ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ

সত্যজিৎ রায় ॥ বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

সত্যজিৎ রায় ॥ বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল

সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রটি যেন ভূমিকম্পের মতোই উপমহাদেশের চলচ্চিত্র কাঠামো ভেঙ্গে চূর্ণ করেছিল। এই সিনেমা কেবল উপমহাদেশের দর্শক ও সমালোচকদের হতবাক করেনি। বরং এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত পেয়েছেন এই বাঙালী চলচ্চিত্রকার ও বাংলা সিনেমা। গত ২৩ এপ্রিল ছিল এ মহান নির্মাতার ২৪তম প্রয়ান দিবস। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ রায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ডি-প্রজন্মের পাঠকের জন্য এই মহান নির্মাতার কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হলো। ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে মেধাবী নির্মাতা ছিলেন সত্যজিৎ। তাঁর জন্ম ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায়। পূর্বপুরুষদের বাসস্থান ছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার মসুয়া গ্রামে। মাত্র আড়াই বছর বয়সে পিতাকে হারান সত্যজিৎ। এ সময় তিনি ও তাঁর মার জীবনে নেমে আসে ভীষণ অনিশ্চয়তা। এ সময় তাঁর নিজ মামা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। মামার আশ্রয়ে তাদের অনিশ্চয়তার বিপরীতে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসে। এ সময় সত্যজিতের মা সুপ্রভা রায় স্থানীয় একটি স্কুলে চাকরি নেন। সত্যজিতের বাবা ছিলেন বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী ছড়াকার সুকুমার রায়। আট বছর বয়স পর্যন্ত নিজের মায়ের কাছেই তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি। বালক বয়সে সত্যজিতের জীবনে এক মজার ঘটনা ঘটে। যখন তাঁর দশ বছর বয়স তখন পৌষমেলা দেখার জন্য মাকে সঙ্গে নিয়ে একবার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। তখন সবে অটোগ্রাফের খাতা কিনেছেন তিনি। তখনও পর্যন্ত কারও অটোগ্রাফ সংগ্রহ করা হয়নি। তাই সত্যজিতের অভিপ্রায় ছিল এই খাতার প্রথম অটোগ্রাফটি যেন হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এ কারণে মাকে তাঁর ইচ্ছার কথা জানালেন কিশোর সত্যজিৎ। এক সকালে মায়ের সঙ্গে হাজির হলেন উত্তরায়ণে। পারিবারিকভাবে রবীন্দ্রনাথের পরিবারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন কবিগুরুর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। এছাড়া তাঁর পিতা সুকুমার রায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত স্নেহভাজন। সুকুমার রায় সম্পাদিত সন্দেশ পত্রিকার একজন একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরুর কাছে মানিক নামেই পরিচিত ছিল সত্যজিৎ। কবির সামনে কিশোর মানিক তাঁর অটোগ্রাফ খাতা এগিয়ে দেন। কবি তাঁর দিকে কিছুক্ষণ তাকানোর পর স্নেহে বললেন, ‘এই খাতাটা আমার কাছে থাক; কাল সকালে এসে আমার কাছে এসে নিয়ে যেও’। কবির কথামতো মানিক পরের দিন হাজির হলেন। টেবিলের ওপর চিঠিপত্র, খাতা-বইয়ের স্তূপ। কিশোর মানিককে দেখে কবিগুরু বেগুনী রঙের খাতাটা খুঁজতে লাগলেন। খানিক বাদে বইয়ের স্তূপের নিচে পড়ে থাকা খাতাটা দিলেন মা সুপ্রভা রায়ের নিকট। কবি খাতাটি দিয়ে বললেন, এখানে লেখা কবিতা মানিক আরেকটু বড় হলে বুঝতে পারবে। বিশ্বকবির ঘর থেকে বের হয়ে উত্তরায়ণের সামনের আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে কিশোর মানিক আবৃতি করল সেই আটলাইনের কবিতা। বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়েছে সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুপা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু। সম্ভবত সত্যজিৎ রায় কিশোর বয়সেই বিশ্বকবির সেই আটটি লাইন মনের গভীরে ধারণ করেছিলেন। কারণ চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি আন্তর্জাতিক ফর্ম ব্যবহার করলেও বিষয়বস্তুতে তিনি ছিলেন পুরোপুরি দেশজ। সমমনা চলচ্চিত্রে আগ্রহী কিছু যুবক নিয়ে ১৯৪৭ সালের ৫ অক্টোবর যাত্রা শুরু হয় ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির। পঁচিশজন সদস্য নিয়ে সোসাইটিটির পত্তন হয়। সত্যজিৎ ও বংশী চন্দ্রগুপ্ত ছাড়া সোসাইটির উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হচ্ছেন, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, পূর্ণেন্দু নারায়ণ, মনোজেন্দু মজুমদার। সত্যজিৎ লিখেছেন, ‘সাধারণত আমাদের বাড়ির বৈঠকখানায় বসে আমরা ১৬ মিলিমিটারের ফিল্ম দেখতাম এবং যেসব ফিল্ম দেখতাম তার নানান দিক নিয়ে আলোচনা করতাম নিজেদের মধ্যে। আমরা প্রথম দেখেছিলাম আইজেনস্টাইনের ক্ল্যাসিক ছবি ব্যাটেলশিপ পোটেমকিন’।
×