ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যৌতুকের শিকার দুই গৃহবধূ হাসপাতালে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৪ জুন ২০১৬

যৌতুকের শিকার দুই গৃহবধূ হাসপাতালে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৩ জুন ॥ কলাপাড়ায় যৌতুকের দাবিতে সালিশের রাতেই এক সন্তানের জননী আকলিমা বেগমকে (৩৫) কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আকলিমার ভাই আনোয়ার হোসেন চিকিৎসার জন্য কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। বর্তমানে ওই গৃহবধূ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখমের চিহ্ন রয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের হাকিম গাজীর মেয়ে আকলিমার ৫ বছর আগে একই ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের কাশেম মৃধার ছেলে হোসেন মৃধার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে স্বামী হোসেন বিদেশে যাওয়ার জন্য আকলিমাকে বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। টাকা ঠিকই নেয় কিন্তু হোসেন বিদেশ যায়নি। ওই টাকা খরচ করে ফেলে। এরই মধ্যে আকলিমার কোলজুড়ে আসে এক কন্য সন্তান মিম, যার বর্তমান বয়স তিন বছর। ফের যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে হোসেন। এর পর আকলিমা স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন। ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকেলে এ নিয়ে সালিশ হয়। সালিশ শেষে ওই ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য মাহিনুর বেগম আকলিমাকে স্বামীর সঙ্গে ওই দিনই স্বামীর বাড়িতে দিয়ে আসেন। কিন্তু রাতে স্বামী হোসেন, শাশুড়ি রিজিয়া ও ননদ শিউলী বেগম তাকে ধারালো ছেনা দিয়ে কুপিয়ে ও মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। বরিশাল স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, যৌতুকের টাকা পরিশোধ না করা ও পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় পুলিশ কনস্টেবল স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহবধূ নূপুর বেগম (২০) জেলার বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যাশায়ী রয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ রবিবার রাতে নূপুরের নির্যাতনকারী তার পুলিশ কনস্টেবল স্বামী ও তার ভাইকে গ্রেফতার করেছেন। বানারীপাড়া উপজেলার চৌয়ারীপাড়া গ্রামের মৃত আঃ লতিফ খানের পুত্র শাহিন খান জানান, গত দেড় বছর পূর্বে তার বোন নূপুর আক্তারকে সামাজিকভাবে ঝালকাঠির নবগ্রাম ইউনিয়নের মুরাসাতা গ্রামের আব্দুস সালাম শরীফের পুত্র পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল শরীফের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। ফয়সাল বর্তমানে বাবুগঞ্জ থানার পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি আরও জানান, বিয়ের পর ফয়সালের দাবিকৃত যৌতুকের দুই লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু যৌতুক লোভী ফয়সাল অতিসম্প্রতি আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার বোন নূপুরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। এছাড়া ফয়সাল ঝালকাঠির কীর্তিপাশা গ্রামের মৃত মোবাক্কের মৃধার কলেজ পড়ুয়া কন্যা আসমা আক্তার আশার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এতে নূপুর বাধা দেয়ায় নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ৮ জুন সকালে ফয়সাল ছুটিতে বাড়িতে এসে নূপুরকে রড ও লাঠি দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। এতে সে (নূপুর) জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রায় চার ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে আসার পর ফয়সাল ও তার পরিবারের সদস্যরা নূপুরকে হত্যার উদ্দেশে বাসায় আটকে রাখে। বিষয়টি টের পেয়ে ওই এলাকার হালিম খান নূপুরকে কৌশলে উদ্ধার করে উজিরপুরের গুঠিয়া বন্দরে দিয়ে যান। খবর পেয়ে নূপুরকে তার পরিবারের সদস্যরা মুমূর্ষু অবস্থায় বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
×