ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মান-অভিমানের পালা শেষ-এক মঞ্চে রওশন ও এরশাদ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩ মে ২০১৬

মান-অভিমানের পালা শেষ-এক মঞ্চে রওশন ও এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মান অভিমানের পালা শেষ। হাতে হাত ধরে আবারও এক সঙ্গে পথচলা শুরু। দীর্ঘদিন পর স্ত্রীকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না কবি এরশাদের। সাহিত্যের নানা ভাষা ও ভঙ্গিতে এর প্রকাশও ঘটিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক বরফ গলার পর স্ত্রীও আবেগে আপ্লুত। পাশাপাশি চেয়ারে বসে ছিলেন দু’জন। বারবার মুখ বাড়িয়ে স্বামী এরশাদের সঙ্গে কথা বলেন রওশন। তেমনি এরশাদও। বক্তব্য দেয়ার সময় চেয়ার থেকে উঠে এসে মাইক্রোফোন ঠিক করে দিচ্ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। সব মিলিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব কমে মিলমিশের ঘটনায় দলের নেতাকর্মীরাও বেশ মজা পাচ্ছিলেন। তারাও উজ্জীবিত। রবিবার মহান মে দিবস উপলক্ষে জাপা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। সমাবেশে জাপার নব নির্বাচিত সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ উপস্থিত হওয়া মাত্রই নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘদিন পর তিনি এরশাদের কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। ১৭ জানুয়ারি দেবর জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান করার পর থেকেই বেঁকে বসেন রওশন। কঠিন মান ভাঙ্গানো যাচ্ছিল না কিছুতেই। ফের দু’ভাগে অবস্থান নেন দলের নেতাকর্মীরা। সঙ্কট সমাধানে নানা শর্তের বেড়াজালে এরশাদকে আটকানোর চেষ্টা করেন রওশন। স্বামীকে গণতান্ত্রিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত রওশনকে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। রওশন সমর্থিত এমপি ও নেতারাও এরশাদের কাছে ভিড়তে শুরু করেন। সমাবেশে স্ত্রীকে কাছে পেয়ে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, ‘এই দিনটি ঐতিহাসিক। কালো মেঘ কাটার দিন। সূর্যোদয় হয়ে গেছে। নতুন নতুন যাত্রার দিন। আজ থেকে আমাদের নতুন করে আবারও পথচলা শুরু। চাই সুন্দর আগামী। সুন্দর দিন। সুন্দর সকাল। আমার হৃদয় আজ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আনন্দে ভরপুর। এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই।’ মূলত সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরশাদ ও রওশনের মধ্যে দূরত্বের শুরু। এরপর জিএম কাদের ইস্যু। পরবর্তীতে দলের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা। ২৪ এপ্রিল রওশন এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানান। পাশাপাশি নিজের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন রওশন। পরদিন একজন প্রতিমন্ত্রী রংপুরে সফররত এরশাদের কাছে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে। ২৭ এপ্রিল রংপুরে আয়োজিত এক সমাবেশে এরশাদ রওশনকে দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। সভায় এরশাদ ও জিএম কাদেরের মাঝখানে বসেছিলেন রওশন। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে দু’জনের সঙ্গেই কথা বলেন বিরোধী দলের নেতা। সমাবেশে সকল রাজনৈতিক দলকে এক টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশে একের পর এক মানুষ খুন হচ্ছে। সরকারের পক্ষে সবার ঘর পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলকে এদেশকে বাঁচাতে হলে এক টেবিলে বসতে হবে। সমাবেশে এরশাদ বলেন, দেশের সামগ্রিক অবস্থা ভাল নয়। জনগণ পরিবর্তন চায়। কিন্তু বিএনপি নয়, দেশবাসী জাতীয় পার্টিকে চায়। তিনি দুঃখ করে বলেন, জাতীয় পার্টি আগে ঐক্যবদ্ধ ছিল না। রওশনকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করায় আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা এক সাথে থাকব, এক সাথে চলব। তিনি বলেন, আমি নেতাকর্মীদের সম্মতি নিয়েই রওশনকে কো-চেয়ারম্যান করেছি। রংপুরের গঙ্গাচড়া জনসভায় আমি হাজার হাজার উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকের সম্মতিতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার এ সিদ্ধান্তের ফলে দলে সকল দ্বন্দে¦র অবসান ঘটেছে। জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রাণ ফিরে এসেছে বলেও দাবি করেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। শ্রমিক সমাবেশে নবনির্বাচিত কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের নেতা রওশন তাকে কো-চেয়ারম্যান নিযুক্ত করায় এরশাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সমাবেশে উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি এই সিদ্ধান্তে খুশি? আপনারা খুশি না হলে আমার এই পদের দরকার নেই। জবাবে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দুই হাত তুলে রওশনকে সমর্থন জানান। শ্রমিক পার্টির সভাপতি একেএম আসরাফুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ শান্তর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাপা কো- চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, এসএম ফয়সল চিশতি, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন প্রমুখ। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারের মান বেড়েছে না ক্ষুণœ হয়েছে তা আপনারা জানেন। অনেক ইউপিতে আপনারা জিতেছেন, কিন্তু গণতন্ত্রকে পরাজিত করবেন না। খুন হত্যার ব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। এটা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার জন্য যেসব আইন আছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। শ্রমিক নেতৃত্বও ঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে না। ফলে শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব দিকে এখন নজর দিতে হবে। মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে জাতীয় পার্টি আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
×