ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী নাগরিকদের করের আওতায় আনার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১ জুন ২০১৬

বিদেশী নাগরিকদের করের আওতায় আনার উদ্যোগ

ওয়াজেদ হীরা ॥ দেশে ঠিক কি পরিমাণ বিদেশী নাগরিক কাজ করছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানিয়েছে সংখ্যাটা প্রায় পাঁচ লাখ। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলেও যাদের অধিকাংশই আয়কর দিচ্ছেন না। আর একারণেই আয়কর না দেয়া বিদেশী নাগরিকদের করের আওতায় আনতে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাংলাদেশ ব্যবসাবান্ধব হওয়ার কারণে অনেকেই এখানে ব্যবসা করছেন তবে অনেকেই এক্ষেত্রে আয়কর দিচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে একটু জোরালোভাবেই নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর চূড়ান্ত সতর্কের জন্য ইতোমধ্যেই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে অর্থমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিতেই এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এমনকি যে সকল বিদেশী নাগরিক আয়কর দাখিল করেন না তাদের খুঁজে বের করতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি টাস্কফোর্স সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলেও জানা গেছে। রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব, শিল্পবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ প্রতিষ্ঠার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে বিদেশী নাগরিকদের কাজ করার সুযোগ বিরাজ করছে। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বিদেশী নাগরিকের উপার্জিত আয়ের ওপর উৎসে কর কর্তনের বিধানসহ আয়কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সকল কোম্পানি, শিল্প, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, হোটেল ও রেস্টুরেন্টসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে বিদেশী নাগরিক নিয়োজিত ও ভবিষ্যতে নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে তাদের আয়কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান পরিপালন করতে হবে।’ প্রজ্ঞাপনে নিয়োগকারী কোম্পানি, প্রযুক্তি, এনজিও, হোটেলসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে বিদেশী নাগরিকরা কর্মরত, তাদেরও আয়করের বিধি-বিধান মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও কর অঞ্চলগুলো এসব নাগরিকের আয়কর বিবরণী যাচাই ও যেসব নাগরিক আয়কর বিবরণী দাখিল করেন না তাদের খুঁজে বের করার কাজ শুরু করেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাজেটে এসব ক্ষেত্রে জরিমানা বৃদ্ধিসহ নির্দেশনাকে আরও কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। সূত্রমতে, দেশে বিভিন্ন কাজে বা ব্যবসায় প্রায় ৫ লাখ বিদেশী নাগরিক থাকলেও তারা আয়কর বিবরণী দাখিল করেন না। তাদের অনেকেই আয়কর প্রদান না করেই দেশত্যাগ করেন। আবার অনেকের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বছরের পর বছর কাজ করছেন। তাদের খুঁজে বের করতে টাস্কফোর্সের পাশাপাশি স্টিয়ারিং কমিটি করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘দেশে যথেষ্ট বেকার যুবক থাকা সত্ত্বেও ব্যাপকভাবে বিদেশী জনশক্তি এখানে কাজ করেন। তাদের অনেকেই কোন রকম করের আওতায় আসেন না। এবার তাদের ওপর নিয়মিত কর ধার্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা এখন থেকে অবৈধভাবে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োজিত থাকবেন, সে প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রদেয় আয়করের ৫০ শতাংশ বা ৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়। সেসব প্রতিষ্ঠানের সব রকম কর সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অবৈধ নাগরিক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, জেল ও জরিমানা করা হবে’। কর আইন সম্পর্কে জানাতে ও আয়কর সনদপত্র যাছাই করতে বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আলাদা ডেস্ক করার কাজও শুরু করেছে এনবিআর। এছাড়া বিনিয়োগ বোর্ড, বেপজা, এনজিও ব্যুরো, এনএসআই, এসবি, পাসপোর্ট ও বহির্গমন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসি থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে টাস্কফোর্স। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুনের ২য় সপ্তাহে স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সব তথ্য সমন্বয়ের মাধ্যমে অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে। রাজস্ব বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমানও অর্থমন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা মেনে বিদেশী নাগরিকদের করের আওতায় আনতে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবহিতও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর তারই প্রেক্ষিতে এই বিজ্ঞপ্তি জারি একটি সতর্কতা বলেও জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছেন, কর ফাঁকি দিয়ে কেউ যেন পার না পায় সে বিষয়ে বেশ সতর্ক এনবিআর। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তাও জানিয়েছেন কর আদায়ের ক্ষেত্রে সকল বিষয়েই জোর দিচ্ছেন এনবিআর। আর পূর্বের মতো যেন বিদেশীরা পার না পায় সে বিষয়ে দেখভাল করা হচ্ছে বলেও জানান একাধিক কর্মকর্তারা।
×