ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের সেবার মান বাড়াতে নতুন ৮ হাজার ৬শ’ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ জুন ২০১৬

রেলের সেবার মান বাড়াতে নতুন ৮ হাজার ৬শ’ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব

মশিউর রহমান খান ॥ আধুনিক প্রযুক্তির যোগাযোগ সেবা গড়ে তুলতে ও চলমান সেবার মান আরও বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সারাদেশ রেলের আওতায় আনতে, সকল বন্ধ স্টেশন চালু, নতুন রেললাইন নির্মাণ ও পুরনো লাইন সংস্কার করে রেলকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিবান্ধব ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে রেলসূত্র নিশ্চিত করেছে। সেবার মান বাড়ানোর অন্যতম শর্ত হিসেবে বর্তমান জনবলের সঙ্কট অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী এ সংস্থাটি। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব, প্রায় ১২ হাজার পদ শূন্য থাকা, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকাকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে সেবাদানকারী এ সংস্থাটি। প্রকৃতপক্ষে রেলওয়েকে যোগাযোগ সেবার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে চায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। যোগাযোগ ব্যস্থায় নতুনত্ব আনতে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে কাজ করতে চায় সংস্থাটি। বেরিয়ে আসতে চায় পুরোনো ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থেকে। রেলসূত্র জানায়, সম্প্রতি সংস্থাটি সরকারের কাছে নতুন করে ৮ হাজার ৬শ’টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে সেবাদানকারী এ সংস্থাটির চলমান ১৪টি বিভাগের বাইরে আরও ৫টি নতুন বিভাগ খোলারও সুপারিশ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে চলমান রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি রেলওয়ের জনবল কাঠামো পরিবর্তনের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারস (পিডব্লিউসি) সুপারিশ করে। রেলসূত্র জানায়, প্রস্তাবিত পদের মধ্যে কর্মকর্তা কর্মচারী উভয় পদের জনবলের কথা বলা হয়েছে। তবে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর পদে লোকবল বেশি সৃষ্টির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে কারিগরি শাখার জনবলের জন্য। প্রস্তাবে এসব জনবল সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ধাপে ধাপে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুপারিশের আগে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে মতামত নেয়া হয়। এ নিয়ে কয়েকটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কাঠামো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করে। এরই ভিত্তিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পিডব্লিউসির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রেলওয়েতে বর্তমানে মোট ১৪টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কারিগরি (মেকানিক্যাল), পরিচালন (অপারেশন), পুরকৌশল (সিভিল), মহাপরিচালকের কার্যালয়, হিসাব, বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল), সিগনাল এ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স, বৈদ্যুতিক (ইলেকট্রিক্যাল), রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), মেডিক্যাল, স্টোর, এস্টেট, পারসোনেল ও সাধারণ প্রশাসন। ১৯৯২ সালের হিসাব অনুযায়ী এসব বিভাগে অনুমোদিত জনবল রয়েছে ৪০ হাজার ২৬৪। সেবার মান বাড়াতে এসব বিভাগে আরও আট হাজার ৬শ’টি নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে। এতে পুরনো ১৪টি বিভাগে জনবলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ হাজার ২৫৮টি। প্রতিবেদনে এর বাইরে নতুন পাঁচটি বিভাগ সৃষ্টির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ডিজাইন এ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, প্রকল্প উন্নয়ন-পুরকৌশল, প্রকল্প উন্নয়ন-কারিগরি, লিগ্যাল সেল ও আইসিটি (ইনফরমেশন কমিউনিকেশন এ্যান্ড টেকনোলজি)। এসব বিভাগে নতুন করে ৬১০টি পদ সৃষ্টি করতে হবে। সব মিলিয়ে জনবল ৪৮ হাজার ৮৬৮-এ উন্নীত করতে হবে। রেলকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিবান্ধব ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতেই নতুন এ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে রেলসূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে রেলওয়ের অনুমোদিত জনবল কাঠামো ৪০ হাজার ২৬৪। বেশ কয়েক বছর নিয়োগ বন্ধ থাকায় অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী অবসরে চলে যাওয়ায় বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। তাই সেবার মান বাড়াতে অতি দ্রুত এসব পদসহ প্রস্তাবিত পদ পূরণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের সময়ে জনবল নিয়ে এনাম কমিটির রিপোর্টে রেল মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬৮ হাজার ৫০০ জন জনবল নিয়োগের কথা বলা হয়। তখন রেলওয়েতে কর্মরত ছিল ৫৮ হাজার জন। পরবর্তীতে সরকারের করা মোস্তাক কমিটির পক্ষ থেকে রেলের জনবল ৫৬ হাজার জন করা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯২ সালে ৪০ হাজার ২৬৪ জন জনবল রেলওয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়। যা বর্তমানে বহাল রয়েছে। রেলসূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর রেলওয়ের জনবল ছিল ৫০ হাজারের বেশি। ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকার গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় প্রায় ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে কর্পোরেশনে রূপান্তরের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে বর্তমানে অনেকটা দক্ষ কর্মীর অভাবে সমস্যাগ্রস্ত হয়ে আছে সংস্থাটি। জানা গেছে, সেবার মান বৃদ্ধি ও পরিচালনা ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনতে ২০০৬ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে এডিবি জনবল ও ভাড়া ব্যবস্থা সংস্থারসহ বেশকিছু শর্ত দেয়। এসব শর্ত পূরণ করা হলে এডিবির পক্ষ থেকে রেলওয়েকে বড় অঙ্কের ঋণের আশ্বাস দেয়। এরই প্রেক্ষিতে চলমান ভাড়া ব্যবস্থা সংস্কার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে রেলওয়ের জনবল কাঠামো পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মাথাপিছু জনবল অনেক কম। পাকিস্তানে রেল ট্র্যাক ১১ হাজার ৮৮১ কিলোমিটার ও জনবল ৭৮ হাজার। ভারতে মোট রেল ট্র্যাক রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫ কিলোমিটার। দেশটির রেলওয়ের জনবল ১২ লাখ। আর বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্র্যাক ৩ হাজার ৯৭৬ কিলোমিটার ও জনবল মাত্র ২৮ হাজার। সুতরাং রেলওয়ের জনবল বাড়ানোর অবশ্যই সুযোগ রয়েছে। বৈঠকে আরও বলা হয়, বর্তমানে রেলওয়ের অনুমোদিত জনবল কাঠামো ৪০ হাজার ২৬৪। যদিও বেশ কিছুদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় ও অনেকে অবসরে চলে যাওয়ায় প্রায় ১২ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। তাই সেবার মান বাড়াতে দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি অনুমোদিত জনবল বাড়িয়ে ৪৮ হাজার ৮৬৮তে উন্নীত করতে হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদ্যমান বিভাগগুলো আগের কাজই করবে। নতুন বিভাগগুলোর কাজও হবে সুনির্দিষ্ট। এর মধ্যে প্রকল্প উন্নয়ন- পুরকৌশল ও প্রকল্প উন্নয়ন- কারিগরি বিভাগে রেলওয়ের চলমান ও ভবিষ্যত প্রকল্পের বিষয়ে সমীক্ষা ও নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ করবে। ডিজাইন এ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন বিভাগ রেলওয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন সেল হিসেবে কাজ করবে। লিগ্যাল সেল রেলওয়ের জমি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আইনগত জটিলতা নিরসনে কাজ করবে। আর আইসিটি বিভাগ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। রেলসূত্র জানায়, যাত্রীসেবা বাড়াতে গেলে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ। যা বর্তমানে রেল কর্তৃপক্ষের নেই। এছাড়া রেলওয়েতে আলাদা পরিকল্পনা সেলের মাধ্যমে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের উদাহরণ অনুসরণ করার চিন্তা করছে। অপরদিকে প্রকল্প উন্নয়ন বিভাগ মূলত বিভিন্ন প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে কাজ করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশকে রেলের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে, সকল বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু করতে, নতুন রেললাইন নির্মাণ ও পুরনো লাইন সংস্কার করে রেলকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিবান্ধব ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতেই আমরা সরকারের কাছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমে নতুন এ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছি। আমরা চাই রেলওয়ে হউক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম আস্থার প্রতীক। তাই প্রস্তাবে নতুন আট হাজার ৬শ’ ৫টি পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এসব পদে জনবল নিয়োগ করা গেলে রেল হবে আধুনিক ও গতিশীল। বর্তমানে রেলওয়ের অনুমোদিত জনবল কাঠামো ৪০ হাজার ২৬৪। প্রস্তাবে পুরোনো ১৪টি বিভাগের বাইরে নতুন পাঁচটি বিভাগ সৃষ্টির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ডিজাইন এ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, প্রকল্প উন্নয়ন- পুরকৌশল, প্রকল্প উন্নয়ন কারিগরি, লিগ্যাল সেল ও আইসিটি। এসব বিভাগে নতুন করে ৬১০টি পদ সৃষ্টি করতে হবে। সব মিলিয়ে জনবল ৪৮ হাজার ৮৬৮-এ উন্নীত করতে হবে। এছাড়া বেশ কয়েক বছর নিয়োগ বন্ধ থাকায় অনেকে কর্মকর্তা কর্মচারী অবসরে চলে যাওয়ায় বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। তাই যাত্রীসেবার মান বর্তমানের চেয়ে বাড়াতে ও চলমান সেবা আধুনিক করার মাধ্যমে তা চালু রাখতে অতি দ্রুত এসব প্রস্তাবিত পদ পূরণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। মহাপরিচালক বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের নানা সরকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে মতামত নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত পদের মধ্যে কর্মকর্তা কর্মচারী উভয় পদের জনবলের কথা বলা হয়েছে। তবে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর পদে লোকবল বেশি সৃষ্টির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে কারিগরি শাখার জনবলের জন্য। সম্প্রতি প্রস্তাবটি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। প্রস্তাবে এসব জনবল সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ধাপে ধাপে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এটি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অনুমোদনের পর ধাপে ধাপে এসব পদে লোকবল নিয়োগ করা হবে। প্রস্তাবটি পাস হলে রেলের বর্তমান চেহারাই পাল্টে যাবে।
×