ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ জুন ২০১৬

গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান গুপ্তহত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটই যে পরিকল্পিতভাবে এসব গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে মাদারীপুরের ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে একজন শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে এক শিবির কর্মী ধরা পড়েছে। জনগণই তাকে ধরেছে, আগামীতেও ধরবে। তাই যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, হুমকি-ধমকি দেয়া হোক না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউই রুখতে পারবে না। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ হত্যা করা বিএনপির চরিত্র। আন্দোলনের নামে প্রকাশ্য মানুষকে পুড়িয়ে মারার পর এখন গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। কিন্তু কোন বাধাই দেশের অগ্রগতিকে থামাতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাফর ওয়াজেদ, মহাসচিব ওমর ফারুক ও ডিউজের সভাপতি শাবান মাহমুদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী। ইফতার মাহফিলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিকসহ সারাদেশ থেকে আগত সংগঠন দুটির বিপুল সংখ্যক সদস্য যোগ দেন। ইফতার মাহফিলে সাংবাদিক নেতারা সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা এবং আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমরাই সাংবাদিকদের জন্য ৭ম ও ৮ম ওয়েজবোর্ড দিয়েছি। যেহেতু গণমাধ্যম বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। সেহেতু ৯ম ওয়েজবোর্ডের জন্য তথ্যমন্ত্রীকে বলব মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। যথাযথ ব্যবস্থা নিন। আর আবাসনের জন্য সাংবাদিক নেতাদের উপযুক্ত জায়গা বের করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা জায়গা বের করুন, সরকার অবশ্যই আপনাদের সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাবকেও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে সরকার থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ইফতার মাহফিল শেষে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাবে নামাজ আদায় শেষে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ-চারিতায় মেতে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবারকে হত্যার বারংবার চেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, আমার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকি দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে- “তোর নানাকে যেভাবে মেরেছি, ঠিক তেমনিভাবে তোর মা-খালা ও তোকে মারা হবে।’ এমন হুমকির পর সেখানে এক ব্রিটিশ এমপিকে হত্যার ঘটনা ঘটল। শুধু টিউলিপ নয়, জয়কেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই এক অফিসারকে কিনে ফেলেছিল জয়কে অপহরণ করে খতম করতে। আর এটা করেছিল বিএনপিরই নেতারা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) এর আগে বলেছিলেন, তিনি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চান। এর অর্থ হলো আমাকে উনি খুন করতে চান। বিএনপি নেত্রী আরও বলেছিলেন- আগামী এক শ’ বছরে আমি প্রধানমন্ত্রী কেন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। এর অর্থও হলো উনি আমাকে জীবনে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছিলাম, দেশে যে গুপ্তহত্যা চলছে সে ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য আছে। সেটা আজ প্রমাণিত হয়েছে। মাদারীপুরে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। জনগণ হাতেনাতে এক শিবির কর্মীকে ধরেছে। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রকাশ্য মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার পর এখন বিএনপি-জামায়াতই এসব গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। দেশের জনগণই এখন গুপ্তহত্যাকারীদের ধরতে শুরু করেছে, আগামীতেও ধরবে। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, আমরা চাই না জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এ দেশে চলুক। বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। যতই হুমকি-ধমকি দেয়া হোক না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলবে, দেশও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তারেক রহমানের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে এক কুলাঙ্গার বসে আছে। ব্রিটিশ সরকার কেন যে তাকে সেদেশে থাকতে দেয়, ভিসা দেয়- তা জানি না। ব্রিটিশ এক এমপিকে হত্যা করা হলো, আরেক এমপি টিউলিপকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এভাবেই দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে তারা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। স্বাধীনতা ভোগ করা ভাল, কিন্তু সাংবাদিক সমাজেরও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। সাংবাদিকদের কল্যাণে যা কিছু করা হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের গ্রেফতার না করতে ফৌজদারী আইন সংশোধন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, দুস্থ সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতের কোন সরকার বেসরকারী টিভি চ্যানেল দিতে সাহস পায়নি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই আমরা টিভি চ্যানেলকে বেসরকারীখাতে ছেড়ে দিয়েছি, এতে করে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকসহ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ও বেসরকারী টেলিভিশনের টক শো এক নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে আমাদের সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি মেনে কথা বলতে হয়। আর টক শোতে লাগাম ছাড়াও কথা বলা যায়। আপনারা টক শোতে সরকারের সমালোচনা অবশ্যই করবেন, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেবেন, কিন্তু সেই সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া উচিত। আপনাদের কথায় যেন সমাজের কল্যাণ হয়, অসংলগ্ন যেন না হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে সম্প্রতি বিবিসি বাংলায় ভুল সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, গণমাধ্যমেরও একটি নীতিমালা থাকা দরকার। সবাইকে নীতিমালা মেনে চলতে হয়। সম্প্রতি বিবিসির মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছে। এমন একটি আন্তর্জাতিক মাধ্যমের কাছে এটি মোটেই কাম্য ছিল না। প্রেসক্লাব সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাব একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি যাতে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে ওঠে, দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা যেন প্রেসক্লাবকে তাকিয়ে দেখে- সেভাবেই গড়ে তুলুন। এ ব্যাপারে সরকার থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
×