ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

দাতাদের সীমাহীন শর্তে স্বাস্থ্য খাতে যথাযথ উন্নয়ন ঘটছে না

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২০ জুন ২০১৬

দাতাদের সীমাহীন শর্তে স্বাস্থ্য খাতে যথাযথ উন্নয়ন ঘটছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেশি শর্ত জুড়ে দেয়ায় বিদেশী দাতাদের অর্থ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, দেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে সরকার। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার। বিদেশী দাতাদের অর্থ সঠিক সময়ে দেশের প্রেক্ষাপট ও নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অসংখ্য শর্তের বেড়াজালে আটকে থাকে দাতাদের অর্থ। অনেক ক্ষেত্রে তাদের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে উন্নয়ন ঘটানোর চেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়তে হয়। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। রবিবার রাজধানীর বিএমএ সভাকক্ষে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ : প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও নির্বাহী সদস্য শিশির মোড়ল। দেশের সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সীমিত সম্পদ দিয়ে দেশের প্রতিটি সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল উপকরণ সরবরাহ করে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু কিছু কিছু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের ম্যানেজারিয়াল অদক্ষতায় ওই সব উপকরণ সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ব্যবহৃত হয় না। অনেক হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে থাকলেও অনেক সময় স্বল্পমূল্যের অতি দরকারি মেডিক্যাল উপকরণ থাকে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পরিচালনা সংক্রান্ত অদক্ষতার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। আর সাধারণ লোকজন হাসপাতালে গিয়ে ওই স্বল্পমূল্যের মেডিক্যাল উপকরণ না পেয়ে ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না। এতে সরকারের দুর্নাম হয়। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক আশীর্বাদে অনুমোদন পেয়ে শর্ত মানছে না অনেক মেডিক্যাল কলেজ। সেগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ব্যবস্থা নিলেই শুরু করে দেয় হৈচৈ। আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ এনে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সম্মিলিত উদ্যোগেই এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করে সফলতা পাওয়া সম্ভব। মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারী হাসপাতালগুলোর উচিত হবে চিকিৎসা খরচ কমিয়ে আনা। জটিল রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর চিকিৎসা মাঝপথে থেমে যায়। নেমে আসে অনিবার্য মৃত্যু। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধ শিল্পে উন্নতি লাভ করলেও কিছুসংখ্যক কারখানার ভেজাল, নিম্নমান ও অনুমোদনহীন ওষুধ দেশের সুনাম নষ্ট করছে। এসব বন্ধ করতে সরকারী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জনবল সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় দেড় লাখ পদ খালি রয়েছে। নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে আইনী জটিলতায় আটকে পড়ে নিয়োগ কার্যক্রম। খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্য খাতের সব ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিং চালু করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্যের সব দিক বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ দেয়া উচিত। ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন (নিরাময়মূলক) ও সামাজিক উপাদান (প্রতিরোধমূলক) উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়ে বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা দরকার। সীমিত বরাদ্দ দিয়েই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে অর্জিত সুনাম অব্যাহত রাখতে এবং গৃহীত পরিকল্পনাসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতেই হবে। সম্প্রতি প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট অর্থের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও সার্বিক বিবেচনায় তেমন বাড়েনি। স্বাস্থ্য খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আগামী বাজেটে অনুন্নয়ন-উন্নয়ন মিলে মোট ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা মোট বাজেটের ৪.৩০ শতাংশ। আর গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সার্বিক উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে এ খাতের জন্য ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা মোট বাজেটের ৪.৪৫ শতাংশ ছিল। এর আগে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের ৪.৮৬ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ মোট জাতীয় বাজেটের প্রায় ৫.১ শতাংশ মাত্র। কিন্তু সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত স্বল্প অর্থ বৃদ্ধি উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারবে না।
×