ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

‘স্বপ্ন দেখতে ব্যর্থ হয়ো না’

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৪ জুন ২০১৬

‘স্বপ্ন দেখতে ব্যর্থ  হয়ো না’

জন্মসূত্রে মানুষ সৃষ্টিশীল। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার সৃজনশীলতার প্রয়াস। একজন সৃষ্টিশীল মানুষই পারেন এ সৃজনশীলতাকে উপলব্ধি ও অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। জে. কে. রোলিং এমনি একজন সৃষ্টিশীল লেখক যিনি তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে আচ্ছন্ন করে রাখতেন পাঠকদের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাঁর ‘হেরি পটার’ সিরিজের বই গোগ্রাসে গিলেছেন মানুষ। তাঁর বইয়ের জাদুকরের কাঠির ছোয়ায় পাঠক হারিয়ে যেত কল্পনার রাজ্যে। বেস্ট সেলিং এসব বইয়ের চিত্রনাট্যে পরবর্তীতে তৈরি হয় হেরি পাটার সিরিজের সিক্যুয়াল সিনেমা। তেমনি এক স্বপ্ন র্স্পশীমানুষকে নিয়ে আজকের এই আয়োজন। জীবন স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং সাফল্যের বুকভরা নিশ্বাসের গল্প নিয়ে জে. কে রাওলিং নিজ থেকে শেয়ার করলেন জীবনের সব রূপ। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে এক দল তরুণ-তরুণীর মধ্যে প্রজ্জ্বলিত করলেন জীবনের জয়টীকা। বিশ্বনন্দিত এই সাহিত্যিক স্ক্রিপট রাইটার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। অনুষ্ঠানে তিনি বলেনÑ হার্ভার্ড কর্পোরেশনের সভাপতি, অনুষদের অধ্যক্ষ, গর্বিত বাবা-মা এবং সর্বোপরি বোর্ড স্নাতকদের আমার ধন্যবাদ। হার্ভার্ড আমাকে বিশেষ সম্মান দিয়েছে এ জন্য ধন্যবাদ। অবশ্য কয়েকদিন যাবত একটা চাপা ভয় কাজ করছিল। কখনও কখনও মনে হচ্ছিল ওজন কমে যাচ্ছে। সমাবর্তনে ভাষণ একটি মহান দায়িত্ব। যদিও এর মধ্য দিয়ে আমার মন ফিরে যাচ্ছে আমার স্নাতকের সমাবর্তনের সময়, আমাদের স্পিকার ছিলেন বিশিষ্ট দার্শনিক ব্যারোনেস মেরী ওয়ারনক। তার ওই বক্তৃতা অতিশয় সাহায্য করেছিল আমার লেখালেখির ক্ষেত্রে, যদিও আমি ওই দিনের একটি শব্দও এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। তোমরা দেখ, আমি আজ এসেছি ওয়ারনকের একটি বার্তা শেয়ার করতে, আর তা হলো জীবনের লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ ব্যক্তিগত উন্নয়ন। সত্যিকার অর্থে তোমাদের আজ কি বলা উচিত এই ভেবে আমি মনে প্রাণে বিধ্বস্ত। স্নাতক শেষে আমি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার ইচ্ছা কি, আমি কি চাই, কোন্টি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আমার এ ২১ বছর বয়সে। যার অভিজ্ঞতা অতীত এবং আজকের মধ্যে সমন্বয় করছি। আমি দুটি উত্তর নিয়ে এসেছি, আজকের এই বিস্ময়কর সুন্দর সমাবর্তনে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাদের বলব জীবনে ব্যর্থতার সুফল সম্পর্কে, যেটাকে আমরা প্রায়ই বলি কঠিন বাস্তবতা। আমি স্বপ্ন বা কল্পনার গুরুত্বের উচ্চ প্রশংসা করতে চাই। এটা ভাববিলাসী পছন্দ বলা যেতে পারে, কিন্তু আমি বলব আমার সঙ্গে তোমরাও একমত হও। একটু ফিরে তাকালে ২১ বছর বয়সে আমি স্নাতক শেষ করি। বর্তমানে আমার বয়সের প্রায় অর্ধেক বছর আগে সে সময় আমার অভিজ্ঞতা ছিল একটু অস্বস্তিকর, কিন্তু আমার উচ্চাশা, আমার স্বপ্ন স্পর্শ করার স্বপ্ন আমাকে লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে। একটা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও নিজেকে সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্নে আশ্বস্ত করেছিলাম। যাই হোক, প্রকৃতপক্ষে তোমরা হার্ভার্ড থেকে স্নাতক শেষ করেছ, অবশ্যই তোমরা নির্ভীক ও যোগ্য। সফল হওয়ার আকাক্সক্ষা তোমাদের অনেকদূর নিয়ে যাবে। অন্যদিকে তোমাদের ব্যর্থ হওয়ার ভয় সাধারণ মানুষের মতো সাফল্য এনে দেবে। সুতরাং অনেক উঁচুতে উড়তে হবে। আধুনিক ব্রিটেনে আমার বিবাহিত ছোট্ট জীবনে আমি গৃহহীন ও কর্মহীন ছিলাম। এক কথায় আমি ছিলাম বিগেস্ট ফেইলর। একটা লম্বা সময় অন্ধকারে পার করেছি। আমি জানতাম না কোথায় যাচ্ছি। কেবল জানতাম রাত গভীর হলে ভোর নিকটে আসে। এখন এখানে দাঁড়িয়ে আমি বলতে পারি ব্যর্থতা এক ধরনের তামাশা। পাশাপাশি এও বলতে পারি এর সুবিধাও ব্যাপক। এটা প্রায় অসম্ভব ব্যর্থতা ছাড়া সফল হওয়া। ব্যর্থতা আমার ভেতর নিরাপত্তা তৈরি করে ভবিষ্যতের জন্য, এবং অনেক কিছু শেখে আবিষ্কারের জন্য। এ জ্ঞান তোমাদের শক্তি ও সামর্থ্য যোগাতে সাহায্য করবে, দৃঢ় করবে মানসিকতা। সত্যজ্ঞান একটা পেইনফুল অবস্থা থেকে অর্জন করতে হয়। এখন আমি তোমাদের দ্বিতীয় উত্তর দিতে চাই, তাহলো স্বপ্নের গুরুত্ব। এটা জীবন পুনর্গঠনে সাহায্য করে, তবে সারা জীবন নয়। জীবনে এত কিছুর পর আমি যখন দুঃসহ সময়কে স্মরণ করি, তখন কেবল মনে হয় স্বপ্নই কেবল আমাকে বার বার ফিরে আসতে সাহায্য করছে। পড়ে গেলে বা হোঁচট খেলে স্বপ্নই তোমার হাত ধরবে। আমি তোমাদের দীর্ঘ সফল জীবন কামনা করছি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
×