের কাছে। যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করলে সুমি আক্তারকে বাড়িতে আটক রেখে তার পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। সুমি আক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ কারতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মেয়ের কথা জানতে চাওয়া হলে তারা কিছু জানে না বলে জানায় সুমি আক্তারের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। স্বামী জসীমসহ আল-আমিন, হাজেরা বেগম, পাখি বেগম গৃহবধূ সুমি আক্তারকে পিটিয়ে আহত করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বর্তমানে সুমি আক্তার নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপরদিকে রাহিমা বেগম রুমি জানান, ১০ বছর আগে ঢাকা জেলার মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত কাশেম মিয়ার ছেলে আজিম মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকেই তারা উপজেলার পিতলগঞ্জ এলাকায় বসবাস করে আসছেন। বিয়ের বেশ কিছুদিন পর থেকেই স্বামী আজিজ মিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাকে মাদক সেবনে বাধা দিলে রাহিমা বেগম রুমিকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দিতে বলেন। টাকা এনে দিলে আরও বেশি মাদক সেবন করতে শুরু করেন। সোমবার দুপুরে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় আজিজ মিয়া তাকে গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শেফালীর বাবা হেলাল মিয়া জানান, দুইবছর আগে উপজেলার বাড়িয়াছনি এলাকার ফারুক মোল্লার ছেলে শওকত মিয়ার সাথে তার মেয়ে শেফালী বেগমের সাথে বিয়ে হয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জামাতা শওকত মিয়াকে একটি অটোরিক্সা কিনে দেন হেলাল মিয়া। বিয়ের কিছুদিন পরেই তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর থেকেই শওকত মিয়া বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করতে শুরু করেন। সোমবার দুপুরে মাদক কেনার টাকা না পেয়ে শেফালী বেগমকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে বলে। টাকা এনে দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় শেফালী বেগম। এক পর্যায়ে স্বামী শওকত মিয়াসহ ফারুক মোল্লা ও সাফিয়া বেগম তাকে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এক পর্যায়ে স্বামী শওকত মিয়া শেফালী বেগমকে গলাটিপে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে।