ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

বাঙালী বিজ্ঞানী অনিতা এইডস ভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারক

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৩ জুন ২০১৬

বাঙালী বিজ্ঞানী অনিতা এইডস ভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারক

বাঙালী বিজ্ঞানী অনিতা সরকার এইডস ভাইরাস ঠেকানোর ওষুধ আবিষ্কার করল। ডেঙ্গুর পর কি এবার এইডসের টিকাও আমাদের হাতে আসতে চলেছে? তা যে কোন দেশেই হোক বা ঘর-বাড়িতে অথবা আমার আপনার শরীরে, বাইরের শত্রুকে ঠেকানোর ভাবনাটাই আমাদের ভাবতে হয় সবচেয়ে আগে। এইডসের মতো একটি দুরারোগ্য ব্যাধি যে গত দুই-তিন দশক ধরে গোটা বিশ্বের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তার একটাই কারণ। ভাইরাস ‘এইচআইভি-পজিটিভ’ রাক্ষসের মতো বাড়ছে অনেক সংখ্যায়। অত্যন্ত দ্রুত হারে, নিমেষের মধ্যেই। ডেঙ্গি, ফ্লুর (ইনফ্লুয়েঞ্জা) চেয়ে এইডস ভাইরাসের ‘মিউটেশন রেট’ অনেক বেশি বলেই এটা হয়। যার জন্য এতদিন এই মারণব্যাধিকে রোখার পথ খুঁজে বের করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছিল ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের। অন্ধকারে এবার কিছুটা হলেও, আলোর দেখা মিলেছে! কলকাতায় জন্ম অনিতার। স্কুলজীবনের বেশির ভাগটাই থাকতেন ন্যাশনাল লাইব্রেরি ক্যাম্পাসে। পরে সেখান থেকে চলে যান মহেশতলায়। সেন্ট পল্স আর সেন্ট টেরেসা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে জুলজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন দিল্লী­বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দিল্লীরই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োইনফর্মেটিক্সে স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ শেষ করে পিএইচডি করেন ফ্রান্সের গ্রেনোবল থেকে। অনিতার প্রথম পোস্ট ডক্টরাল থিসিসটির কাজ চলছে এখন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। সহযোগী গবেষক ক্যালিফোর্নিয়ার লা হোয়ায় ‘স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট অনিতা সরকার বলছেন, ‘শরীরে ভাইরাসের মতো শত্রুরা হামলা চালালে, তাদের রুখতে প্রাকৃতিকভাবেই, শরীরে কিছু এ্যান্টিবডি তৈরি হয়। বিশেষ বিশেষ ভাইরাসের হানাদারি রোখার জন্য বিশেষ বিশেষ এ্যান্টিবডি। যেমন, তরোয়ালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঢাল বা বর্ম লাগে। আর, বুলেট-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে লাগে বুলেট-প্রুফ জ্যাকেট। প্রতিরোধের ধরনটা মোটামুটি একই রকম হলেও তার হাতিয়ারটা হয় আলাদা আলাদা।’ স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট অনিতা সরকার। অনিতার কথায়, ‘গত ৩০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, খুব অল্পসংখ্যক এইচআইভি-পজিটিভে আক্রান্ত মানুষ এমন বিশেষ ধরনের এ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারেন। এমন এ্যান্টিবডির সংখ্যা ও ভাইরাসের ‘মিউটেশন রেট’-এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের দ্রুত পরিবর্তনের ক্ষমতাই এইচআইভি ভাইরাসকে শরীরে দ্রুত ছডিয়ে পড়তে দেবে না। গবেষকরা চেষ্টা করছেন, এইচআইভি-পজিটিভ ভাইরাস রোখার জন্যেও আমাদের শরীরে গড়ে ওঠে বিশেষ এক ধরনের এ্যান্টিবডি। গবেষকরা চেষ্টা করছেন, এমন একটা টিকা বানাতে যা দেহে ওই এ্যান্টিবডি তৈরি করে রাখে। যার ফলে, সুস্থ মানুষের শরীর ওই মারাত্মক ভাইরাসের হানাদারিকে রুখতে পারে।’ এইডস এখন বিশ্বে মহামারী হয়ে উঠেছে। এর কোন প্রতিকার বা প্রতিরোধের উপায় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত খুঁজে পায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের এইডস প্রতিরোধ সংস্থার (ইউএনএডস) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১৩ সালের শেষে বিশ্বে সাড়ে তিন কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এইডসে। তার মধ্যে শুধু ভারতেই এডস-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাটা বছর তিনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছে ২১ লাখে। ওই এইডস রোগীদের মধ্যে খুবই সামান্য একটা অংশের দেহে এইডস ভাইরাসের দ্রুত বংশ-বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ঠেকানোর এ্যান্টিবডি, প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে তুলতে পারে।
×