ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিংবদন্তির চিরবিদায় আজ দাফন

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১০ জুন ২০১৬

কিংবদন্তির চিরবিদায় আজ দাফন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আজ সমাহিত হবেন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। কেএফসি ইয়াম সেন্টারে শেষবারের মতো বিদায় জানাবেন ভক্ত-অনুরাগীরা। কিংবদন্তিকে বিদায় দেবেন বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্যক্তি। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কথা বলবেন বিভিন্ন ধর্মের বক্তারা। লেনক্স লুইস ও উইল স্মিথের মতো তারকারা বহন করবেন তার কফিন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুুপুরে লুইসভিলের ফ্রিডম হলে অনুষ্ঠিত হয় আলীর জানাজা। এখানেই নিজের প্রথম পেশাদারি লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। প্রায় বিশ হাজার মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন। এই অনুষ্ঠান বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত। মোহাম্মদ আলীর পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল বলেন, তিনি ছিলেন বিশ্ব নাগরিক। তার শেষকৃত্যে সারা বিশ্ব থেকেই অতিথিরা লুইসভিলে আসবেন। মোহাম্মদ আলীর পরিবার আগে থেকেই জানিয়েছে, ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ীই মুসলিম রীতিতে আলীর শেষকৃত্য হবে। একজন ইমাম এতে অংশ নেবেন। কেএফসি সেন্টারের ওয়েবসাইটে আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলীকে স্মরণ করে বক্তব্য দেবেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ওই অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা বিলি ক্রিস্টাল ও ক্রীড়া সাংবাদিক ব্রায়ান্ট গাম্বেলও বক্তব্য রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্স শহরের এক হাসপাতালে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সংক্রমণ জটিলতা বা সেপটিক শকে আলীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতায় ভুগছিলেন। এ সমস্যার কারণেই সম্প্রতি তাঁকে ফনিক্সের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পারকিনসন রোগের কারণে আলীর শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতা গুরুতর হয়ে দেখা দেয়। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েট বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে খ্যাতি অর্জনের শুরু করেন মোহাম্মদ আলী। এর পরপরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন তিনি। ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন মোহাম্মদ আলী। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি। এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট (প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী)। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’। মুষ্টিযুদ্ধের বাইরেও বিখ্যাত ছিলেন আলী। নাগরিক অধিকারকর্মী এবং কবি হিসেবে খেলা, বর্ণ ও জাতিসত্তার ঊর্ধে ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলামে যুক্ত হন মোহাম্মাদ আলী। ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার নাম পরিবর্তিত হয়। যুগে যুগে সাদা চামড়া অধ্যুষিত দেশগুলোতে কালো মানুষদের অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন ও নিগ্রহের স্বীকার হতে হয়েছে। আর এ ধরনের নিগ্রহ যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই হয়েছে, তা নয়। তাদের সমর্থন ও ছত্রছায়ায় থাকা দেশগুলোতেও এমন ঘটনা ঘটেছে সব সময়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রে মার্টিন লুথার কিং এগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন কালো মানুষদের অধিকার আদায়ের জন্য।
×