‘কি আছে জীবনে আমার’, ‘কোন একদিন আমায় তুমি খুঁজবে’, ‘জীবন চলার পথে ওগো বন্ধু’, ‘তুমি কি কখনও জানতে চেয়েছো’ গানগুলোর শিল্পী মোঃ ইব্রাহিম। এখনও এই গানগুলো গুনগুন করে গেয়ে থাকেন শ্রোতারা। আশির দশকের অন্যতম জনপ্রিয় মরমীশিল্পী ইব্রাহিম সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীতমেলায় গান করেন। তার গান শুনে আপ্লুত হয়ে পড়েন শ্রোতারা। গান শেষে সঙ্গীত জীবন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে এই গুণীশিল্পীর সঙ্গে কথা হয়।
সঙ্গীতমেলায় অনেক দিন পর জনসম্মুখে গাইলেন অনুভূতি কেমন?
মোঃ ইব্রাহিম : আমি আসলে মাঝে মধ্যেই গান করি। বেতার-টেলিভিশনেও গাই। স্টেজেও গাই বেশিরভাগ ঢাকার বাইরে। তবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অনেক দিন পর গাইলাম। অনেক ভাল লাগল শ্রোতাদের উচ্ছ্বাস দেখে। গান গাওয়ার পর অনেকেই আমার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। বলেছেন, আপনার গান অনেক শুনেছি। কেউ কেউ বলেছেন, আপনার গান শুনে শুনে বড় হয়েছি। আমাকে মনে রেখেছে এ জন্য আমি শ্রোতাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
আপনার গানের চর্চা কেমন ছিল?
মোঃ ইব্রাহিম : আমি পারিবারিকভাবেই গানচর্চার সঙ্গে যুক্ত। আমার বাবা-চাচা এমনকি দাদাও গান করতেন। তাদের কাছেই আমার গান শেখা। তারাই উৎসাহদাতা। ছোটবেলা থেকেই গানের আবহেই বড় হয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় আমি এবং আমার সন্তানরাও গান করে।
আপনার প্রথম এ্যালবাম বের হয় কত সালে?
মোঃ ইব্রাহিম : ১৯৮৮ সালে। এ্যালবামের নাম ছিল ‘কি আছে জীবনে আমার’।
এ্যালবামটি তো সে সময় তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল?
মোঃ ইব্রাহিম : এখনও সমান জনপ্রিয়। আমি আমার জীবনে প্রায় সাড়ে চারশ’ গান করেছি। ৪১টি এ্যালবাম করেছি। তার মধ্যে এই এ্যালবামটি এখনও সুপার সেলার। এ্যালবামের গানগুলো অনেক জনপ্রিয় হয়। শ্রোতারা অনেক পছন্দ করেন। যার প্রমাণ আমি এত বছর পরেও পাচ্ছি।
এত বছর ধরে জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কি বলে আপনি মনে করেন?
মোঃ ইব্রাহিম : আমার গানের সুরের মধ্যে কথার মধ্যে এমননি কম্পোজিশনে বৈচিত্র্য আছে। এছাড়া আমার গানের অন্যতম থিম আধ্যাত্মবাদ। গানের মধ্যে আধ্যাত্মবাদের চেতনা নিয়ে আমার গানগুলো লেখা। আমার গানগুলোতে জীবনবোধের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এসব গানের কথা মরমিবাদ কিন্তু সুর ছিল আধুনিক এ কারণে শ্রোতারা আমার গানগুলো পছন্দ করেছে বলে আমি মনে করি।
আপনার এ্যালবামগুলো কি কি?
মোঃ ইব্রাহিম : আমি মূলত ১৯৭২ সাল থেকে গান করি। এ্যালবামের জন্য গান করি ১৯৮৮ সালের দিকে। আমার এ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কি আছে জীবনে আমার’, ‘বিনোদিয়া, ‘ভবের মানুষ’, ‘নিঠুর পৃথিবী’, ‘আর কান্দাইওনা’, ‘কবর হলো রুহের হোল্ডিং নাম্বার’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘মাটির দেহ যাবে পচে’ প্রভৃতি। সবশেষে বিগত ৪-৫ বছর আগে প্রকাশ পায় এ্যালবাম ‘ভাবদরিয়া’।
এ্যালবামের বেশিরভাগ গানই তো আপনার রচনা এবং সুরে?
মোঃ ইব্রাহিম : হ্যাঁ সবই আমার। তবে, আবদুল হাই আল হাদী, আবদুল বারি হাওলাদার, হাসান মতিউর রহমান, এসএম বক্স চিশতী এই চারজনের লেখা এবং সুরে আমি বেশ কয়েকটি গান গেয়েছি। বাকি সব গান আমি আমার রচনা এবং সুরে গেয়েছি।
গানের ক্ষেত্রে কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন?
মোঃ ইব্রাহিম : হ্যাঁ আমার গানের যে বৈশিষ্ট্য মরমিবাদ। আমার গুরু এসএম বক্স চিশতীর কাছে আমি মরমিবাদের ভাব পেয়েছি। যা আমার গানকে সমৃদ্ধ করেছে বলে মনে করি।
শ্রোতারা ভাবেন আপনি কাউকে না পাওয়ায় বিরহী গানগুলো বেশি গাইতে পেরেছেন?
মোঃ ইব্রাহিম : না এটা ঠিক নয়। আমার গানের বিরহ আমার আধ্যাত্মিক বিরহ। দয়ালের সঙ্গে আমার বিরহের সম্পর্ক। আধ্যাত্মবাদ আমার গানের বৈশিষ্ট্য। এ কারণে আমার গানের কথায় হয়তো শ্রোতারা বিরহ খুঁজে পান। আমার সাংসারিক বা ব্যক্তিগত কোন বিরহ নেই। আমি পরিপূর্ণভাবে একজন তৃপ্ত মানুষ।
গানের বাইরে আপনি আর কি করতেন?
মোঃ ইব্রাহিম : ধন্যবাদ। এ কথাটি অনেকেই জানেন না। আমি গানের বাইরে পেশায় সেনাবাহিনীতে ছিলাম। সেখানে ২৮ বছর চাকরি করেছি। এই সময়টাই আমার সঙ্গীত জীবন। মূলত গানের জন্যই আমাকে সেনাবাহিনীতে নেয়া হয়। মরমিশিল্পী হিসেবে মানুষ যে আমাকে চেনে তার পেছনে আমার অফিসের ভূমিকা অনেক।
আপনার জীবনে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব যদি করেন?
মোঃ ইব্রাহিম: আমি অভাবি শিল্পী নই, আমি সুখী মানুষ। আমার কোন অপ্রাপ্তি নেই। শুধু গানের কারণে নয়, পেশা, পরিবার সন্তান নিয়ে আমি ভাল আছি। আল্লাহ আমাকে খুব ভাল রেখেছে।
শ্রোতাদের উদ্দেশে আপনি কি বলতে চান?
মোঃ ইব্রাহিম : শ্রোতাদের আমি বলব আপনারা ইব্রাহিমের গান শোনেন, ভাল কথা পাবেন, জ্ঞানের কথা পাবেন, ভাল সুর পাবেন। গানের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করেন। আমি যেমন ভাল কথা ভাল সুরের গান উপহার দিতে পেরেছি। তেমিন ভাল গান হলে অশব্যই শুনবেন। ভাল সুর এবং কথার শিল্পীদের গান শুনবেন তাদের উৎসাহ দেবেন। তাহলেই আমাদের গান বেঁচে থাকবে। আমাদের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে।-সাজু আহমেদ