ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

ঈদের আনন্দ কেনাকাটায়

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১৭ জুন ২০১৬

ঈদের আনন্দ কেনাকাটায়

ভার্সিটিতে দুষ্টু শিরোমণি হিসেবে রাহাতের বেশ নাম ডাক ছিল, কথাগুলো বলেই হো হো করে হেসে উঠল হিমেল। ক্লাসের মেয়েরা তো ওকে দেখলেই আতঙ্কে থাকত এই না জানি কি করে বসে.. কথাগুলো হিমেল বলছিল সঙ্গে থাকা তার স্ত্রীকে উদ্দেশ করে। এরপরই পরিচয় করিয়ে দেয় রাহাতের সঙ্গে। অনেকদিন পর দুই বন্ধুতে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় শপিংমলে। অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় প্রথম দেখাতেই একে অপরকে চিনতে একটু সময় নেয়। তবে সে সময়টা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। চেনা মাত্রই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে ফেলে। শুরু হয়ে যায় স্মৃতিচারণ। মূল উদ্দেশ্য যে ঈদ শপিং তা যেন অনেকটাই মাথা থেকে সরে যায় দু’বন্ধুর। চলতে থাকে বর্তমান সময় ও পারিবারিক খোঁজখবর নেয়া। ঈদ শপিং করতে এসে দুজনই যে এমন নস্টালজিক হয়ে পড়বে তা ভাবতে পারেনি কেউ। ঈদ কেনাকাটার আনন্দের সঙ্গে এ আনন্দ যেন বোনাস। সত্যিকার অর্থেই ঈদ শপিং যেন ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ মার্কেট থেকে ও মার্কেট ঢুঁ মারা কিংবা দলবেঁধে শপিং করা সবই যেন চোখে পড়ে ঈদ এলেপরে। ঈদের আমেজ এখন বাংলার প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি পরিবারে। যার ঢেউ এসে পড়েছে পথে, শপিংমলে। ঢাকার মার্কেটসহ সারাদেশে চলছে এখন ঈদের তুমুল উৎসবমুখর গুঞ্জরণ। বিশেষ করে কেনাকাটার ধুম লেগেছে ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে বিভিন্ন শপ হাউসে। এই ধুম চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। ঈদকেন্দ্রিক সবার ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো। ধনীশ্রেণীর বিলাসিত এবং মধ্যবিত্তের বাড়তি ব্যয়ের যেন জুড়ি নেই ঈদ এলে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে চাইলেও ঈদ এলে অনেকে ভুলেই যান এ কথা। ধারণা করা হচ্ছে এবারের ঈদ লেনদেন ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সারা বিশ্বব্যাপী ঈদ পালিত হলেও আবহমান এই বাংলায় ঈদের আমেজটাই যেন অন্যরকম। এক ধরনের মেলবন্ধন সূচিত হয় সবার সঙ্গে। তৈরি হয় হৃদ্যতা। যা বহন করে অন্যরকম এক আবহ। এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের বারতা। সে আনন্দ পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করার মধ্যে অন্যরকম এক ভাললাগা লুকায়িত থাকে। ঈদকে উপলক্ষ্য করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে শপিংয়ে যাওয়াও যেন আনন্দের মাত্রা বেড়ে যেন আরও দ্বিগুণ হওয়া। এ কারণেই শপিংমলগুলাতে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ কাজে নারীরা বেশ সিদ্ধহস্ত। তা ছাড়া ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্টের মতো গুরুদায়িত্ব নারীরা ভাল বোঝেন বলেই হয়ত নিজ থেকেই কেনাকাটার দায়িত্ব নেন। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে শপিংমলগুলো। পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী শপিং সেন্টার ছাড়াও নতুন নতুন শপিংমলেও ক্রেতাদের আনাগোনা এবার লক্ষণীয়। বেশ কবছর ধরেই প্রচুর ক্রেতার সমাগম এবং সমাদৃত মার্কেট গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, মৌচাক ছাড়াও ক্রেতারা একটু স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে ঝুঁকছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, কনকর্ড টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিংমল, জিনেটিক প্লাজা, হ্যাপি আর্কেড, ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন দেশীয় প্রোডাকশন হাউসগুলো যেমন আড়ং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, ওজি, নাগরদোলা, রঙ, নিপুণ, সুতি, সাদাকালো দেশাল, আরও অনেকে তাদের নিজ নিজ শোরুমগুলো শীতাপত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ইন্টোরিয়র ডিজাইনে এনেছে ভেরিয়েশন, যা ক্রেতাদের খুবই আকৃষ্ট করেছে। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে শপিংমলগুলো সেজেছে আপন মহিমায়। ঈদ উপলক্ষে রাতের বেলায় কোন ধরা বাধা সময়ের বেড়া নেই। নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থাপনায় যতক্ষণ ক্রেতা সাধারণ মার্কেটে থাকবে ততক্ষণ মার্কেট খোলা রাখা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দোকান মালিক সমিতি। ক্রেতাদের কেনাকাটায় সুবিধা দেয়ার জন্য বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস একত্রিত হয়ে এক ছাদের নিচে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে ক্রেতারা এক জায়গাতেই পরিচিত শোরুমগুলোর দেখা পাবেন। একেক জায়গায় একেক শোরুম খুঁজে বের করে কষ্ট করে কেনাকাটা করার দিন শেষ। এখন ঝামেলাহীনভাবে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারবেন। যেমন দেশী দশ, স্বদেশী, সাতআনা ইত্যাদি এসব শোরুমগুলো একত্রিত হয়ে এ ধরনের নাম ধারণ করেছে। এক জায়গাতে প্রবেশ করলে মোটামুটি সব ধরনের কেনাকাটা করে ফেলা সম্ভব। বারো মাসে তেরো পার্বণে অভ্যস্ত বাঙালী শুধু উৎসব উদ্যাপনে ব্যস্তÑ এ কথা অতীত হয়েছে অনেক আগেই। বাঙালী এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হয়ে উঠেছে ফ্যাশন সচেতন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পাওয়া যায় ফ্যাশনের ছোঁয়া। চলমান এ ধারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিটি উৎসবে-আমেজে ফ্যাশনের প্রভাব বিদ্যমান। আর সারা বিশ্বে উৎসবমুখর জাতি হিসেবে বাঙালীর আলাদা একটি পরিচয় রয়েছে। যে কোন উৎসবে নিজেদের মেলে ধরতে কার্পণ্য করে না। উৎসবের রঙে রঙিন করে তোলে উৎসবের আকাশকে। যে কোন উৎসবেরই একটা প্রস্তুতি থাকে। উৎসবকে সফল করে তুলতে বাড়তি কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন। উৎসবের ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতির ধরনও পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়। তেমনি এক বাড়তি প্রস্তুতি নেয়ার উৎসব হচ্ছে ঈদ। একেবারেই দ্বারপ্রান্তে কড়া নাড়ছে রোজা। আর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে রোজার ঈদ হচ্ছে বড় একটি উৎসব। এই ঈদকে ঘিরে প্রস্তুতির যেন অন্ত নেই। রীতিমতো কেনাকাটার হিড়িক পড়ে যায় তা সে তৈজসপত্র হোক বা জামাকাপড়। তবে রোজার ঈদে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় যে বিষয়টি তা হচ্ছে পোশাক-পরিচ্ছদ কেনাকাটা। পোশাক বিক্রেতারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। শপিংমলগুলোতে ছড়িয়ে যায় অন্যরকম এক আবহ। ক্রেতারাও বেশ খোশমেজাজে ঘোরাঘুরি করে শপিংমলগুলোতে। হুড়োহুড়ি করে, ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করলেও এ আনন্দ যেন ম্লান হবার নয়। যে কারণে ঈদকেন্দ্রিক সময়ে পোশাক ব্যবসায়ীদের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। তবে শুধু পোশাক নয়, ফ্যাশনের যাবতীয় উপকরণ নিয়েই চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। তেমনি একটি উদ্যোগ হচ্ছে ঈদমেলা। ঈদকে উপলক্ষ্য করে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পরিচালিত হচ্ছে ঈদমেলা। বর্তমানে মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আইটেমের পসরা সাজিয়ে থাকে ব্যবসায়ীরা। এক কথায় ক্রেতাদের যা দরকার তার সবই পাওয়া যায়। ঈদমেলা রোজার ঈদকে সামনে রেখে মেলাগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে। এবার ঈদে প্রাধান্য পাচ্ছে বর্ষকাল। বৃষ্টিভেজা সময় এবং গরম এই দুই মিলিয়ে সিলেক্ট করা হয়েছে কাপড়। এ প্রসঙ্গে বেইলি রোড ঈদ জামদানি মেলার উদ্যোক্তা মোঃ আমিন জানান গরমকে প্রাধান্য দিয়ে এবারের মেলায় কাপড় এবং ডিজাইন সিলেক্ট করা হয়েছে। শাড়ির মধ্যে রয়েছে জামদানি, মসলিন এবং সিল্ক। ডিজাইনেও রয়েছে বেশ ভেরিয়েশন। কারচুপি, হাতের কাজ ছাড়াও নকশী ডিজাইনের বেশকিছু শাড়ি রয়েছে। মোট স্টল রয়েছে ৮৫টি। এর মধ্যে শুধু জামদানি শাড়ি কেন্দ্র করে স্টল রয়েছে ১৮টি। আর নারী উদ্যোক্তাদের স্টল রয়েছে ১৫টি। মেলা প্রসঙ্গে আরেক উদ্যোক্তা ওসমান গনি বলেন, ঈদ উৎসবকে আরও বেশি গতিশীল করতেই মেলার উৎপত্তি। ক্রেতারা মেলায় আসলে শপিংমলের চেয়েও ভিন্ন কিছু টেস্ট পাবেন। যেমন এ মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাক-আশাক এবং তৈজসপত্র ছাড়াও বিভিন্ন কুটির শিল্পের দেখা পাবেন। যা সহজেই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। আশা করি মেলার আয়োজন ক্রেতাদের ভাললাগবে। ঈদকে উপলক্ষ্য করে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে চলছে ঈদমেলা। যার প্রয়োজনীয়তা এবং কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবার আগে চাই শিশুদের পোশাক বাবার হাত ধরে হেঁটে যাওয়া শিশুটিও ঈদ এলে যেন নিজেরে পছন্দের মর্ম বোঝাতে চায়। মুখ দিয়ে ঠিকমতো কথা বলতে না পারলেও শপিংমলে ঢুকে নিজ পছন্দটি হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দেয। আর তা যদি মানা না হয় তাহলে তো কম্ম সাবার। কেঁদে কেটে পুরো শপিংমল এক করে ফেলবে। বর্তমানে সব শিশুই কার্টুন দেখে অভ্যস্ত। কার্টুনের মজার মজার চরিত্রগুলোর ভেতর শিশুরা যেন একেবারে হারিয়ে যায়। এক সময় তারা কল্পনায় নিজেদের ওইসব চরিত্র হিসেবে ভাবতে শুরু করে। ফলে কার্টুনের প্রিয় চরিত্রগুলোর পোশাক হাতে পেলে তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। আর তাই শিশুদের মন যোগাতে বড় বড় পোশাক প্রস্তুতকারীরা তৈরি করে থাকে বিভিন্ন কার্টুনের আদলে কস্টিউম। বিদেশে হ্যালোউইন উৎসবকে সামনে রেখে প্রচুর কস্টিউম প্রস্তুত হয়ে থাকে। এবং বিক্রিও প্রচুর। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও বাচ্চাদেও পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মজাদার কস্টিউম বাজারে নিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ঘোস্ট, ড্রাকুলা, ব্যাটম্যান, ডরিমন, পাপাই, সিনড্রেলা, কিংকুইন, রেড রাইডিংহুড অন্যতম। মেয়েদের পরীর বা ফ্রেইরির ড্রেসে লাগানো পাখা সহজেই আকৃষ্ট করে। এছাড়াও নান্দনিক ফ্রক, গেঞ্জি সেট, পাঞ্জাবি দ্যুতি ছড়াচ্ছে আপন মহিমায়। পাখি নেই রয়েছে কিরণমালা পাখি নিয়ে গত কয়েক বছর হৈ হুল্লোড় তো কম হয়নি। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। বেশ সাড়া জাগিয়েছিল পাখি ড্রেস। তবে এবারে তেমন সরগরম নয় পাখি। সে জায়গা দখল করেছে কিরণমালা। আরও যুক্ত হয়েছে সানামজে, বাজিরাও মাস্তানি, ঝাঝা ও সুলতান সুলেমান ড্রেস। বিশেষ করে ছেলেদের পাঞ্জাবি কিংবা সেরোওয়ানির নামকরণ করা হয়েছে সুলতান সুলেমান। পছন্দের তালিকায় আড়ং এর তাগা বর্তমান সময়ের তরুণীদের তাগা বা কুর্তা বেশ পছন্দের। টপসের ভেরিয়েশনই আড়ং এ তাগা হিসেবে আক্ষায়িত। জিন্সের সঙ্গে এ তাগা ( টপস্) বেশ মানানসই। ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে সহজেই মিলে যাবে পছন্দসই তাগা। এছাড়া আড়ং এ অন্য পোশাকের পাশাপাশি হাউসহোল্ড প্রোডাক্টের বেশ চাহিদা। ডাইনিং টেবিল থেকে ড্রয়িংরুম পর্যন্ত সাজাতে যা দরকার সবই পাওয়া যাবে এখানে। এছাড়াও বেডশিট, পর্দা, ওভেন কভার, হ্যন্ড গ্লভস, কোস্টার, নকশী টেবিল ক্লথ, হ্যান্ডস্টিচ নকশীকাঁথা যেন বাড়তি দ্যুতি ছড়াচ্ছে। এগিয়ে জামদানি শাড়ি দিন দিন অন্যান্য শাড়ির সঙ্গে টেক্কা দিয়ে সবার নজর যেন জামদানি শাড়িতে গিয়ে ঠেকছে। একটা সময় ঈদ পার্বণে বেনারসি শাড়ির হিড়িক থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে সে ধারা অনেকটাই পাল্টেছে। সব আবহাওয়া উপযোগী বলে হয়ত জামদানি সবার পছন্দের। এছাড়া ডিজাইন ভেরিয়েশন জামদানিকে করেছে আকর্ষণীয়। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করা ডিজাইনার, মনেমন্টু শাড়ি হাউসের কর্ণধার মনেমন্টু বসাক বলেন, জামদানির চল আগের থেকে এখন অনেক বেশি। আর বর্তমানের কালার ভেরিয়েশন ক্রেতাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া যে কোন উৎসব কিংবা পরিবেশে জামদানি শাড়ি অনায়াসে মানিয়ে যায় বলে দিন দিন কদর বাড়ছে এর। বর্তমান সময়ে আমরা উৎসব ভেদে জামদানির ডিজাইন কালার পছন্দ করে থাকি। যার ফলে যে কোন উৎসবে জামদানি একদম পারফেক্ট। লন ও পালাজ্জু প্রায় দুই দশক আগে ডিভাইডার নামক একধরনে সালোয়ারের প্রচলন ছিল। সে সময়ের তরুণীদের পছন্দের তালিকায় ছিল ডিভাইডার। সেই ডিভাইডারের বর্তমান ভেরিয়েশন হচ্ছে পালাজ্জু। ফ্যাশন সব সময়ই আবর্তিত হয়, পালাজ্জু তারই প্রমাণ। এছাড়া ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী লন কামিজগুলো যথারীতি তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। ডিজাইন ও মূল্য ভেদে দাম পড়বে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর পালাজ্জু ৭৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা। এই সময়ের এমনি একটি জনপ্রিয় পোশাক শর্ট পাঞ্জাবি। এর প্রচলন খুব বেশিদিনের নয়। খুব অল্পসময়েই জয় করে নিয়েছে তারুণ্যের হৃদয়। সাধারণ পাঞ্জাবির তুলনায় একটু শর্ট বিধায় এর নাম শর্ট পাঞ্জাবি। বাকি সব বৈশিষ্ট্য সাধারণ পাঞ্জাবির মতোই। শর্ট পাঞ্জাবির দামও হাতের নাগালেই। শর্ট পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে শুরু করে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের রয়েছে। ঘরে-বাইরে এমনকি উৎসব অনুষ্ঠানের হরহামেশা ফতুয়া পরিহিত তরুণ-তরুণীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ডিজাইন এবং কাপড় ভেদে লেডিস এবং জেন্টস ফতুয়ার মূল্য পড়বে ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা। তবে শর্ট পাঞ্জাবি, শর্ট কামিজ বা ফতুয়া যাই কিনুন না কেন, এই গরমে উৎসবের আনন্দ যেন ম্লান না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পোশাক নির্বাচন করতে হবে। এ সময়টায় ভাপসা গরম, সে কারণে যাই কেনা হোক না কেন কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতি এবং এন্ডিকটনকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। পাঞ্জাবি পাঞ্জাবি ছাড়া ঈদ কোন পুরুষ কল্পনাই করতে পারেন না। অন্য কোন পোশাক কিনুন বা না কিননু পাঞ্জাবি যেন কিনতেই হবে। এ কারণেই ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিবছরই পাঞ্জাবির ডিজাইন এবং রঙের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করে। ফ্যাশন হাউসগুলোর ভেতরে রীতিমতো প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। কোন্ হাউস কত ভাল ডিজাইনের পাঞ্জাবি তৈরি করবে এবং ডিজাইন ভেদে পাঞ্জাবির মূল্য একেক রকম। বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের পাঞ্জাবিও পাওয়া যায়। পাঞ্জাবি-পায়জামা সেট ৫৫০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর বড়দের পাঞ্জাবি পড়বে ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। পাঞ্জাবির সঙ্গে আর যে পোশাকটির কথা মনে আসে, তা তরুণীদের শাড়ি। যে কারণে ফ্যাশন হাউসগুলো নারীদের অন্যান্য পোশাকের পাশাপাশি শাড়িকে গুরুত্ব দেয় বেশি। বিভিন্ন মোটিফ ডিজাইনের শাড়ি ইতোমধ্যে শোরুমগুলোতে শোভা পাচ্ছে। শাড়ির কাপড় এবং ডিজাইনের রকমফেরও প্রচুর। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, হাফ সিল্ক, সুতির মধ্যে কোটা শাড়ি, সুতির শাড়ি এ্যাগ্রি কটন, রাজশাহী সিল্ক, বলাকা সিøক এমনকি মসলিন শাড়িও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। সুতির শাড়ি পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। সিফন জর্জেট পাথর বসানো শাড়ির মূল্য পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। টিস্যু কাপড়ের ডিজাইনের শাড়ির মূল্য ১ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। মসলিন ৩ হাজার ২০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। তাঁত ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। জামদানি ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। ঈদের কেনাকাটার আগে অবশ্য আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন। আর শিশুদের পোশাক নির্বাচনের বেলায় এ বিষয়টি তো আরও জরুরী। ওয়েস্টার্ন পোশাক দেশীয মোটিফের পাশাপাশি এ সময়ে পশ্চিামা ধাঁচের পোশাক অর্থাৎ ওয়েস্টার্ন পোশাক তরুণ প্রজন্মের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। আর চাহিদা মেটাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ওয়েস্টার্ন ড্রেসভিত্তিক শোরুম। এর মধ্যে রেক্স, সিলভার রেইন, ক্যাটস আই, ডিমান্ড, এক্সট্যাসি, লারিভ অন্যতম। জিন্স, টি-শার্ট, টপসের জন্য জনপ্রিয়তা পাচ্ছে শোরুমগুলো। এছাড়াও তারুণ্যের অন্যতম আরেকটি জায়গা হচ্ছেÑ আজিজ সুপার মার্কেট। এখানেও দেখা মিলবে ওয়েস্টার্ন- ইস্টার্ন পোশাকের সমাহার। দামও সাশ্রয়ী। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। এই খুশি যেন ম্লান না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কেনাকাটা করা উচিত । ঈদের আনন্দ কেনাকাটার মধ্য দিয়ে ঝলমলে হয়ে উঠুক সেই প্রত্যাশাই রইল। ছবি : মানস সেন মডেল : ডালিম, সুহি, নাজির ও নিশাদ কোরিওগ্রাফি : পান্থ আফজাল
×