ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত ৫ বছর ধরে এ পদ্ধতিতে পাটের আবাদ করছেন কৃষকরা

কেশবপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাটের রোপা চাষ পদ্ধতি

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৩ জুন ২০১৬

কেশবপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে  পাটের রোপা চাষ পদ্ধতি

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ কেশবপুরে রোপা পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অল্প খরচে অধিক ফলন, সমান দূরত্বে রোপণের কারণে গাছ ছোট-বড় হওয়ার সম্ভাবনা কম ও পরিচর্চার সুবিধার কারণে আধুনিক এ পদ্ধতির পাট চাষ এলাকা ভেদে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে কৃষি বিভাগের ব্যাপক প্রচারণার অভাবে চলতি বছর এ উপজেলায় মাত্র এক হাজার হেক্টর জমিতে রোপা পদ্ধতির পাটের আবাদ হয়েছে। জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকে এ উপজেলায় পাটের আবাদ হয়ে আসছে। এক সময় পাটের ব্যবহার বেশি হওয়ায় একে সোনালী আঁশ বলা হতো। কিন্তু বর্তমান প্লাস্টিক ও নাইলনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ সোনালী আঁশের বাজারে ধস নেমেছে। এছাড়া সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে পাট বিক্রির ভরা মৌসুমে কৃষকরা এর ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাটের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এমন সময় এ উপজেলার কৃষকরা অল্প খরচে অধিক ফলন পেতে উদ্ভাবন করেন রোপা পদ্ধতির পাটের আবাদ। পরীক্ষামূলক আবাদে কৃষকরা বাম্পার ফলন পায়। উপজেলার মজিদপুর, মঙ্গলকোট, বিদ্যানন্দকাটি, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষকরা এ পদ্ধতির পাট চাষে ঝুঁকে পড়েছে। মজিদপুর গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, তিনি গত ৫ বছর ধরে এ পদ্ধতিতে পাটের আবাদ করছেন। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি আরও জানান, ১৫ চৈত্র বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধানের বীজ তলার মতো পাটের বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন করেন। ২২ দিন বয়সের চারা তুলে ক্ষেত তৈরি করে নির্দিষ্ট ব্যবধানে সেখানে পাটের চারা রোপণ করেন। চারার বয়স ১০ দিন হলে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করেন। তার পাট মাঠের মধ্যে সেরা হওয়ায় তিনি বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তবে পাটের বর্তমান বাজার দর যদি থাকে তবে তিনি লাভবান হবেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস বলেন, রোপা পদ্ধতির পাট চাষে বিঘা প্রতি ১৫ কেজি ডিএপি, ২০ কেজি এমওপি, ১৫ থেকে ২০ কেজি জিপসাম, ২ কেজি দস্তা ও ৫ থেকে ৮ কেজি ইউরিয়া সার চাষে প্রয়োগ করতে হয়। ৮-১০ দিন পর ১০ থেকে ১২ কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ পাট ১৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, এ বছর পাটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমি। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই ভাল বৃষ্টি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ হাজার ১৬০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। রোপা পদ্ধতির পাট আবাদ লাভজনক হওয়ায় কৃষক মাঠ দিবসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। খুব অল্প দিনের মধ্যে এ পদ্ধতির পাটের আবাদ উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
×