ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ জুন ২০১৬

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আমরা মাহে রমজানের ১ম দশক অতিবাহিত করে চলেছি। আজ রমজানুল মোবারকের ৭ম দিবস। সিয়াম সাধনার এ মাসের সঙ্গে কিয়াম সাধনা বা নামাজের ব্যাপক অনুশীলনের অনুপ্রেরণা রয়েছে। এ মাসে রয়েছে বিশেষভাবে তারাবির নামাজ আদায় ও জামাতবদ্ধ হয়ে বিতির নামাজ সম্পন্ন করার বিধান। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক হারে মানুষ পাঞ্জেগানা নামাজ পড়ার জন্য মসজিদমুখী হয়। একজন মুসলমানের নৈতিক জীবনে পাঞ্জেগানা নামাজের কোন বিকল্প নেই। বস্তুত: আহকামে ইলাহী, তথা ঐশ্বরিক বিধানের হিকমত ও প্রজ্ঞার সামনে আমাদের সকলকেই মাথা ঝুঁকিয়ে দেয়া উচিত। এ অবিচল বিশ্বাস আমাদের থাকতে হবে যে, সালাত হলো বান্দার জন্য প্রেরিত আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ উপহার প্রধানতম ফরজ, দ্বীনের অন্যতম মূল স্তম্ভ নাজাত ও মুক্তির পূর্বশর্ত, ঈমানের অতন্দ্র প্রহরী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা সালাত কায়েম কর আর মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম: ৩১)। সূরা আ’লার ১৪-১৫ আয়াতে এসেছে : সফল ব্যক্তি সেই, যে পবিত্রতা অর্জন করেছে। আপন প্রতিপালকের নাম স্মরণে অত:পর সালাতে মগ্ন থেকেছে। প্রত্যেক সালাতের জন্যই আল্লাহ পাক সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর সময়সহ ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা নিসা: ১০৩)। অতএব নির্ধারিত সময় মতোই আমাদের সালাত আদায় করতে হবে। সালাতের সময়সমূহের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্ কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাত আঁধার হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করুন, আর ভোরের সালাতও। নিশ্চয় ফজরের সালাত (ফিরিশতাদের) উপস্থিতির সময়।-(সূরা বনী ইসরাঈল: ৭৮ ) সূরা ত্ব-হা’র ১৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে: আপন প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠে রত থাকুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং দিনের শুরু ও রাতের শেষে তাসবীহ পাঠ করুন: যেন আপনি সুখী হন।’ সময়ের অল্প অল্প ব্যবধানে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করার পেছনে নিহিত রয়েছে আল্লাহ তায়ালার বিরাট হিকমত। সালাতের এই বারংবারতা ও প্রাত্যাহিকতার মাধ্যমে মানুষ তার আত্মা ও রূহের জন্য লাভ করে পরিপূর্ণ ও পুষ্টিকর খাদ্য। তদ্রƒপ এতে রয়েছে কলব’কে সৃষ্টিবিমুখ ও স্রষ্টামুখী করে পার্থিব লোভ লালসা ও শয়তানের চতুর্মুখী প্ররোচনা থেকে হিফাজতের পরিপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দীস দেহলবী (রহ:) বড় সুন্দর লিখেছেন: মুসলিম উম্মাহ যদি প্রতিদিন বারবার জীবন ও কর্মের হাসাবা ও কর্মের পর্যবেক্ষণ অব্যাহত না রাখে, তবে এই উম্মাহর রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো কিছুতেই সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান প্রদানের মাধ্যমে মহা-প্রজ্ঞাবান আল্লাহ পাক সে ব্যবস্থাই করেছেন। আমাদের এ অভিজ্ঞতা আছে যে, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুত সালাতের নিয়ত করে শয্যা গ্রহণ করে সে অন্ততপক্ষে পশুর মতো নিশ্চিন্তে কিছুতেই ঘুমোতে পারবে না। তদ্রƒপ কারও অন্তর যদি সর্বদা সালাত ও অন্যান্য জিকির ইবাদতের চিন্তায় মগ্ন থাকে তবে তার ভেতরের পশুত্ব কিছুতেই তাকে কোন পাশবিক কর্মে লিপ্ত করাতে সফল হবে না।’ সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে- ঘুম থেকে জাগ্রহ হতে হতে যার মুখে কালিমা শাহাদাৎ, তাসবীহ ও তাহমীদ তথা পবিত্রতা ও প্রশংসাবাদ উচ্চারিত হয় সে যদি কোন দোয়া করে কিংবা অজু করে সালাত আদায় করে তবে তার দোয়া ও সালাত অবশ্যই কবুল হবে।” অতএব নির্ধারিত সময়ে আমাদের সালাত আদায় করতে হবে। সময়ের মতো সালাতের রাকায়াত সংখ্যা ও আল্লাহ পাক নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা অবশ্যই পালনীয়। কোন অজুহাতেই এর অন্যথা হতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (স.) ও তাঁর পুণ্যাত্মা সাহাবাগণ সালাতের সময় ও রাকায়াত সংখ্যা উভয়েরই যথাযথ পাবন্দি করেছেন জীবনভর। এমনকি জিহাদ ও যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও এ ব্যাপারে কোনরূপ শিথিলতা তারা প্রদর্শন করেননি। ইসলামী উম্মাহ সালাতের এই ইবাদত এমন নিষ্ঠা, যতœ, ব্যাপকতা ও ধারাবাহিকতার সঙ্গে পালন করে এসেছে যার তুলনা খুঁজে পাওয়া যাবে না পৃথিবীর কোন জাতির ইতিহাসে। উত্থান-পতনের অনেক নাজুক মুহূর্তই এসেছে ইসলামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে, এসেছে কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষার মুহূর্ত। কতবার সে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে গোটা জাতির ভাগ্যাকাশ। কিন্তু কোথাও কোন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতেই এক ওয়াক্তের জন্যও মুলতবি হয়নি আল্লাহ পাকের দেয়া এই সালাত। আসুন সিয়াম সাধনার পাশাপাশি পাঞ্জেগানা নামাজের বিষয়টিও আমরা হৃদয় দিয়ে অনুভব করি।
×