ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজটির কিছু ব্যবহার

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১১ জুন ২০১৬

জাতীয় পরিচয়পত্রের  ডাটাবেজটির কিছু ব্যবহার

আমাদের নিজস্ব অর্জনের মধ্যে একটি হলো আমাদের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধাসমূহ ব্যবহারে সক্ষম, আর অন্যটি হলোÑ আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ। এই ডাটাবেজে দেশের ১৮ বছর বয়সী প্রায় সকল নাগরিকের মৌলিক তথ্যসমূহ সংরক্ষিত রয়েছে। এই তথ্যসমূহের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ড। কিন্তু এই ব্যবস্থার সঙ্গে আরও কিছু বিষয় সংযোজন করা যেতে পারে। ব্যাংকে গ্রাহকের হিসাব সংরক্ষণের জন্যও আবার আলাদা করে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। ভোটার ডাটাবেজে যেসব তথ্য রয়েছে, সেসব তথ্যও থাকে তার ভেতর। কাজেই একই তথ্য দুবার দুজায়গায় এন্ট্রি করা হলো। ভোটার আইডি কার্ডে ভোটারের শনাক্তকারী নম্বর একটি আরও ব্যাংকে একই ব্যক্তির শনাক্তকারী নম্বর অন্য। কিন্তু কাজটি আরও সহজভাবে করা যেত; একজন গ্রাহক ব্যাংকে যাবেন, তার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দেবেন, ব্যাংকের আইটি সিস্টেম ভোটার আইডি নম্বরের মাধ্যমে জাতীয় ডাটাবেজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তার তথ্যসমূহ সংগ্রহ করে তার হিসাব খুলে দেবেন। এই পদ্ধতিটিই কি বর্তমান পদ্ধতি থেকে সহজ নয়। এর ফলে যেটা হবে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে, যাচাই করতে পারবে কোন ব্যক্তির নামে কোন ব্যাংকে কয়টা হিসাব আছে, কোন সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে কিনা ইত্যাদি। এবং তা করা যাবে চোখের পলকে। এনবিআর কিছুদিন পরপরই বলে, করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমরা যদি টিআইএন নম্বরের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটিকেই টিআইএন নম্বর হিসাবে ব্যবহার করি তাহলে ক্ষতি কি? বরং টিআইএন নম্বর খোলা সংক্রান্ত জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। বিশেষায়িত সফটওয়ারের মাধ্যমে এনবিআর মুহূর্তেই যাচাই করতে পারবে কোন নাগরিকের কোন ব্যাংকের হিসাবে অর্থবছরে কত টাকা সমাগম হয়েছে, টাকার উৎস কি? ইত্যাদি। কেউ কোন অপরাধে মামলা খেয়ে সাজাপ্রাপ্ত হলে, পুলিশ একটি ডাটাবেজে তা এন্ট্রি দেয়। এক্ষেত্রেও অপরাধীর শনাক্তকারী নম্বর ভোটার আইডি নম্বর থেকে ভিন্ন। ফলে দেখা যায় একই লোকের তথ্য দুজায়গায় দুভাবে দুবার এন্ট্রি হলো। কিন্তু এটি আরও সহজভাবে করা যেত। পুলিশের ডাটাবেজটি যদি জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে পুলিশের ডাটাবেজে শুধু ভোটার আইডি নং এত, এই অপরাধ করেছে; এই তথ্যটুকু থাকাই যথেষ্ট, কারণ বাকি তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে রয়েছে। এটি করা হলে, ভোটার আইডি নম্বরের মাধ্যমে সার্চ দিলেই বেরিয়ে যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে বাংলাদেশের কোন থানায় কোন মামলা আছে কিনা? পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ে যাবে অনেক সহজ। এক থানার আসামির নামে অন্য কোন থানায় কোন মামলা আছে কিনা, তা পুলিশ জানতে পারবে নিমিষেই। এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোটার আইডি কার্ডের ডাটাবেজটি ব্যবহার করে অনেক জটিলতা কমানো সম্ভব। তাহলে প্রশ্ন হলো, আমরা এটি করছি না কেন? কিছুদিন আগে একটি বিষয় নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক হয়েছিল। মোবাইলের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করাটা ঠিক হচ্ছে কিনা? এ প্রস্তাবনার বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের প্রধান যুক্তিটি ছিল, আঙ্গুলের ছাপের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়, বেসরকারী কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া ঠিক হচ্ছে কিনা? এসব প্রশ্ন খুব সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যেত যদি রেজিস্ট্রেশনের কাজটি সরকারী লোক দিয়ে করানো হতো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আধীনে সম্প্রতি প্রচুর কম্পিউটার প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে তথ্যপ্রযুক্তি কার্যালয় করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ ভেরিফিকেশনের কাজগুলো করা যেতে পারে। কোন ব্যক্তি যখন কোন ব্যাংকে হিসাব খুলতে যাবে, ব্যাংক তখন ওই ব্যক্তিকে পাঠাবে জেলা তথ্যপ্রযুক্তি কার্যালয়ে, তাদের প্রত্যয়নপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে এ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। কোন আসামি যখন পুলিশের কাছে ধরা পড়বে, পুলিশ তার আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে পাঠাবে জেলা তথ্যপ্রযুক্তি কার্যালয়ে, তারা বের করে দেবে আসামির পরিচয়। কেউ যখন এনবিআরে যাবে, ট্যাক্স দিতে, এনবিআর তার হাতের ছাপ নেবে, পাঠিয়ে দেবে জেলা তথ্য প্রযুক্তি কার্যলয়ে, তথ্যপ্রযুক্তি কার্যালয় ব্যক্তিরপরিচয় নিশ্চিত হবে, জানিয়ে দেবে এনবিআরকে। এনবিআর মুহূর্তের মধ্যে যাচাই করে নেবে, ওই ব্যক্তির কোন ব্যাংকে কোন এ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে? কোন বছর তিনি কত টাকা আয় করেছেন? আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন কিনা।
×