ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে শিক্ষক হত্যাচেষ্টা ॥ আটক ফাহিম ১০ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ জুন ২০১৬

মাদারীপুরে শিক্ষক হত্যাচেষ্টা ॥ আটক ফাহিম ১০ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১৭ জুন ॥ মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টায় ফায়েজুল্লাহ ফাহিমসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলো সালমান তাকসিন ওরফে সামিল (১৯), শাহরিয়ার হাসান পলাশ (২২), মেজবাহ (২৪), রায়হান (২৪), জাহিন (২৩)। এছাড়াও অজ্ঞাত একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে এসআই আইয়ুব আলী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪৫ (১৬-০৬-১৬)। এদিকে শুক্রবার দুপুরে আটক ফায়েজুল্লাহ ফাহিমের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ফাহিমকে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সদর থানার পুলিশ। আদালতের বিচারক মোঃ সাইদুর রহমান ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন কলেজের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার ঘটনায় দুই গ্রুপ অংশগ্রহণ করে। এতে সরাসরি অংশ নেয় ফায়েজুল্লাহ ফাহিম, তাকসিন সামলাম ওরফে সামিল এবং শাহরিয়ার হোসেন পলাশ। বাকিরা ব্যাকআপ টিম হিসেবে কাজ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মাদারীপুরের টার্গেট কিলিং শেষ করে অন্য জেলায় একই ধরনের মিশন পরিচালনা করা। কিন্তু ফায়েজুল্লাহ ফাহিম জনতার হাতে আটক হওয়ায় তাদের সে মিশন ব্যর্থ হয়। এ গ্রুপটি কি উদ্দেশ্যে কোন সংগঠনের হয়ে কিলিং মিশনে নেমেছে, তা এখনও অন্ধকারে। ফাহিম পুলিশের কাছে যেসব তথ্য দিচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর বলে জানা গেছে। সে নিজেকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরির সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছে। এটাও তার দেয়া সঠিক তথ্য কিনাÑ পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে। তাদের গ্রুপের ৩ জন ঘটনার ৩ দিন আগে মাদারীপুরে আসে বলে জানা গেছে। মামলায় যে ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে শুধু ফাহিমের নাম-ঠিকানা জানা গেছে। বাকি ৫ জনের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি। ফাহিমের পুরো নাম গোলাম ফায়েজুল্লাহ ওরফে ফাহিম, পিতা মোঃ গোলাম ফারুক, গ্রাম- দাড়িয়াপুর, উপজেলা ও জেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা বাড়ি নং-১২৯, লেন-৫, টিআইসি কলোনি, দক্ষিণখান, ঢাকা। সে বাড়ি থেকে সিলেট হয়ে মাদারীপুরে আসে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। আটক ফাহিমকে নিয়ে পুলিশের একাধিক টিম বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালায়। এতে বিশেষ কোন তথ্য বেরিয়ে না আসায় এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মাদারীপুর সদর থানা থেকে ১২ সদস্যের একটি টিমসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছে। মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত ফাহিমসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলেছে। অধিকতর তথ্যের জন্য শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ফাহিমকে মাদারীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ^বিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী (৪০) বুধবার কলেজের পরীক্ষার কাজ শেষে কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন ভাড়া করা বাসায় চলে যান। ওই বাসায় তিনি একাই থাকেন এবং বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে তার বাসার দরজায় নক করে ৩ যুবক। দরজায় নক করার শব্দ শুনে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী দরজা খোলামাত্রই ৩ জন সন্ত্রাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তার আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা দৌড়ে প্রধান সড়কে গিয়ে একটি ইজিবাইকে চড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের সহায়তায় কলেজের স্টাফ মিরাজ ফায়েজুল্লাহ ফাহিম নামের এক সন্ত্রাসীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এদিকে স্থানীয়রা ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
×