ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফেরদৌসী খানম ‘লাকী’

‘স্বর্ণকুমারী দেবী’ একটি নক্ষত্রের নাম

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

‘স্বর্ণকুমারী দেবী’ একটি নক্ষত্রের নাম

আজ আমরা যারা নারী জাগরণের কথা বলি, নারীমুক্তির বক্তৃতা দেই তাদের মধ্যে হয়ত অনেকেই জানি না ‘স্বর্ণকুমারী দেবী’র নাম। যিনি অবগুণ্ঠন ছেড়ে মৃদুপথে বেরিয়ে এসেছিলেন নারী মুক্তির আশায় সাহসের সঙ্গে তার লেখনীর মাঝে। নারীরাও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে প্রতিক্ষেত্রে সে যুগে তিনি লেখনীর মাঝে প্রমাণ করেছিলেন। প্রথমেই জেনে নেই এই ‘স্বর্ণকুমারী দেবী’ কে ছিলেন? স্বর্ণকুমারী দেবী জন্মগ্রহণ করেন ২৮ আগস্ট ১৮৫৫ সালে বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৪ জন সন্তানের মধ্যে তিনি এক সন্তান যিনি ঠাকুর পরিবারে মহিলাদের লেখনীর ধারা শুরু করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন স্বর্ণকুমারীদেবীর ছোট ভাই। স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম স্বার্থক লেখিকা। ১৮৭৬ সাল ডিসেম্বর মাস। লেখকের নামহীন একটি বই নিয়ে সকলের জল্পনা কল্পনা। কার লেখা এই বইটি? বইটির নাম ছিল ‘দীপ নির্বাণ’। এরপর শোনা গেল বইটি একটি মেয়ের লেখা। এ নিয়ে ‘সাধারণী’ পত্রিকায় বহু আলোচনা-সমালোচনা। তখনকার যুগে মেয়েদের সাহিত্য ছিল শুধুই হাস্যকর ও তুচ্ছতার বিষয়। কিন্তু তারপরও স্বর্ণকুমারী দেবী তার আসন প্রতিভা দ্বারা পাকাপোক্ত করে নিয়েছিলেন। স্বর্ণকুমারী দেবীর স্বামী নদীয়া জেলার জমিদার জানকীনাথ ঘোষালেরও ছিল অনুপ্রেরণা তাই স্বর্ণকুমারী দেবী আরও এগিয়ে গিয়েছিলেন ‘দীপ নির্বাণে’র পর ‘বসন্ত উৎসব’, ছিন্নমুকুল, বিবাহ উৎসব, মিনাররাজ, বিদ্রোহ, ফুলের মালা, হুগলীর ইমাম বাড়া, স্নেহলতা, কুমারভীম সিংহসহ তিনি আরও লিখেছিলেন গল্প কবিতা, গাঁথা, গান, রম্য রচনা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, স্মৃতিকথা, স্কুলপাঠ্য বই, প্রহসন, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনায়ও সমান পারদশী ছিলেন তিনি। স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘কাহাকে’ উপন্যাসটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। ‘কাহাকে’ উপন্যাসটি শুধু বাঙালী সমাজে নয় বিদেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাঁর ২টি উপন্যাস, ১৪টি গল্প ও ১টি নাটক অনূদিত হয়। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয় ‘টু হুম’ নামে কলকাতায় প্রকাশিত হয়। ‘দিব্য কমল’ নাটকটি অনূদিত হয় জার্মান ভাষায় ‘প্রিন্সেস কল্যাণী’ নামে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ছোট গল্প সংকলন ও ‘শট স্টোরিজ’ নামে ইংরেজী অনুবাদ করা হয়। অথচ অনুবাদ করতে গিয়েও তাকে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে বলতে হয় সে যুগে সাধারণ বাঙালী পরিবারের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ীর মেয়েদের তেমন মেলামেশার সুযোগ ছিল না বলে তার লেখায় ‘বাস্তব সমাজের জীবনের ছাপ নেই’ বলে ছোট ভাই রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন। (চলবে)
×