ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

মায়ের ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৬ মে ২০১৬

মায়ের ভালবাসা

মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে জনপ্রিয় এ গানের চরণ দুটির মতোই মা শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এক ধরনের মধুরতা। রয়েছে এক ধরনের স্নিগ্ধতা। সৃষ্টির আদি থেকেই সব ভাষাভাষীর কাছে যে শব্দটি সবচেয়ে প্রিয় তা হচ্ছে মা। ছোট্ট এই শব্দের মাঝে রয়েছে মায়া, মমতা, ভালবাসা সর্বোপরি রয়েছে এক বিশালতা। যে বিশালতায় নিজের স্থানটুকু করে নেয়া সযতেœ। সৃষ্টিকর্তার অমোঘ সৃষ্টি এই মা। মায়ের দিকে তাকালে দূর হয় সব ক্লান্তি। এই মাকে নিয়ে পৃথিবীতে কত লক্ষ-কোটি গান কবিতা রচিত হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। অন্য কোন বিষয় নিয়ে বোধহয় এত গান, কবিতা, বন্দনা রচিত হয়নি। যে বন্দনায় মায়ের সন্তানপ্রীতি ও মায়ের ভালবাসা সর্বোপরি মাতৃসুলভ আচরণের স্তুতি প্রকাশ পেয়েছে। মায়ের ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে সৃষ্টি হয়েছে মা দিবস। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। যদিও একটি দিবস দিয়ে মায়ের ভালবাসার গভীরতা মাপা সম্ভব নয়। তবুও প্রতীকী একটা ব্যাপার থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। আর এ অনুভূতির মর্মেই নিহিত রয়েছে সন্তানের সুখী সমৃদ্ধি জীবনের কোমল প্রেক্ষাপট। মা শুধুমাত্র সন্তানপ্রীতি সুলভ আচরণ করেন তা নয়, মা একজন প্রকৃত শিক্ষকও বটে। পরিবারের সৃজনশীলতা এবং সার্বিকভাবে বেড়ে ওঠার আদব একজন সন্তান মায়ের কাছ থেকেই শিখে থাকে। মা-ই সন্তানকে প্রকৃত মানুষরূপে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেন। যে কারণে সমাজ গঠনে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। এ দেশের প্রেক্ষাপটে একটা সময় ছিল যখন মায়েরা ঘরের চৌকাঠ পার হতো না। এ ব্যাপারটি একটা সমাজের জন্য মোটেও সুখকর নয়। আর এ কারণেই পিছিয়ে থাকতে হয় এ সমাজকে। তবে কালের আবর্তনে দৃশ্যপট পাল্টেছে। এখনকার মায়েরা যথেষ্ট শিক্ষিত এবং সচেতন। বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। সত্যিকার অর্থেই বর্তমান শিক্ষিত মায়েরা তারই ছাপ রেখে যাচ্ছেন। ঘরে-বাইরে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ঘরও সামলাচ্ছেন আবার কর্মক্ষেত্রেও মেধার পরিচয় দিচ্ছেন। যা একটি সমাজকে এগিয়ে নিতে সহায়ক। কারণ মা যদি শিক্ষিত না হন তাহলে সন্তানে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারবেন না। আর সন্তানরা যে কোন কাজে মায়ের কাছেই আগে সাহায্য প্রার্থনা করে। সব ধরনের সমস্যা মায়ের কাছেই নিঃসঙ্কোচে তুলে ধরে। সে ক্ষেত্রে মা যদি বিচক্ষণতার পরিচয় না দিতে পারেন তাহলে সন্তান সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এ কারণেই সমাজে শিক্ষিত মায়ের প্রয়োজন। একজন মা পরিবার ও সমাজ গঠনে যতটুকু ভূমিকা রাখতে পারেন অন্য কারও পক্ষে তা সম্ভব নয়। প্রকৃত মায়ের পক্ষেই সম্ভব সন্তানকে শ্রেষ্ঠ মানুষরূপে গড়ে তোলা। যেহেতু একজন মা-কে সবদিকে খেয়াল রেখে এগুতে হয় সেহেতু সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া, পারিবারিক কাজে সমহারে বণ্টন করে নিয়ে মাকে চাপমুক্ত রাখা, সর্বোপরি কাজের গতি কিংবা সমাজের অগ্রগতি রক্ষার্থে একজন মায়ের পাশে থেকে কাজ করে যাওয়া। এতে করে ঘুচে আসবে কাজ নিয়ে ভেদাভেদ, উন্নতি ঘটবে মানসিকতারÑযা একটি দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়ক। যদিও মা দিবসটি একটি প্রতীকী দিবস হিসেবে পালন করা হয়, তথাপি দিবসটিকে কেন্দ্র করে ভাল কিছু মেসেজ বেরিয়ে আসে। তবে যে বিষয়টি বেশ দৃষ্টিকটু, সেটা হচ্ছে এ দিবসটি এখন মা দিবসে আবদ্ধ নেই। হয়ে গেছে বাণিজ্যিক দিবস। বেশ কিছু বহুজাতিক পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এ দিবসের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। বিভিন্ন পণ্য প্রচার করছে দিবসটিকে সামনে রেখে। অথচ মা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে তাদেও নেই কোন কর্মকা-। শুধুমাত্র পণ্য প্রচারই যেন মুখ্য। তবে মা দিবসে মাকে সারপ্রাইজ দিতে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও উপহার সামগ্রী শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন আউটলেটে। শাড়ি-সালোয়ার কামিজ থেকে শুরু বিভিন্ন শোপিস রয়েছে এ তালিকায়। আবার কবিতার পঙক্তি ও মায়ের পোট্রেট দিয়ে কারুকাজ করা পোশাক ও শোপিসগুলো দ্যুতি ছড়িয়ে অন্য মহিমায়। দামও হাতের নাগালে। মা শব্দটির অর্থ যতটা গভীর এর মর্যাদাও ততখানি। ঠুনকো কিছু কারণে এর মর্যাদাহানি হোকÑএ যেন কারোই কাম্য নয়। আজ এ কথা সদা স্বীকৃতÑযে জাতি মাকে যতবেশি সম্মান দেখিয়েছে তারা তত উন্নত। সে উন্নতির ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আরও সচেতন হতে হবে আমাদের মায়ের মর্যাদা শুধু দিবসের ফ্রেমে বন্দী না রেখে প্রতিদিনই রক্ষা করা উচিত। তাহলে বৃদ্ধি পাবে দিবসটির তাৎপর্য। ছবি : সাগর আহমেদ মডেল : আফরোজা পারভীন ও তার ছেলে আয়াত কৃতজ্ঞতা : রেড বিউটি স্যালুন কোরিওগ্রাফী : শাওন রহমান
×