ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এরপরই কমিশন ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে

শীঘ্রই বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ কমিশন গঠনে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৩ মে ২০১৬

শীঘ্রই বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ কমিশন গঠনে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়

আরাফাত মুন্না ॥ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এলাকাভেদে মতামত, যুক্তি ও গণশুনানি করে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের কমিশন গঠনে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি শীঘ্রই প্রকাশিত হচ্ছে বলে সুপ্রীমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে। মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদও এমন আশা প্রকাশ করেছেন। অনুলিপি প্রকাশের পর আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিশন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি এলাকাভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করবে। রশিদ দিয়ে মানসম্মত ভাড়া আদায়, ভাড়া বৃদ্ধির ওপর বিধি নিষেধসহ আইন অমান্যে বাড়ির মালিকদের দ-ের বিধান রেখে করা আইন মানা হচ্ছে না। বাড়ির মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো যেকোন সময় ভাড়া বাড়াচ্ছেন এবং ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করছেন। এ কারণে ২৫ বছর আগে করা বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান মানতে এবং প্রয়োগ করাতে ২০১৫ সালের ১ জুলাই ওই রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। রায় অনুসরণ করলে সমস্যার সমাধান হবে ॥ আদালতের এ রায় অনুসরণ করলে বাড়ি ভাড়া সম্পর্কিত চলমান বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আশা করছি শীঘ্রই এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পাবে। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে কমিশন গঠন করা হবে। আর এ কমিশন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এলাকাভেদে মতামত, যুক্তি ও গণশুনানি করে ভাড়া নির্ধারণ করবে। এছাড়াও মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কি কি কারণে বিরোধ হয় সে বিষয়টি বের করবে। তিনি আরও বলেন, কমিশনের এসব সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার আইন পরিবর্তন করে প্রয়োগ করলে বিদ্যমান সমস্যা দূর হবে। এ রায় অনুসারে কমিশন গঠনের পর তাদের সুপারিশ অনুসারে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি। হাইকোর্টে যে কারণে রিট ॥ ১৯৯১ সালে বর্তমানে প্রচলিত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি জারি করা হয়। অন্যদিকে ১৯৯১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মহানগরীকে দশটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে তিন ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি)। এ আইনের বিধান কার্যকর না হওয়ায় এবং কোন এলাকার ভাড়া কত হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর চেয়ে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়। একই বছরের ১৭ মে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রশিদ ও বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিস দেয়াসহ বিভিন্ন বিধান থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাড়ির মালিকেরা সেটা পালন করছেন না। এমনকি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুসারেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই বিচারপতি বজলুর রহমান ও বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে। রায়ে যা বলেছিল হাইকোর্ট ॥ বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি এলাকাভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে ছয় মাসের মধ্যে একটি ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ কমিশন গঠন করতে নির্দেশ দিয়ে রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাত সদস্যের এ কমিশনের প্রধান থাকবেন আইন মন্ত্রণালয়ের মনোনীত একজন আইনজ্ঞ। গৃহায়ণ, নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, একজন অর্থনীতিবিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মনোনীত একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার বা বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কাজ বা গবেষণা করেন বা বেসরকারী সংস্থার একজন প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মনোনীত যেকোন সিটি কর্পোরেশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কমিশনে থাকবেন। এ কমিশন আইনের সংস্কার প্রস্তাব, বাড়ির মালিক, আইনজ্ঞ, বিভিন্ন বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টসহ পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলবে, প্রয়োজনে গণশুনানি করবে, তাদের মতামত ও যুক্তি গ্রহণ করবে, রাজধানীসহ ও অন্যন্য মহানগর শহর, অঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দেবে। পাশাপাশি দেশের ভাড়াটিয়া ও মালিকের সমস্যা চিহ্নিত করে নিরূপণ ও প্রতিকারে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইনী কাঠামো প্রণয়নে সুপারিশ করবে। আরেক নির্দেশনায় বলা হয়, কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে সরকার বিদ্যমান বাড়ি ভাড়া আইন সংস্কারেরও উদ্যোগ নেবে।
×